বেনজীর ও তার পরিবারের ১১৪ একর জমি: প্রায় সবই কেনা হয় র‍্যাবের ডিজি ও আইজিপি থাকাকালীন

বেনজীর আহমেদ। ফাইল ছবি সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সম্পদের রেকর্ড অনুযায়ী, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সব জমি কেনা হয়েছে তিনি যখন পুলিশ ও র‍্যাবের প্রধান ছিলেন সেই সময়ে।

দুদকের নথিতে দেখা যায়, বেনজীর ও তার পরিবার ৮৩টি দলিলের মাধ্যমে ১১৪ একর জমি কিনেছিলেন। এগুলোর মধ্যে ১১২ একর জমিই কেনা হয়েছে বেনজীর আহমেদ যখন পুলিশ মহাপরিদর্শক ও র‍্যাব মহাপরিচালক ছিলেন তখন।

আইজিপি থাকাকালে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫০টি দলিল দিয়ে ৬৩ দশমিক ৯৭ একর জমি কেনেন বেনজীরের পরিবার। র‍্যাব মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ২৭টি দলিল দিয়ে কেনা হয়েছে ৪৮ দশমিক ১৫ একর জমি।

দুদক আরও জানতে পেরেছে, ২০১৪ সালে বেনজীর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার থাকাকালে পাঁচটি দলিলের মাধ্যমে এক দশমিক ৭৫ একর জমি কিনেছে তার পরিবার।

বেশির ভাগ জমি তার স্ত্রী জিসান মির্জার নামে নিবন্ধন করা হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আস্‌সামছ জগলুল হোসেন দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক আইজিপির সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।

আদালত সূত্র জানায়, আদেশের ফলে বেনজীর আহমেদের ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং ৮৩টি দলিলে তালিকাভুক্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যেসব দপ্তরে আদেশ বাস্তবায়ন করা হবে সেখানে আদালতের আদেশের কপি পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার আদালতে দুদকের আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, বেনজীরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পদ তার, তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের নামে নিবন্ধিত।

এসব জমির মধ্যে অন্তত ৮১ একর জমি বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিসানের নামে, ৭ দশমিক ৬ একর জমি বেনজীরের নামে এবং বাকি ২৬ একর জমি তার তিন সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে রেজিস্ট্রি করা।

দুদক সুনির্দিষ্টভাবে বেনজীরের তিন মেয়ের প্রত্যেকের মালিকানাধীন সম্পত্তি উল্লেখ করেনি। তবে দুদক জানায়, সাবেক আইজিপির জন্মস্থান গোপালগঞ্জের সাহাপুরে ফারহিন রিশতার নামে ১৩ একর জমি নিবন্ধন করা হয়েছে।

দুদক জানায়, বেনজীর ও তার পরিবার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৯৭ দশমিক ৮৬ একর, টুঙ্গিপাড়ায় দশমিক ৪৭ একর, কোটালীপাড়ায় ১১ দশমিক ৪৯ একর এবং কক্সবাজারে ২ দশমিক ৪৭ একর জমি কিনেছেন।

কয়েকটি দলিলে জিসান মির্জাকে সাভানা বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হিসাবে দেখানো হয়েছে। যেটি একটি খামার, একটি ইকো পার্ক, একটি ইকো-রিসোর্ট, একটি কান্ট্রি ক্লাব এবং সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ নামে উদ্যোগের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

পুলিশ ও র‍্যাব প্রধান হিসেবে বেনজীর দায়িত্বে থাকাকালীন তার স্ত্রী জিসান মির্জা কোনো পেশায় নিয়োজিত ছিলেন না। কিন্তু পরে এক ভিডিও বার্তায় বেনজীর দাবি করেন, তার স্ত্রী ও কন্যারা একটি খামারের মালিক।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র যে সাত জন সাবেক ও বর্তমান র‍্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, বেনজীর তাদের একজন।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রকাশের পর বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাপক সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সামনে আসে।

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য গতকাল বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বেশ কয়েকবার কল এবং টেক্সট করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

ফেসবুকে একটি ভিডিওতে বেনজির তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন।

গত ১৮ এপ্রিল সাবেক আইজিপির দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। গত ২২ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন বলেন, অনুসন্ধানের জন্য কমিশন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

পরদিন হাইকোর্ট বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে দুদককে আদেশ দেন।

গত ২৩ মে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের আবেদন করে দুদক।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

3h ago