প্রবল চাপে দারুণ সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে জিতিয়ে নায়ক শান্ত

বুধবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
Najmul Hossain Shanto
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দল ছিল প্রবল চাপে, শুরুতে নেমে তিনি নিজেও ছিলেন কিছুটা আড়ষ্ট। নাজমুল হোসেন শান্ত সময় নিয়ে থিতু হয়ে বুঝে নেন দায়িত্বের ভার। এরপর ডানা মেলতে থাকেন ক্রমশ, পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নিয়ে ভরসার ছবি দেখান তিনি। দুই অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমকে জুটিতে সঙ্গী পেয়ে দারুণ সেঞ্চুরিতে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

মাহেশ থিকসেনার বল কাভার দিয়ে উড়িয়ে কাজ সারেন শান্তই। ইনিংসের শুরুতে ঘিরে ধরা শঙ্কা পার করে বাংলাদেশের জয় অনায়াসে।  বুধবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিং বেছে লঙ্কানদের ২৫৫ রানের পুঁজি ৩২ বল আগেই পেরিয়ে যায় স্বাগতিক দল। সিরিজেও এগিয়ে যায় শুরুতে।  রান তাড়ায় শুরুতে চাপে পড়া দলকে টেনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন শান্ত। তিনে নেমে ১২৯ বলে অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি ব্যাটার। তাকে ১৬৫ রানের জুটিতে সঙ্গ দিয়ে মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৮৪ বলে ৭৩ রানে।

এদিন প্রথম ওয়ানডে দেখতে খুব একটা আগ্রহ ছিল না দর্শকদের। চট্টগ্রামের গ্যালারিতে ম্যাচের শুরুর দিকে ছিলেন হাতেগোনা দর্শক। বাংলাদেশের জয়ের সময়টায় সেই সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে, তবে বেশিরভাগ আসনই ছিলো ফাঁকা।  ওই অল্প দর্শকরাই শান্তর নামে আওয়াজ তুলতে পেরেছেন চড়া। কারণ বাংলাদেশ অধিনায়ক খেলেছেন তেমনই। দায়িত্বের ভার নিয়ে চাপ সামলে দেখিয়েছেন পেশাদারিত্ব। এমন একটি ইনিংস মাঠে বসে দেখতে পেরে নিজেদের ভাগ্যবানও ভাবতে পারে গুটিকয়েক দর্শক।  

শান্তর বেশিরভাগ শটে ছিলো অথরিটি, দাপট। লাহিরু কুমারাকে কাভার দিয়ে বুলেট গতির বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি স্পর্শ করে উঁচিয়ে ধরেন দুহাত। উদযাপনও ছিলো কিছুটা আগ্রাসী। ততক্ষণে ম্যাচ বাংলাদেশের পকেটে। তাকে স্থায়ী অধিনায়ক করার যারা সংশয়ে ভুগছিলেন, তাদের প্রতি হয়ত তার বার্তাও এমন ইনিংস।

রাতের আলোয় বল কিছুটা স্যুয়িং করতে পারে। লক্ষ্য ২৫৬ হলেও এই শঙ্কা ছিলো। সেটা শুরুর কয়েক ওভার হলোও। তাতেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। লিটন দাস কাবু ইনিংসের প্রথম বলেই। দিলশান মাধুশঙ্কার অফ স্টাম্পের বাইরের বল টেনে বোল্ড হয়ে যান বাংলাদেশের ওপেনার।

তার সঙ্গী সৌম্য সরকারকেও ছাঁটেন  মাধুশঙ্কা। সৌম্য স্লোয়ার বল পড়তে না পেরে পুল করে দেন সহজ ক্যাচ। তৃতীয় উইকেট নেন মাধুশান। শুরু থেকেই স্যুইংয়ে ব্যাটারদের ভোগচ্ছিলেন তিনি। তবে তাওহিদ হৃদয়কে বোল্ড করা ডেলিভারিতে তেমন স্যুয়িং ছিলো না। হয়ত স্যুয়িং হবে ভেবেই লাইন মিস করে ফেলেন ডানহাতি ব্যাটার। তৃতীয় টি-টোয়েন্টির মতন এদিনও তার স্টাম্প উড়ে যায়।

২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া দলকে এরপর থেকেই উদ্ধারে নামেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ পাঁচে নেমে শুরু থেকেই খেলতে থাকেন ইতিবাচক মেজাজে। প্রতি আক্রমণে উড়িয়ে দেন চাপ।

শুরুতে আড়ষ্ট থাকা শান্তও সময় নিয়ে হয়ে যান থিতু। দুজনের জুটি জমে উঠে। রানরেটের চাপও নেমে যায় তাতে। ৬২ বলে ৬৯ রানের জুটির পর বাংলাদেশ ইনিংসে আঘাত হানেন লাহিরু কুমারা। গতিময় পেসারের বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় হয়ে যায় ডানহাতি ব্যাটারে। মিড উইকেটে দুর্দান্ত ক্যাচ হাতে জমান মাধুশঙ্কা।

শান্ত কোন ভুল করেননি। দলকে টেনে নিতে থাকেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পঞ্চম উইকেটে তিনি পেয়ে যান মুশফিককে। দুজনে মিলে লঙ্কানদের পুঁজি বানিয়ে নেন মামুলি।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিলো শ্রীলঙ্কা। আভিশকা ফার্নান্দো-পাথুম নিশানকা মিলে অনায়াসে রান বের করতে থাকেন। এই জুটিকে বিপদজনক দেখাচ্ছিলো। দলের ভীষণ প্রয়োজনে টানা তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব।

৫ চার, ১ ছক্কায় বড় কিছু আভার দেওয়া আভিশকা উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। খানিক পর নিশানকা টাইমিংয়ে গড়বড় করে ক্যাচ দেন সৌম্যের হাতে। টিকতে পারেননি সাদেরা সামারাবিক্রমা। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনিও।

বিনা উইকেটে ৭১ থেকে ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা। এরপর চারিথা আসালাঙ্কাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৪৪ আসার পর মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান আসালাঙ্কা। ৩৭ বলে ১৮ রান করে থিতু হয়ে ফেরেন তিনি।

ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি লঙ্কানরা পায় এই পরই। কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যান জেনিত লিয়ানগে। অধিনায়ক কুশল টাইমিং পাচ্ছিলেন না। তবে উইকেট ছুঁড়ে না দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। কুশলের জড়তার ঘাটতি পুষিয়ে দেন লিয়ানগে। অনায়াসে রান বের করতে থাকেন তিনি।

দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন। বেশ আলগা বল দিয়ে খরুচে হলেও গুরুত্বপূর্ণ ৩ উইকেট পেয়ে যান ডানহাতি পেসার। ৭৫ বল ৫৯ রান করে ফেরেন লঙ্কান অধিনায়ক। তাসকিন ওই স্পেলে ফেরান ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকেও। যে বলে উইকেট পেয়েছেন তাতে তিনি ভাগ্যবানও ভাবতে পারেন নিজেকে। অফ স্টাম্পের বাইরে লাফানো বল পুল করবেন নাকি আপার কাট এই দ্বিধায় পড়েন হাসারাঙ্গা। শেষ পর্যন্ত আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে দেন ক্যাচ। মাহেশ থিকসেনাকে কট বিহাইন্ড বানিয়ে পরে তৃতীয় উইকেট পান তাসকিন।

লিয়ানগে পরে টেল এন্ডারদের নিয়ে টেনে নেন দলকে। মাধুশানকে নিয়ে যোগ করেন ১৯ রান। আড়াইশ ছাড়িয়ে থামে শ্রীলঙ্কা। মার্চের এই সময়টাতেও সাগরিকার মাঠে শিশির পড়ে। শ্রীলঙ্কার পুঁজি ইনিংস বিরতিতেই মনে হচ্ছিল অপর্যাপ্ত। এই মাঠে আড়াইশোর বেশি রান তাড়া করে এর আগে ১০ ম্যাচের আটবারই জিততে পারেনি দলগুলো। এবার আড়াইশ তেমন চ্যালেঞ্জিং না হওয়ার কারণও শিশির।  

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

7h ago