অ্যাপল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা, কীভাবে ও কতটুকু খাবেন

অ্যাপল সিডার ভিনেগার
ছবি: সংগৃহীত

অ্যাপল সিডার ভিনেগার বর্তমানে খুবই পরিচিত একটা শব্দ। যারা ওজন কমাতে চান তারা সাধারণত অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেয়ে থাকেন। কিন্তু এটি আসলে কী, কীভাবে ও কতটুকু খেতে হবে, এর কী উপকারিতা বা কোনো সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কি না সে বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই অনেকেরই।

ল্যাবএইড আইকনিকের সিনিয়র পুষ্টিবিদ ফাহমিদা হাশেমের কাছ থেকে জেনে নিন অ্যাপল সিডার ভিনেগারের বিস্তারিত।

অ্যাপল সিডার ভিনেগার কী

অ্যাপল সিডার ভিনেগার ফার্মেন্টেড আপেলের জুস থেকে তৈরি তরল। আপেলে থাকা প্রাকৃতিক সুগার ফার্মেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহলে পরিণত হয় এবং এই অ্যালকোহল থেকে অ্যাসিটিক এসিড তৈরি হয়। অ্যাসিটিক অ্যাসিডের কারণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার গন্ধযুক্ত ও ঝাঁঝালো স্বাদযুক্ত হয়।

এটি বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যায়। আমরা সাধারণত পানির সঙ্গে মিশিয়ে যেটি খাই সেটা মাদার গ্রুপের হয়ে থাকে। এটির মধ্যে প্রোটিন, এনজাইম ও কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকে।

অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার উপকারিতা

ওজন কমানো

এখন প্রায় সবাই জানেন অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে ওজন কমে। তবে সেজন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে হবে। সুষম খাবার, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি বিষয় মেনে চলার পাশাপাশি অ্যাপল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করলে এটি বিএমআর (বডি মেটাবলিক রেট) বাড়িয়ে ওজন কমাতে ভূমিকা রাখবে।

তবে এগুলো না মেনে চলে শুধু অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমানো কখনোই সম্ভব নয়। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিএমআরের মাত্রা বাড়াতে পারলে ওজন দ্রুত কমে। আর এই বিএমআর বাড়াতে লেবু পানি, গ্রিন টি, ডিটক্স ওয়াটারের মতো অ্যাপল সিডার ভিনেগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সুগার নিয়ন্ত্রণ

অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরের ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ানোর মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইনসুলিনের কারণে গ্লুকোজ দেহের কোষে প্রবেশ করে এবং কোষে প্রবেশ করে বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বেশি হলে গ্লুকোজ রক্তে মিশ্রিত অবস্থায় না থেকে বিপাকীয় কাজে ব্যবহার হয়ে যাবে।

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে

অ্যাপল সিডার ভিনেগার রক্তের কোলেস্টেরল এবং উচ্চরক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। হাই কোলেস্টেরল বা হাই ব্লাডপ্রেশার থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।

হজমে সাহায্য করে

যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা খাবার খাওয়ার আগে বা পরে কুসুম গরম পানিতে এক চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে উপকার পাবেন। খাবার হজমের জন্য যে এনজাইম বা এসিড প্রয়োজন হয় এটি সেসব এনজাইম এবং এসিডের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে খাবার দ্রুত ও ভালোভাবে হজম হয়।

সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে

ফার্মেন্টেড প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়ার কারণে এটির অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য। এ কারণে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের পরিমাণ কমায় এটি।

কারা খাবেন না

  • গলা দিয়ে টক পানি আসা, গলা জ্বলা এ ধরনের সমস্যা থাকলে অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাওয়া উচিত না।
  • যাদের শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকে বা মাঝে মাঝে কমে যায় অর্থাৎ হাইপোক্যালেমিয়া আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না। কারণ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার পটাশিয়ামের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
  • ডায়োবেটিসের রোগী যারা দুই বেলা ইনসুলিন নেন আবার অ্যাপল সিডার ভিনেগার খান, তাদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া অর্থাৎ সুগার লেভেল একদম কমে যেতে পারে। তাই এই রোগীরা এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আর যারা ইনসুলিন না নিয়ে ওষুধ খান এবং সুগার লেভেল সবসময় নিয়ন্ত্রণে থাকে তারা দিনে সর্ব্বোচ্চ একবার খেতে পারবেন। তবে সুগার লেভেল কমে যাওয়ার প্রবণতা থাকলে খাওয়া ঠিক নয়।
  • যাদের অ্যাসিটিক পাথর তৈরি হয় কিডনিতে তারা অ্যাপল সাইডার ভিনেগার খাবেন না।
  • যাদের অনেক অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা এটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।
  • যাদের ডেন্টাল সমস্যা যেমন এনামেল ক্ষয়ে যাওয়া, গর্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা আছে তারাও এটি ব্যবহার করবেন না।
  • যাদের অস্টিওপোরেসিস আছে তাদেরকে এটি খেতে নিষেধ করা হয়। কারণ অ্যাপল সিডার ভিনেগার বোন মিনারেল ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন কে শোষণে বাধা দেয়। ফলে হাড়ের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

কতটুকু ও কীভাবে খাওয়া উচিত

ফাহমিদা হাশেম, সিনিয়র পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড আইকনিক। ছবি: সংগৃহীত
  • একজন ব্যক্তি অ্যাপল সিডার ভিনেগার কীভাবে খাবেন সেটা নির্ভর করে তিনি কোন উদ্দেশ্যে খাচ্ছেন তার ওপর। যেমন ওজন কমানোর জন্য ব্যবহার করলে ঘুম থেকে উঠে সকালে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ইসবগুল বা চিয়াসিডের সঙ্গে মিশিয়ে এটি খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
  • অনেকেই অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের সঙ্গে লেবু যোগ করেন, যা একদমই উচিত নয়। লেবুতে সাইট্রিক এসিড এবং অ্যাপেল সিডার ভিনিগারে অ্যাসিটিক অ্যাসিড আছে। দুই ধরনের এসিডযুক্ত খাবার একসঙ্গে খাওয়া ঠিক নয়।
  • যারা ডায়াবেটিস রোগী, ওষুধ খাচ্ছেন এবং সুগার লেভেল আরেকটু নিয়ন্ত্রণে আনতে চান তারা খাওয়ার আগে বা খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে এটি খেতে পারেন।
  • একজন ব্যাক্তি সারাদিনে সর্বোচ্চ দুই টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেতে পারবেন। প্রথমে এক টেবিল চামচ দিয়ে শুরু করে দেখবেন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না। পরে ধীরে ধীরে দুই টেবিল চামচ খাবেন। তবে সারা দিনে এক টেবিল চামচ পরিমাণ খাওয়াই যথেষ্ট। আর যাদের খেতে অসুবিধা হয় তারা আরও কম পরিমাণে এক চা চামচ করে খেতে পারেন।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা অ্যাপল সিডার ভিনেগার পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। অন্তত ২০০ মিলিলিটার পানিতে ১ টেবিল চামচ নিতে হবে। শুধু পানিতে না নিয়ে একটু ইসবগুল,চিয়াসিড বা তোকমার সঙ্গে নিলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।

     

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh enters 5G era with limited rollout

Bangladesh has finally entered the 5G era, as the country’s top two mobile operators yesterday announced the limited launch of the technology, aiming to provide ultra-fast internet, low latency, improved connectivity, and support for smart services and digital innovation..Unlike previous g

16m ago