দিয়াবাড়িতে কায়াকিং করতে

দিয়াবাড়িতে কায়াকিং
ছবি: কে তানজিল জামান

বর্তমান প্রজন্ম, তা সে মিলেনিয়ালই হোক বা জেন-জি, ক্যাফে-রেস্তোরাঁর বাইরের আড্ডা কিংবা ঢাকার বাইরে ভ্রমণের বাইরে খুব একটা প্রাকৃতিক ছোঁয়া আছে এমন স্থানের সঙ্গে যুক্ত নয়। সেইসঙ্গে আমাদের বিনোদনের জগতটাও অনেক বেশি একমুখী।

কোথায় যাব, কীভাবে যাব, যেতে কত সময় লাগবে- ইত্যাদি বিভিন্ন সিদ্ধান্তহীনতা এবং কাছাকাছির মধ্যে খুব বেশি বিকল্প না থাকায় এমন অনেক খেলাধুলা বা বিনোদনমূলক কাজই আমাদের করা হয়ে ওঠে না। আর এই অভাব পূরণ করতেই বিডি কায়াকিং হতে পারে ছোট-বড় সবার জন্য দারুণ একটি জায়গা।

উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত এই কায়াকিংস্পটটির জনপ্রিয়তা প্রতিদিনই নতুন করে বাড়ছে। কিন্তু এর বিশেষত্ব কী? অলস বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলোতে সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যে লেকের জলে ভেসে বেড়ানো হোক বা ঢাকার নতুন আকর্ষণ মেট্রোরেলের ছুটে যাওয়ার দৃশ্য, সব মিলিয়ে মন ও চোখ– দুয়ের জন্যই এই জায়গাটি অনেক বেশি আরামদায়ক, উপভোগ্য।

দিয়াবাড়িতে কায়াকিং
ছবি: কে তানজীল জামান

সম্প্রতি স্নাতক সম্পন্ন করা ইমরান এ বিষয়ে তার অনুভূতি জানান, 'এ যেন এক পশলা মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া। দিনভর গাড়ির আওয়াজে ক্লান্ত মনের জন্য এই তো চাই। আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে এখানে ঘুরতে যাওয়ার পর থেকেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আছি।'

কীভাবে যাবেন

আগারগাঁও, মিরপুর, ফার্মগেট কিংবা মতিঝিল, যদি মেট্রো স্টেশন আশপাশে হয়, তবে খুব সহজেই তাতে চড়ে আধঘণ্টারও কম সময়ে উত্তরা সেন্টার স্টেশনে পৌঁছে যেতে পারেন। ১৭৩ নাম্বার পিলারের কাছেই এই কায়াকিং স্পটটি অবস্থিত।

কলেজশিক্ষার্থী আশিকুর বলেন, 'আমি মিরপুর ১১ তে থাকি, মেট্রোর বদৌলতে এখানে পৌঁছাতে আমার মাত্র ১০ মিনিট লেগেছে। এখানে আসা এতটাই সহজ।'

কায়াকিং অভিজ্ঞতা কেমন হবে

বিডি কায়াকিংয়ে টু-সিটার ও থ্রি-সিটার কায়াকের মতো ভিন্ন ভিন্ন বোট রয়েছে, আর এর সবটাই খুব সাশ্রয়ী। মাত্র ১০০ টাকায় ৩০ মিনিটের একটি সেশন উপভোগ করা যায়। আর ১ ঘণ্টা জলভ্রমণের জন্য লাগবে ১৫০ টাকা।

এর নব্য জনপ্রিয়তার কারণে, বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়টাতে আগেভাগে পৌঁছানোই ভালো। নয়তো ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

দলবেঁধে ঘুরতে গেলে এবং কম সময় অপেক্ষা করতে চাইলে থ্রি-সিটার কায়াক নেওয়াই ভালো হবে। এই লাইনটা বেশিক্ষণ আটকে থাকে না এবং বন্ধুদের জন্যও মানানসই।

তবে এখানে রোজই অনেক মানুষ আসায় কায়াকের টিকিট কেনার পর ঘোষণার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।

নিশাত এখানকার একজন তত্ত্বাবধানকারী।

তিনি পর্যটকদের একটু সতর্ক করে দিতে বলেন, 'এখানকার এত প্রাণবন্ত পরিবেশে ঘোষণা শুনতে না পাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এক্ষেত্রে একটু মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে টোকেন নম্বর ডাকার সময়টাতে।'

তিনি আরও বলেন, 'অপেক্ষার এই সময়টাতে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ও সতর্কতা সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন, যাতে করে আপনাদের যাত্রা নিরাপদ ও অভিজ্ঞতা আরও উপভোগ্য হয়।'

এখানে কায়াকিং কি নিরাপদ

এই কায়াকগুলো গড়নে বেশ শক্তপোক্ত এবং ফাইবার গ্লাস ও ভারবহ উপাদানে তৈরি হওয়ায় যাত্রীদের ভার বহনে কোনো সমস্যা হয় না।

কায়াকে চড়ার সময় যখন হবে, তখন যাত্রীদেরকে একটি করে লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হবে এবং কায়াকে নিয়ে যাওয়া হবে। কায়াকে ওঠার আগে এর প্যাডেল ও লাইফ জ্যাকেট ভালোমতো দেখে নেওয়া জরুরি।

এই ছোটখাটো অভিযানের সবচাইতে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত বোধহয় কায়াকে চড়া এবং তা থেকে নামা। তাই বিডি কায়াকিং শহরের মাঝখানেই দিচ্ছে সপ্তাহান্তের রোমাঞ্চ ও উপভোগের সুযোগ, দীর্ঘ কর্মদিবসের পর বেশ কিছুক্ষণ নির্ভার বিশ্রামের সময়।

বাড়তি সুবিধা

কায়াকের লাইন যদি বেশিই লম্বা মনে হয়, তবে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন আশপাশের রেস্তোরাঁগুলোতে। কায়াকিং ডকের একেবারে পাশেই রয়েছে লেক ভিউসহ দারুণ সব খাওয়ার জায়গা। প্রতিটি টেবিলই যেন পানির দিকে মুখ করে রাখা, যাতে করে খাওয়ার সময়ও প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগের সুযোগ থাকে।

বিডি কায়াকিংয়ে কায়াকের পাশাপাশি রয়েছে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে অনুভবের সুযোগ। এই অভিজ্ঞতা একইসঙ্গে বিভিন্ন ভ্রমণকারী দল বা একা একা ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ। তাই শহরের খুব কাছে থেকেই শহরের বাইরের উপভোগ্যতা পেতে চাইলে দিয়াবাড়িতে অবস্থিত এই কায়াকিং স্পটটি ঘুরে আসা যায় এই সপ্তাহেই। কে জানে, বিকালের চা খেতে খেতে ভেসে বেড়ানো কায়াকগুলো দেখলে জ্যামের ক্লান্তি হয়তো আর অত সহজে বেশ কয়েকদিন মাথায় চেপে বসতে পারবে না।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

Comments