ডিটক্স ওয়াটার কেন খাবেন, তৈরি করবেন কীভাবে

ডিটক্স ওয়াটার
ছবি: সংগৃহীত

ওজন কমানো এবং সারাদিনে বিভিন্ন কারণে দেহে তৈরি হওয়া টক্সিন উপাদান দূর করার জন্য জনপ্রিয় একটি পানীয় ডিটক্স ওয়াটার। এই ডিটক্স ওয়াটার দেহের পানির ঘাটতি পূরণে সক্ষম। প্রাকৃতিক গুণাগুণ সম্পন্ন হওয়ায় এর বেশকিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।

ডিটক্স ওয়াটার সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

ডিটক্স ওয়াটার কী

তাজা ফল, সবজি, ভেষজ উপাদান কেটে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখার পর যে তরল তৈরি হয় সেটি ডিটক্স ওয়াটার। ডিটক্স ওয়াটার বানানোর জন্য ফল বা সবজি রস না করে বরং দীর্ঘ সময় ভিজিয়ে রাখা হয়। ফলে সবজি ও ফলের গুণাগুণ পানিতে মিশতে শুরু করে। এ ছাড়াও শুধু ভেষজ উপাদান মিশ্রিত পানীয় যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, সেগুলোও এক প্রকার ডিটক্স ওয়াটার। যেমন লেবু পানি, জিরাপানি, মধু পানি, কিশমিশ ভেজানো পানি ইত্যাদি।

কেন খাবেন

  • শরীর সুস্থ রাখতে পানির কোনো বিকল্প নেই। নরমাল পানি খাওয়ার পাশাপাশি ডিটক্স ওয়াটার খেলে এটি শরীরে জমে থাকা টক্সিন উপাদান খুব সহজেই বের করে দেয়।
  • শরীরে থাকা উপাদান এবং ফ্যাট একসঙ্গে হলে এই ফ্যাট বার্ন করা কষ্টসাধ্য। তাই ওজন কমানোর সময় ডিটক্স ওয়াটার শরীর থেকে দূষিত উপাদান বের করে দেওয়ার মাধ্যমে শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও এটি শরীরের বিপাক হার বৃদ্ধি করে পরোক্ষভাবে ক্যালরি বার্ন করতে সহায়তা করে।
  • ত্বকের সুস্থতায় ডিটক্স ওয়াটার অনেক উপকারী। এটি ত্বকের দাগ দূর করা, ত্বক মসৃণ করা, ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • ডিটক্স ওয়াটার খেলে শরীরে ভিটামিন সির ঘাটতি পূরণ হয়।
  • ডিটক্স ওয়াটার হজম শক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে।
  • ডিটক্স ওয়াটার শরীরে রক্ত, পানি ও পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায় এবং কোলেস্টেরল কমাতেও ভূমিকা রাখে।
  • ডিটক্স ওয়াটার খেলে শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয় এবং সতেজতা আসে।

বানানোর পদ্ধতি

ডিটক্স ওয়াটার বিভিন্ন পদ্ধতিতে তৈরি করা যেতে পারে। কয়েকটি পদ্ধতি হচ্ছে-

  • যেকোনো পছন্দের ফল বা সবজির স্লাইস দিয়ে তৈরি করা যায় ডিটক্স ওয়াটার। এই ওয়াটার কাচের পাত্রে তৈরি করতে করতে হবে। এক লিটার পানিতে আপেল, কমলা, তরমুজ, আঙুর ইত্যাদি স্লাইস করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তবে ফল পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখা ঠিক নয়। এতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে।
  • এক লিটার পানিতে পাঁচ থেকে ছয় টুকরা লেবু, এক টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার, এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা কাচের বোতলে ভিজিয়ে রাখলেই তৈরি হবে ডিটক্স ওয়াটার।
  • এক লিটার পানিতে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে আদা ও লেবুর কয়েকটি পাতলা স্লাইস এবং পুদিনাপাতা যোগ করে ৩-৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে তৈরি হবে ডিটক্স ওয়াটার।

কখন খাবেন

অনেকেই আছেন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ডিটক্স ওয়াটার খান। তবে খালি পেটে এটি না খাওয়াই ভালো। এতে বুক জ্বালা, অ্যাসিডিটি, ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি খাওয়ার উপযুক্ত সময় সকালের খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর। এরপর থেকে সারাদিনে ১-২ ঘণ্টা পরপর ১ কাপ করে এ পানীয় খেতে পারেন। তবে দিনে ২-৩ বার ডিটক্স ওয়াটার খাওয়াই যথেষ্ট শরীরের জন্য।

সতর্কতা

  • একই ধরনের ডিটক্স ওয়াটার প্রতিদিন না খেয়ে বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স ওয়াটার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। একটানা ১৫ দিন খাওয়ার পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার খাওয়া শুরু করা উচিত।
  • অতিরিক্ত ডিটক্স ওয়াটার খেলে অতিরিক্ত প্রস্রাবের ফলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে। ফলে মাথা ব্যথা, শরীরে দুর্বলতা, বমি ভাব হতে পারে।
  • একটানা দীর্ঘদিন ডিটক্স ওয়াটার খেলে বিপাক হার কমে গিয়ে শরীরের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
  • যাদের কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন জটিল রোগ রয়েছে তাদের এ ধরনের পানীয় খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • প্রতিদিন ফ্রেশ ডিটক্স ওয়াটার পান করার চেষ্টা করতে হবে। ২-৩ দিনের আগের বানানো ডিটক্স ওয়াটার খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

     

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

4h ago