কাজে মনোযোগ ধরে রাখার যত কৌশল

কাজে মনোযোগ ধরে রাখার কৌশল
ছবি: সংগৃহীত

যেকোনো কাজে সফলতা অর্জন করতে চাইলে সেই কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়া চাই। তবে কোনোকিছুতে টানা মনোযোগ ধরে রাখা বেশ কঠিন কাজ।

বর্তমান যুগটাই এমন যে, কোনো কাজ করতে গিয়ে আপনি একটু অমনোযোগী হওয়া মানেই অন্য কেউ আপনার চেয়ে অনেক এগিয়ে যাবে। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এই মনোযোগ বাড়ানোর অনুশীলন শুরু করতে হবে আজ থেকেই। যাদের মনোযোগের বেহাল দশা তাদের মনোযোগকে শক্তিশালী করার জন্য বেশ কিছু উপায় রয়েছে। কার্যকরী কয়েকটি টিপস নিয়ে আজকের এই লেখা।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা মেডিটেশন

মনোযোগ বাড়ানোর জন্য আগে নিজেকে শান্ত ও স্থির রাখতে হবে। এজন্য শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম খুব উপকারী। সকালে মেরুদণ্ড সোজা করে বসে লম্বা করে নাকে শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবং মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার করুন। তারপর কিছু সময় চোখ বন্ধ করে ভাবুন আপনার এখন মনোযোগ আসবে। সকালে বা দিনের কোনো নিদিষ্ট সময় মেডিটেশনের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত।

শুরুটা করুন ধীরে ধীরে

বিশেষজ্ঞরা মনোযোগ বাড়ানোর জন্য শুরুতেই সহজ কিছু করার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপযোগী হচ্ছে `পোমোডোরো' মেথড। এই মেথডের মূল কথা হচ্ছে, ২৫ মিনিট এক নাগাড়ে কাজ করে ৫ মিনিটের বিরতি নেওয়া। এভাবে ২৫ মিনিট করে তিনবার কাজ করার পর ২০ মিনিট বিরতি নেওয়া।

ইলেকট্রনিক ডিভাইস কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখুন

মোবাইল ফোন, টেলিভিশনের মতো কিছু ডিভাইস কাজে মনোযোগ আনতে সবচেয়ে বেশি বাধা দেয়। জার্নাল অফ বিহেভিয়ারাল অ্যাডিকশনের সাম্প্রতিক একটি স্টাডিতে প্রকাশিত হয়েছে, আপনি যখন কোনো কাজ করেন, ওই মুহূর্তে কাজ করার পাশাপাশি যদি ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা ফোন ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ অনেকটাই কমে যায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করার আগে ব্যক্তিগত ফোনটি কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখাই শ্রেয়।

কাজের তালিকা করুন

যে কোনো কাজে মনোযোগ থাকলে সময় কম লাগে। এজন্য গুরুত্ব অনুযায়ী তালিকাবদ্ধ করে নিন আপনার কাজের বিষয়গুলো। কাজ জমিয়ে না রেখে একে একে সেরে ফেলুন। একসঙ্গে অনেক কাজ জমিয়ে রাখলে মস্তিষ্ক অস্থির হয়ে পড়ে। যে কারণে একটিতে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। কবে কী কাজ, সেই তালিকা বা চেকলিস্ট তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। গুগল ক্যালেন্ডার বা মোবাইলে 'টু ডু লিস্ট' না করে ডায়রিতে টুকে ফেলুন।

নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগান

কোনো কাজ যদি সঠিক সময়ে শুরু করতে চান আর সেখান থেকে সফলতার মুখ দেখতে চান তবে কাজে লাগান নিজে ইচ্ছাশক্তিকে। নিজেকে কথা দিন এই কাজটি শেষ করার আগে উঠছেন না আপনি। 'আমি পারি, আমাকে এই কাজটা নিখুঁতভাবে শেষ করতে হবে' এই বিষয়টা মনে গেঁথে নিন। তাই বলে সারাদিন দরজা বন্ধ করে কাজে ডুবে থাকবেন না, তাহলে কিন্তু ইচ্ছাশক্তি দৌড়ে পালাবে!

সব কাজেই মনোযোগ দিন

যেকোনো কাজ খুব মনোযোগ দিয়ে করুন। খাওয়ার সময় খাবারের রং, স্বাদ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করুন। মুভি দেখার সময় নায়ক হাত কীভাবে নাড়াচ্ছেন, কথা বলার সময় চোয়াল কীভাবে নাড়াচ্ছেন, সব খেয়াল করুন। ঠিক তেমনি কেউ কথা বলার সময়  কী বলছেন, কীভাবে কথা বলছেন তা মন দিয়ে শুনুন। শ্রবণ শক্তিকে সমৃদ্ধ করুন। মনোযোগ একটি চর্চার বিষয়। যত বেশি মনোযোগ দিয়ে আপনি আপনার প্রাত্যহিক কাজ করবেন তত বেশি মনোযোগের চর্চার মধ্যে থাকবেন।

মনোযোগ বাড়ানোর জন্য খেলতে পারেন গেম

হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য যেমন শারীরিক ব্যায়াম প্রয়োজন, তেমনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন মানসিক ব্যায়াম বা মস্তিষ্কের ব্যায়াম। গুগলে খুঁজলে আপনি অসংখ্য গেমস পাবেন যা তৈরিই হয়েছে আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্য নিয়ে। ব্রেইন ট্রেইনিং গেমগুলো আপনাকে দ্রুত ভাবতে, সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা আপনার স্মরণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটা করে খেলুন। তবে গেম খেলতে গিয়ে শরীরে যাতে জড়তা চলে না আসে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন।

খেয়াল রাখুন ঘুমে

মনোযোগ স্থির রাখার জন্য প্রয়োজন ঘুম। ঘুম কম হলে আমাদের মনোযোগে যেমন বাধা সৃষ্টি হয়, তেমনি অতিরিক্ত ঘুম ব্রেনকে স্থবির করে দেয়। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনন্দিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।

খাবারটাও গুরুত্বপূর্ণ

উদ্ভিজ্জ খাবার, সবুজ শাকসবজি ফলমূল গ্রহণে উৎসাহী হোন। রেডমিট, পরিশোধিত শর্করা, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খাদ্যতালিকা থেকে কমানোর চেষ্টা করুন। আমিষ বেছে নিন এমনভাবে, যাতে ক্যালরি ও খারাপ চর্বির পরিমাণ থাকে কম। খাবারে লবণের ব্যবহার করতে হবে সীমিত। পাতে বাড়তি লবণ বর্জনীয়।

ওমেগা–৩ যুক্ত খাবার যেমন বাদাম, সামুদ্রিক মাছ মনোযোগ বাড়ায়। কখনোই খালি পেটে কাজ করতে বসবেন না, এতে মনোযোগ ধরে রাখা বেশ কঠিন। কাজ শুরুর আগে হালকা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খেয়ে নিতে পারেন। তবে পেট ভরে যাবেন না, এতে মনোযোগের বদলে চোখ জুড়ে আসবে ঘুম।

রুটিনে রাখুন শরীরচর্চা

শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করলে আমাদের মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, একই রকম মেধাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও সারাদিন শুয়ে বসে কাটানো শিক্ষার্থীদের তুলনায় যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হয়। মস্তিষ্কে আরও বেশি যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus returns home completing 4-day Japan tour

A flight of Singapore Airlines, carrying the CA landed at Hazrat Shahjalal International Airport at 12:15am on Sunday

3h ago