জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম পেয়েছে ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয়টির চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনাকালে অন্তত ২৫টি অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে ইউজিসি।
jagannath-university-logo-1.jpg

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি আর্থিক অনিয়মের তথ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়টির চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনাকালে অন্তত ২৫টি অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ওহিদুজ্জামানের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার বেতন দ্বিতীয় গ্রেডে দেওয়া হচ্ছে, যা তার প্রাপ্যের চেয়ে বেশি। জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র তৃতীয় গ্রেডে সর্বোচ্চ বেতন দিতে পারে।

ইউজিসি প্রতিবেদনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়মের ২৫টি ক্ষেত্র তালিকাভুক্ত করে সেগুলো ঠিক করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে সুপারিশ করেছে।

সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে খরচ করা অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ফেরত দেওয়া, ভবিষ্যতে ইউজিসির নিয়ম মেনে চলা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

তদন্তকারীরা দেখতে পেয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২টি মাইক্রোবাস ও ১১টি বাস ক্রয়ে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেনি। অননুমোদিত এসব যানবাহন কেনা হয়েছে ৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়।

বিশ্ববিদ্যালয়টি চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভার ও হেলপার নিয়োগের নিয়মও লঙ্ঘন করেছে। সরকার বা ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী এমন কোনো  বিধান বিদ্যমান নেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক বছরে চালক ও হেলপারদের সাত লাখ ৯২ হাজার টাকা দিয়েছে, যা নিয়ম বিরুদ্ধ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি বইয়ের জন্য খুব বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রতি বছর বই ভাতা হিসেবে ৩ হাজার টাকা দেয়। যদিও এই খাতে এক হাজার ২০০ টাকা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এতে নয় লাখ টাকার বেশি অপচয় হয়েছে।

প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে যে বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে টিওইএফএল, আইইএলটিএস এবং জিআরইর মতো পরীক্ষার ফি প্রদান করেছে। এই কাজ থেকে ভবিষ্যতে বিরত থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইউজিসি দেখেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশিক্ষণের সময় কর্মীদের দৈনিক ভাতা ৬০০ টাকা দিয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। নিয়মে বলা হয়েছে, দৈনিক মজুরি কেবলমাত্র সেই কর্মচারীদের দেওয়া যাবে যারা প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকার বাইরে যাবেন।

এ ছাড়া, আরও পাওয়া গেছে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একই ব্যক্তিকে একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অতিথি ও অংশগ্রহণকারী উভয় হিসেবে দেখিয়ে দুটি সম্মানী দিয়েছে। ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী, সম্মানী শুধুমাত্র তাদেরকে দেওয়া যেতে পারে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনভুক্ত নন।

ইউজিসি আরও দেখেছে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম লঙ্ঘন করে বাজেটের এক খাতের অর্থ অন্য খাতে স্থানান্তর করছে।

প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অর্গানোগ্রাম তৈরি এবং আর্থিক সমস্যা সমাধান করতে একটি বাজেট সেল স্থাপন করা উচিত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বাজেট সেল না থাকায় বাজেট সম্পর্কিত তথ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি এবং প্রয়োজনীয় তথ্য কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করা যায়নি।

প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম জানান, এসব অভিযোগ ও অনিয়ম তার দায়িত্ব শুরুর আগের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

তিনি বলেন, 'আমিও উপাচার্য হিসেবে যোগদানের সময় এমন অনেক কিছু পেয়েছি যেগুলো সঠিক বলে মনে হয়নি।'

তিনি দাবি করেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবর্তন আনতে কাজ শুরু করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা প্রক্টরিয়াল বডিতে পরিবর্তন আনা এবং নতুন রেজিস্ট্রার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা।

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, 'এভাবেই প্রশাসন থেকে আমরা পরিবর্তন আনতে কাজ করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago