যারা ব্যাংক লুটপাট করেছে, একীভূত তাদের জন্যে আরেকটা সুযোগ: আমীর খসরু

বাজেট ২০২৫-২৬ প্রতিক্রিয়া
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী | স্টার ফাইল ফটো

উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা 'ভোটচুরির ভাঁওতাবাজি' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আজ বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'ওরা উপজেলা নির্বাচন দিয়েছে। যেদেশে ভোট নাই, সেই দেশে ভোটে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নাই। যেখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নাই, যেখানে কোনো পার্টিসিপেশন নাই, যেখানে আবার কীসের ভোট? সুতরাং এই যে উপজেলা নির্বাচন, এটা আরেকটা দেশের মানুষকে একটা ধাপ্পাবাজির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা ভোটের নামে ভাঁওতাবাজি। ভোট বলে কিছু নাই এই এদেশে। একটা ভোটচুরি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে আজকে তারা (সরকার) জিম্মি করে রেখেছে।'

সরকারের এই ধরনের অপকর্মের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর 'ঐক্য অটুট' থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করে আমীর খসরু বলেন, 'আমাদের সুখবর হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আজকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি, আমাদের ঐক্য অটুট আছে, বিএনপির ঐক্য অটুট আছে।'

এই ঐক্য ভাঙার চেষ্টা কোনো কিছু বাকি নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'টাকা-পয়সা থেকে ভয়ভীতি থেকে, জেল-জুলুম থেকে, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে সব চেষ্টা করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ধানখেতে ঘুমিয়েছে, বেড়িবাঁধে ঘুমিয়েছে, কিন্তু নেতাকর্মী কম্প্রোমাইজ করেনি, বিরোধী দলের নেতারা কেউ কম্প্রোমাইজ করেনি। ৩১ দফা ঐক্যবদ্ধভাবে দিয়েছে… এটা চলমান আন্দোলনের দফা, অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সাম্য-মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এক হয়েছি। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আমাদের এই আন্দোলন চলমান আছে।'

৭ জানুয়ারি ভোটে ৯৫ শতাংশ ভোটার না যাওয়া থেকে চলমান আন্দোলনের বিরোধী দলের 'রাজনৈতিক সফলতা' উল্লেখ করে তিনি বলেন, '৯৫ শতাংশ মানুষ ওই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এবার সেই চিন্তা থেকে সরকার ভোটারদের আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে। এবার তারা চিন্তা করেছে যে, মানুষ নৌকাকে ভয় পায়… নৌকার কথা শুনলে বোধহয় ভোটকেন্দ্রে যাবে না। সেজন্য নির্বাচনে তারা এবার দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে দিয়েছে।'

'অথচ তারাই স্থানীয় সরকার আইন করেছে নৌকা দিয়ে অর্থাৎ দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার জন্য। আইনটা কিন্তু বাতিল করেনি… আইন রেখে তারা এখন নৌকা প্রতীক নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে না। কারণ ওরা দেখছে, বাংলাদেশের জনগণ, নৌকা যেখানে আছে তারা সেখানে নাই… তারা নৌকা বয়কট করেছে। তাই এই উপজেলা নির্বাচন আরেকটি ভাঁওতাবাজির নির্বাচন। ভোটচুরি প্রকল্পই তাদের ক্ষমতার উৎস, এই ভোটচুরির প্রকল্প তাদের ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করেছে।'

ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিনটি 'প্রজাতন্ত্র দিবস' হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভায় প্রজাতন্ত্র দিবসের দাবি উপস্থাপন করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, 'যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের এদেশে বসবাস করা সম্ভব নয়। এই খুনিদের এই জুলুমবাজ, দখলদার সরকারকে বিতাড়িত না করতে পারলে এদেশ সাধারণ মানুষদের বসবাস কঠিন হয়ে পড়বে।'

'এই দেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম… এমন দৃশ্য এমন পরিবেশ দেখার জন্য নয়। গণতন্ত্র থাকবে না, সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না, সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি। এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। আপনারা জেগে উঠুন… দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান। এই গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইকে এগিয়ে নিন, এদেরকে পরাজিত করুন।'

ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, 'সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্যাংক মার্জার (একীভূত) করার। মার্জার তো কোনো সরকারের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এটা বাজারের সিদ্ধান্ত। এটা করতে শেয়ার হোল্ডারদের মতামত প্রয়োজন হয়। কিন্তু কী দেখা যাচ্ছে? শেয়ার হোল্ডারদের কোনো খবর নাই। তারা (সরকার) সিদ্ধান্ত দিচ্ছে মার্জার করতে হবে।'

'যারা ব্যাংক লুটপাট করে খেয়ে ফেলেছে, তাদের জন্যে এই মার্জার আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তাদেরকে রক্ষা করার জন্য…. যারা লুটপাট করে বাংলাদেশের সম্পদ নিয়ে গেছে, যারা ব্যাংকের আমানতের টাকা লুটপাট করেছে, তাদেরকে আরও সুবিধা দেওয়ার জন্য জোর করে এই একত্রীভূত করার প্রক্রিয়া সরকার নিয়েছে।'

শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির তানিয়া রব, মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, কে এম জাবির বক্তব্য রাখেন।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago