পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ‘শ্যামল নির্মল ঐতিহ্যে-মানিকগঞ্জ’

ছবি: স্টার

প্লাস্টিক বর্জ্যের কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় নদীবিধৌত মানিকগঞ্জ জেলার পরিবেশ আজ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার ফলে নালা, নর্দমা, স্যুয়ারেজ লাইনে সেগুলো আটকে থাকছে, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। জলজ প্রাণি, খাদ্য শৃঙ্খল ও মানব জগতের জন্য এটি বিশাল সমস্যা বলে মনে করছেন পরিবেশ, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা।

পরিবেশের এমন বাস্তবতায়, প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ দুর্যোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এবং পুরো জেলাকে সবুজায়ন করতে পাঁচ লাখ খেজুর গাছের চারা রোপণের লক্ষ্যে 'শ্যামল নির্মল ঐতিহ্যে-মানিকগঞ্জ' নামের একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া অন্যান্য প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের কার্যক্রমও এই উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

ছবি: স্টার

এই উদ্যোগ সম্পর্কে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার বলেন, 'খাল, নালা, পুকুর, নদী হয়ে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হলো সমুদ্র। এই প্লাস্টিক মাটির উর্বরতা নষ্ট করে বাস্তুসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পানি হচ্ছে দূষিত এবং আবহাওয়া হয়ে যাচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত। জনস্বাস্থ্যকে ফেলে দিচ্ছে হুমকিতে। ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, ক্যান্সারসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। নদীতে থাকা প্লাস্টিক পণ্যে সূর্যরশ্মি বিকিরণের ফলে মাইক্রোপ্লাস্টিক উৎপন্ন হয়ে মাছের শরীরে প্রবেশ করছে। ফলে জলজ প্রাণি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে খাদ্য শৃঙ্খলের মাধ্যমে মানব শরীরের ক্ষতিসাধন করছে।'

ছবি: স্টার

এসব সমস্যার সমাধানেই গ্রহণ করা হয়েছে 'শ্যামল নির্মল ঐতিহ্যে-মানিকগঞ্জ' নামের উদ্যোগটি। 'ক্লিন-মানিকগঞ্জ, গ্রিন-মানিকগঞ্জ' করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সমগ্র জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্লাস্টিক বোতলগুলোকে সংগ্রহ করে তা রিসাইকেলের মাধ্যমে নতুন নতু্ন পণ্যে রূপান্তরের জন্য জেলার সিংগাইরের পানিশাইল এলাকার 'মুমানু পলিষ্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড' নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্লাস্টিক বোতল থেকে আঁশ, সুতা, দড়ি, সোফা ও কুশনের ফোম তৈরী করে তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'প্লাস্টিক সংগ্রহের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ ও স্থানীয়ভাবে অন্যান্য উৎস হতে প্রাপ্ত অনুদান খেজুর গাছের চারা রোপণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই লাখ খেজুর গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। আরও তিন লাখ চারা রোপণের কাজও চলমান রয়েছে। খেজুর গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে সবুজায়নের পাশাপাশি খেজুরের গুড় বিশেষ করে মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড় তৈরি ও বাজারজাত করে হাজারী গুড়কে সমগ্র বাংলাদেশ তথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে তৈরি করা হবে 'হাজারি পল্লী'।'

ছবি: স্টার

মুমানু পলিস্টার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) মো. আরিফুজ্জামন বলেন, 'আমাদের কারখানাটি ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতলগুলোকে সংগ্রহ করে তা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রিসাইকেলের মাধ্যমে আঁশ, সুতা, দড়ি, সোফা ও কুশনের ফোম তৈরী করি এবং তা বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করি।'

ছবি: স্টার

তিনি আরও বলেন, 'সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সাথে আমাদের কারখানা কর্তৃপক্ষের একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্লাস্টিক বোতল সংগ্রহ করতে আমরা জেলা প্রশাসনকে দেড়শতাধিক ডাস্টবিন দিয়েছি। সেগুলো জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কার্যালয়ের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ এবং জনবহুল স্থানে রাখা হয়েছে। এসব ডাস্টবিন থেকে সংগৃহীত প্লাস্টিক বোতলগুলো রাখার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে একটি সংগ্রহশালাও স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে আমরা আমাদের গাড়িতে করে প্লাস্টিক বোতলগুলোকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসি এবং এর থেকে নানা ধরণের পণ্য উৎপাদন করি।' 

ছবি: স্টার

শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশলী এইচএম কামাল হোসেন রেমন বলেন, 'পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণ ও দূষণরোধে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেল করার এবং গাছের চারা রোপণের মাধ্যমে যে সমন্বিত উদ্যোগ মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন গ্রহণ করেছে তা প্রশংসনীয়। আমি মনে করি এটি দেশের অন্যান্য এলাকার জন্য একটি উদাহরণ সৃষ্টি করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

8h ago