সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও জনতার খেলাপি ঋণ প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা

স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক—সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও জনতায় মুনাফা অর্জনে মিশ্রভাব দেখা গেলেও ২০২৩ সালে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে।

গত বছর শেষে ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত খেলাপি ঋণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা।

প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক বিবরণীতে বলা হয়েছে, দুই বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংকের মোট খেলাপি ছিল ৩৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি।

সবশেষ তথ্যে দেখা গেছে, গত বছর শেষে ঋণ বিতরণে অনিয়মের কারণে জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ছিল। বিশেষ করে অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের খেলাপি সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ ছিল ব্যাংকটির জন্য।

২০২৩ সালে জনতার খেলাপি ঋণ আগের বছরের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেড়ে ২৩ হাজার ২১১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

গত বছর শেষে অগ্রণী ব্যাংক ছিল ঋণ খেলাপির দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বলছে, এক বছর আগের তুলনায় খেলাপি বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালীর খেলাপি বেড়েছে সাত দশমিক নয় শতাংশ। ২০২৩ সাল শেষে এই ব্যাংকের খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

রূপালীর খেলাপি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। এটি গত বছর শেষে হয়েছে নয় হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে তাদের বেশি প্রভিশন রাখতে হয়েছে। এটি শেষ পর্যন্ত তাদের মুনাফার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

একই সময়ে, ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ থেকে আয় বাড়তে থাকায় তা ইতিবাচক অবদান রেখেছে।

২০২৩ সালে সোনালী ব্যাংকের মুনাফা ৮৩ শতাংশ বেড়ে ৭৪৭ কোটি টাকা হয়েছে। রূপালীর মুনাফা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৬২ কোটি টাকা।

অগ্রণীর মুনাফা ২৭ শতাংশ কমে ১০৩ কোটি টাকা ও জনতার মুনাফা ৫০ শতাংশ কমে ৬২ কোটি টাকা হয়েছে।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খেলাপি ঋণ সরাসরি ব্যাংকের মুনাফায় প্রভাব ফেলে।'

তাই পরিচালন মুনাফা বাড়লেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমেছে।

তার মতে, ব্যাংকগুলো বুঝতে পেরেছে যে মুনাফা বাড়াতে হলে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, 'খেলাপি ঋণ কীভাবে কমানো যায় তা ব্যাংক কর্মকর্তারা জানেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক পথে হাঁটছে। আশা করছি, আগামী বছরগুলোয় খেলাপি ঋণ কম হবে।'

খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার জন্য মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম দেশটির সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি চলমান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন।

তিনি মনে করেন—অনেক রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের আয় কমেছে, পাশাপাশি আমদানিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। তা শেষ পর্যন্ত তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়েছে।

অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা শ্রেণিকৃত ঋণ বেড়েছে। অন্য দুটির কমেছে।

২০২৩ সাল শেষে সোনালীর শ্রেণিকৃত ঋণের হার ছিল ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ, রূপালীর ২১ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, অগ্রণীর ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও জনতা ব্যাংকের ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এক সময় সব ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণী সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আনলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত হারের তুলনায় বেশি দিতে না পারায় তারা এখন পিছিয়ে পড়েছে। তবে অন্য ব্যাংকগুলো তা করতে পারে।

কমপ্লায়েন্স থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কাজ করতে হবে, যাতে সব ব্যাংক একই নিয়ম মেনে চলে।

মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম আরও বলেন, 'অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মতো অগ্রণীর বড় কোনো আর্থিক কেলেঙ্কারি নেই। তাই ভালোভাবে চেষ্টা করলে এই ব্যাংকটির ঋণ আদায় সম্ভব।'

মুনাফা বাড়াতে বেশি আমানত আনা, ভালোভাবে ঋণ বিতরণ, ঋণ আদায়ে সচেষ্ট হওয়া ও সুদবিহীন অন্য আয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে উচ্চ সুদহার আরোপের অনুমতি দেওয়ায় গত বছর চার ব্যাংকের নিট সুদ আয় বেড়েছে। ২০২১ সালে সুদহার নয় শতাংশে বেঁধে দেওয়া হলেও পরে তা তুলে নেওয়া হয়।

ট্রেজারি বন্ড থেকেও ব্যাংকগুলো বেশি আয় করেছে। তবে বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ কম।

২০২৩ সালে তাদের সম্মিলিত নিট সুদ আয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে এক হাজার ১৮৯ কোটি টাকা হয়েছে। একই সময়ে নিট বিনিয়োগ আয় ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খেলাপি ঋণের বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠজনরা নিয়েছেন বলে তা আদায়ে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন।'

তার মতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ থেকে মুক্তি পাবে না। রাজনৈতিক কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে থাকলে আগামীতে খেলাপিও বাড়তেই থাকবে।

Comments

The Daily Star  | English
EU lists Bangladesh as safe country for asylum rules

EU lists Bangladesh among 7 'safe' countries, tightening asylum rules

The move, criticised by rights groups, is set to allow EU governments to process asylum applications filed from citizens of those countries more quickly

11h ago