কাউন্সিলের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সমাধান করবে আওয়ামী লীগ

অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে এখন পর্যন্ত বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
ছবি: সংগৃহীত

সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা নিয়ে জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে।

দলের নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার পর থেকেই এই কোন্দল শুরু হয়। অভ্যন্তরীণ এই কোন্দল নিরসনে এখন পর্যন্ত বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ৩৯টি জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত, ৬০ জন গুলিবিদ্ধ ও ৪৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে নেতাদের অবিলম্বে জেলা, উপজেলা ও সিটি ইউনিটজুড়ে কাউন্সিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি যাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাদের নিয়েও কাউন্সিল করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

কাউন্সিল হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, এমন এলাকাগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি।

এসবের উদ্দেশ্য হলো—দলকে তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠন করা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

কেন্দ্রীয় নেতাদের চলতি মাসের শেষের দিকে সমস্যাগ্রস্ত জেলাগুলো ভ্রমণ করে বিরোধের সমাধান ও মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ইউনিটগুলোতে নতুন কমিটি গঠনের তদারকি করতে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভায় আটটি বিভাগের দায়িত্বে থাকা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের এসব সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট ও সহযোগী সংগঠনের জন্য কাউন্সিল করার নির্দেশ দেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের হয় ঢাকায় ডাকা হবে বা কেন্দ্রীয় নেতারা সমস্যা সমাধানের জন্য সেসব জায়গায় যাবেন।

সূত্র আরও জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতারা এই মাসের শেষ থেকে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-প্রবণ জেলাগুলোতে সফর শুরু করবেন এবং আগামী মাসের মধ্যে মেয়াদ শেষ হওয়া ইউনিটগুলোতে নতুন কমিটি গঠনের কাজ শেষ করবেন।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, 'দলকে তৃণমূল পর্যায় থেকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। জাতীয় নির্বাচনের কারণে এটি স্থগিত ছিল। এখন তা আবার শুরু করা হয়েছে।'

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের জেলা পর্যায়ে ৭৮টি সাংগঠনিক ও উপজেলা পর্যায়ে ৪৯৫টি ইউনিট। সময়মতো কাউন্সিল না হওয়ায় ৩০টিরও বেশি জেলা ইউনিটের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, যেখানে ২৭টি জেলা ও শহর পর্যায়ের ইউনিটে অভ্যন্তরীণ কোন্দল অব্যাহত রয়েছে। জেলা-পর্যায়ের ১৮টি ইউনিটে কাউন্সিল হওয়ার পরেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়নি।

যেমন: বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে।

আওয়ামী লীগের ঢাকা ইউনিটের বর্তমান পরিস্থিতি

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রধান ইউনিটগুলোর বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা বিশৃঙ্খল। বারবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ৫০টি থানা-পর্যায়ের ইউনিট ও সিটি ইউনিটের আওতাধীন ১৪০টি ওয়ার্ডে এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, যেখানে এর জন্য ২০২২ সালের জুন থেকে নভেম্বরের মধ্যে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এ ছাড়াও, উভয় সিটি ইউনিটের মেয়াদ ২০২২ সালের নভেম্বরে শেষ হয়। তবে এখনো নতুন কাউন্সিল হয়নি।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল (উত্তর ও দক্ষিণ) ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় এক বছর পরে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

দলীয় সনদ অনুযায়ী, এ ধরনের কমিটির মেয়াদ তিন বছর।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি ইউনিটের অধীনে ২৪টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এই ইউনিটগুলোর কাউন্সিল ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

তবে কোনো ওয়ার্ড বা থানা ইউনিটে কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

ঢাকা মহানগর উত্তর ইউনিটের অবস্থাও দক্ষিণের মতোই। ২০২২ সালে মোট ৬৪টি ওয়ার্ড এবং ২৬টি থানা ইউনিটের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যেই খসড়া কমিটিগুলো দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছি এবং দলীয় সভাপতির অনুমোদনের পর তা ঘোষণা করা হবে।'

দলীয় সনদ অনুযায়ী, আগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

Comments