জেলিফিশের উপদ্রব কমেছে, জালে উঠছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ায় আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফিরেছে কর্মব্যস্ততা। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রায় এক মাস ধরে চলা জেলিফিশের উপদ্রব কমেছে। এখন জেলেরা সাগরে জাল ফেললেই মিলছে রূপালী ইলিশ।

ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেপল্লী ও কলাপাড়া উপজেলার দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর ও মহিপুরে ফিরেছে কর্মব্যস্ততা। গত এক সপ্তাহে আলীপুর ও মহিপুরে অন্ততপক্ষে ২ হাজার মণ ইলিশ মাছ বেচা-কেনা হয়েছে।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগের মতে, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা ও ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা ঠিকমতো পালন করার সুফল পাচ্ছেন জেলেরা।

গত শনিবার সকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার আহমেদ কবিরের মালিকানাধীন এফবি আল্লাহর দয়া-১ নামের একটি মাছ ধরা ট্রলার ১৫০ মণ ইলিশ নিয়ে কলাপাড়ার আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে নোঙ্গর করে। ওই ট্রলারটিতে পর্যাপ্ত বরফ না থাকায় ২০ মণ ইলিশ মাছ পচে যায়। বাকি ১৩০ মণ ইলিশ কুয়াকাটার মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম খানের মালিকানাধীন খান ফিশে নিলামের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়।

ট্রলারটির সূর্য মাঝি জানান, বৃহস্পতিবার কুয়াকাটার অদূরে সাগরে জাল ফেলে তারা ওই বিপুল পরিমাণ ইলিশ পান। ট্রলারে থাকা বরফে ১৭ হাজার পিস ইলিশ সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। ওজন ছিল ১৩০ মণ।

গত ৩১ মার্চ আলীপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী ইউসুফ হাওলাদারের মালিকানাধীন এফবি তামান্না ও এফবি রাইসা নামের দুটি মাছ ধরা ট্রলার ১৪০ মণ ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফেরে। এফবি তামান্না ট্রলারের ৭৮ মণ ইলিশ ২৫ লাখ টাকায় এবং এফবি রাইসা ট্রলারের ৬০ মণ ইলিশ ১৭ লাখ টাকায় বিক্রি হয়।

এফবি তামান্না ট্রলারের মাঝি ইউনুস মিয়া বলেন, সাগরে জেলিফিশের উপদ্রবের কারণে প্রায় এক মাস আমরা মাছ ধরতে পারিনি। তবে এখন সাগরে জাল ফেললেই প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। ঈদের আগে মাছ ধরা পড়ায় আমরা অনেক খুশি।

এফবি রাইসা ট্রলারের মাঝি নেছার উদ্দিন বলেন, তুলনামূলক সাগরের অগভীর এলাকায় প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। যেসব জেলেরা গভীর সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছে, তারা মাছ পায়নি। এছাড়াও গত মঙ্গল ও বুধবার আলীপুরের ফাইভ স্টার মৎস্য আড়তের দুটি ট্রলার ২০০ মণ মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরে আসে।

উপকূলের বিভিন্ন মৎস্যপল্লীতে খোঁজ দিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহখানেক ধরে সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরা পড়ছে। কলাপাড়া উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার জেলে পরিবারে ঈদ উদযাপনের দুশ্চিন্তা কেটেছে বলে জানান তারা।

কলাপাড়া উপজেলার ধোলাই মার্কেট এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সমুদ্রে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির প্রচুর সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের আগ মুহূর্তে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়ায় জেলে পল্লীতে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। জেলে, মাছ ব্যবসায়ীসহ সবাই খুশি।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, সমুদ্রে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন হওয়ায় আগের চেয়ে সব ধরনের মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধ মান্য করার সুফল পাচ্ছেন উপকূলের জেলেরা। বর্তমানে সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। আশা করছি, এবারের বর্ষা মৌসুমে আরও বেশি ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়বে।

Comments

The Daily Star  | English
sirens sound in israel after iran missile attack

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Trump to decide within two weeks on possible military involvement

14h ago