৪ বছর ধরে ঝুলে আছে খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ

খেলাপি ঋণ
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

খেলাপি ঋণ কমাতে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গঠনের বিষয়টি প্রায় চার বছর ধরে ঝুলে আছে কারণ সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে এটি সরকারি বা বেসরকারি ব্যবস্থায় করা হবে কিনা।

২০২০ সালে সরকার ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ সমস্যা সমাধানে সহায়তার অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ কেনা ও লেনদেনের জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত কর্পোরেশন গঠনের ধারণার কথা জানিয়েছিল।

এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন-২০২০ (বামকো) এর খসড়া করে।

পরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) অন্যদের কাছ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান গঠনের বিষয়ে সমালোচনার পর এফআইডি পিছু হটে। কারণ দেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের মান প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, করদাতাদের টাকা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ কেনায় খরচ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। এটি আর্থিক খাত ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত এফআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার মতে, সরকারের ভেতরের কেউ কেউ চান বেসরকারিভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গঠন করা হোক। কেউ চান তা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকুক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেসরকারিভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গঠন করা যায় কি না, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। আমরা এটি পর্যালোচনা করছি। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'কয়েকটি দেশ সরকারিভাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গঠন করে ইতিবাচক ফল পেয়েছে। কয়েকটি দেশ বেসরকারিভাবে তা করে ভালো ফল পেয়েছে।'

'তাই প্রতিষ্ঠানটি সরকার গঠন করবে নাকি বেসরকারিভাবে গঠিত হবে সে বিষয়ে আমরা এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি,' যোগ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ১০ শতাংশ ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি পাঁচ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এটি বিতরণ করা মোট ঋণের নয় শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এটি তাদের মোট ঋণের ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ছিল ৭০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। এটি তাদের মোট ঋণের পাঁচ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

গত বছর পুরো ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আছে খেলাপি, পুনঃতফসিল করা ঋণ, রাইট-অফ ঋণ ও আদালতের নির্দেশে নিয়মিত করা ঋণ।

গত মাসে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একত্রী ও সংযুক্তিকরণের গাইডলাইনে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান গঠনের ইঙ্গিত দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ খেলাপি ঋণ লেনদেন ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ কেনাবেচার জন্য প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই জবাবদিহিমূলক হতে হবে। সুশাসন চর্চা করতে হবে। তা সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যবস্থাপনাতেই হোক না কেন।'

'ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ কেনাবেচা এর একমাত্র দায়িত্ব হওয়া উচিত নয়। এর সঠিক উদ্দেশ্য থাকতে হবে।'

ভারতের উদাহরণ টেনে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেখানে সরকারি খাতের তুলনায় বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Graft allegations against Benazir Ahmed

Interpol issues red notice against ex-IGP Benazir

Authorities have so far submitted red notices requests against 12 individuals, including several high-ranking officials of the AL regime

26m ago