খুলনার সেই নারী ফুটবলাররা মাঠ ছেড়ে বাড়িতে, পাশে নেই কেউ

কয়েক মাস যেতেই সব প্রতিশ্রুতি চলে যায় আড়ালে। সেই খেলোয়াড়রা এখন কে কোথায় আছেন, সেই খোঁজ কেউ রাখেনি।
তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে চর্চা করতেন নারী ফুটবলাররা। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

'মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে'—এমন কথা তুলে গত বছর খুলনার তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির নারী খেলোয়াড়দের ওপর হামলা করেছিল কিছু দুষ্কৃতকারী।

ঘটনাটি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়। দেশব্যাপী প্রবল প্রতিবাদের মুখে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। সরকারের বিশেষ আগ্রহে নারী খেলোয়াড়রা মাঠে ফিরে যান এবং সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে সার্বিক নিরাপত্তাসহ নানা প্রকারের প্রতিশ্রুতি পান। কেউ কেউ আর্থিক সহায়তা দেওয়াসহ তাদের যাবতীয় খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দেন। আবার কোনো কোনো সংস্থা নারীদের জন্য আলাদা মাঠের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

যে মাঠে তারা প্র্যাকটিস করতেন, সাময়িকভাবে ওই মাঠ বালু দিয়ে উঁচু করে ভালোভাবে খেলার উপযোগী করা হয়। সারাদেশ থেকে প্রায় প্রতিদিন নানা সংগঠন অভয় বাণী নিয়ে নারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করতে আসেন এবং তাদের সাহস যোগান।

কিন্তু কয়েক মাস যেতেই সব প্রতিশ্রুতি চলে যায় আড়ালে। সেই খেলোয়াড়রা এখন কে কোথায় আছেন, সেই খোঁজ কেউ রাখেনি। না সরকারি দপ্তর, না বেসরকারি সংগঠনগুলো কেউ নারী খেলোয়াড়দের সঙ্গে বর্তমানে কোনো যোগাযোগ করছে। যে ক্লাবে তারা খেলতেন, সেই ক্লাবের প্রাক্টিস বন্ধ হয়ে গেছে। যে বাড়িতে থেকে তারা প্র্যাকটিস করতেন, সেখান থেকে তাদের বিতাড়িত করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে চারজনের পরিবার তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছেন। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এসব নারী খেলোয়াড়রা কেউ কেউ দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে মাঠে কাজও করছেন। নারী খেলোয়াড়দের এই বর্তমান অবস্থা দেখে তাদের পরিবারের সদস্যরাও হতাশ হয়ে তাদেরকে আর খেলার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন না। বরং পরিবারের সদস্যরা খেলাধুলার পরিবর্তে অন্য কোনো কাজে যোগ দিতে বাধ্য করছেন।

বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের মাঠে ফিরিয়ে নিতে গেলে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। নারী খেলোয়াড়রা বলছেন, পুনরায় ক্লাবের প্র্যাক্টিস শুরু করতে হবে। উপযুক্ত কোচ নিয়োগের মাধ্যমে তাদের মাঠে ফেরানোর ব্যবস্থা না করলে তাদের ভবিষ্যৎ এখানেই থেমে যাবে।

অথচ এই নারী খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে খুলনা জেলা ও বিভাগীয় দল গঠন করা হতো। এই ক্লাব থেকে আট থেকে ১০ জন নারী খেলোয়াড় সব সময়ই জেলা ও বিভাগীয় টিমে খেলে। তাদের পারফরমেন্সের ওপর নির্ভর করত খুলনা জেলা দল কিংবা বিভাগীয় দল জয়ী হবে কি না।

গত নভেম্বর থেকে সুপার কুইন নারী খেলোয়াড়রা বাড়ি বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অথচ এ সময় তাদের পুরোদমে মাঠে প্র্যাকটিস করার কথা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলার কথা।

গত বছরের ২৯ জুলাই মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সুপার কুইন দলের অন্যতম খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচী। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমরা গত নভেম্বর থেকে ক্লাব ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছি। আসলে আমাদেরকে বাড়ি আসতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু আমরা তো খেলতে চাই, মাঠে প্র্যাকটিস করতে চাই। কিন্তু কোথায় কীভাবে খেলবো, কে আমাদের প্রশিক্ষণ দেবেন, কোন মাঠে প্র্যাকটিস করব—এর কোন কিছুই তো ঠিক নেই।'

'স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে আমাদের খেলা এখানেই যেন শেষ হয়ে গেল', আক্ষেপের সুরে বলেন মঙ্গলী।

তার ভাষ্য, 'আমাদের তো কত কিছুই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন। তারা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য একটি মিনি স্টেডিয়াম করে দেবেন। একইসঙ্গে তারা আমাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেল! কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেন না। আমরা খেয়ে থাকি, না খেয়ে থাকি—কেউ দেখতেও আসেন না। পরিকল্পিতভাবে আমাদের কোচকে ওখান থেকে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে আমরা আর খেলতে না পারি।'

'আমাদের খেলার মাঠ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক। সেইসঙ্গে আমাদের প্রশিক্ষিত কোচ দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। আমরা আবার মাঠে ফিরে যেতে চাই', যোগ করেন মঙ্গলী।

২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত খুলনা জেলা ও বিভাগীয় টিমে খেলেছেন মঙ্গলী বাগচী। কিন্তু গত সাত মাস মাঠের বাইরে থাকায় শারীরিক ও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

মঙ্গলীর মতো আরও ১৮ থেকে ২০ জন নারী খেলোয়াড়—যারা নড়াইল, সাতক্ষীরা, যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এখানে এসে প্রশিক্ষণ নিতেন—তাদের সবাই এখন খেলা ছেড়ে বাড়িতে বা অন্য কোথাও অবস্থান করছেন।

মঙ্গলী বাগচীর মা সুচিত্রা বাগচী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটি স্বপ্ন নিয়ে তো মেয়েকে মাঠে পাঠিয়েছিলাম। নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিয়ে আমার মেয়ের মতো আরও অনেকগুলো মেয়ে ফুটবল খেলে সুনাম নিয়ে এসেছে। হামলার শিকার হওয়ার পরও তারা ফুটবল ছাড়েনি। কিন্তু এখন মেয়ে বাড়িতে শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে। মেয়ের মুখের দিকে তাকানো যায় না। কী বলে তাকে সান্ত্বনা দেবো? প্রতিবেশীরা বিভিন্ন টিপ্পনি কাটেন, মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।'

সুপার কুইন ফুটবল দলের সাদিয়া নাসরিন, জ্যোতি, ঋতু, স্বর্ণা, পূজা রায়, দেবী ,সীমা, প্রীতি—তারা সবাই অনূর্ধ্ব ১৯ বিভাগীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। এখন তারা প্রায় সবাই খেলা ছেড়ে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

খুলনার বটিয়াঘাটার পূজা রায় একসময় ওই ক্লাবে নিয়মিত প্র্যাকটিস করে সুনামের সঙ্গে খুলনা বিভাগীয় দলসহ বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। বর্তমানে তিনি বাবার কিনে দেওয়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালিয়ে সবজি বিক্রেতা মাকে খুলনা শহর থেকে আনা নেওয়া করতেন। এর মধ্যে গত ৭ জুন তার ইজিবাইকটি খুলনা নগরীর কদমতলা মোড় থেকে চুরি হয়ে যায়।

পূজার বাবা অরবিন্দু রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খেলাধুলা নিয়ে মেয়ের আর তো কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। কোনো উপায়ান্তর না দেখে পূজা এখন ওর মাকে সহায়তা করছে।'

সাদিয়া নাসরিন খুলনা বিভাগীয় অনূর্ধ্ব ১৭ নারী ফুটবল দলের একজন সদস্য এবং তেঁতুলতলা সুপার কুইন দলের অন্যতম খেলোয়াড়। সাদিয়া গত বছর মঙ্গলীর সঙ্গে হামলার শিকার হয়েছিলেন। তিনি বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা খেলা শুরু করেছিলাম, তা আর সম্ভব হচ্ছে না।

'ঠিকমতো যদি প্র্যাকটিস করতেই না পারি, তাহলে খেলবো কী করে', প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ওই ক্লাবের একজন খেলোয়াড় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান (সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি)। তিনি নারী খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়ায় জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা করেছেন। তবে তিনি চান না যে আমরা বাইরে কোনো টুর্নামেন্ট খেলি। আমরা অনেকেই আর্থিক সংকট কাটাতে মাঝেমধ্যে বাইরের ক্লাবগুলোতে টুর্নামেন্টে খেলি। সে কারণে তিনি এখন আর কোনো সহায়তা করছেন না।

তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ২০১২ থেকে ২০২২ সাল—এই ১০ বছর প্রতিবারই জেলা পর্যায়ে এবং পাঁচবার বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একাধিক বার খুলনা বিভাগে রানার্সআপ হয়ে শতাধিক প্রতিভাবান নারী খেলোয়াড় তৈরি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি হওয়ায় তেঁতুলতানা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তারা যে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, সেই প্রশিক্ষণ অন্য কোথাও পাচ্ছিলেন না।

এতগুলো ফুটবলপ্রেমী মেয়ের কথা চিন্তা করে তাদের প্র্যাক্টিস করার পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেবাশীষ মন্ডল স্থানীয় কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠকদের নিয়ে তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। ক্লাবে সেখানকার স্কুল-কলেজে পড়া ৩০-৪০জন মেয়ে নিয়মিত ফুটবল প্র্যাক্টিস করে।

দেবাশীষ মন্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, মূলত আর্থিক সংকটের কারণে ক্লাবের প্র্যাকটিস বন্ধ আছে। সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে না এলে এই সম্ভাবনাময় মেয়েরা প্রচলিত স্রোতে ভেসে যাবে। দেশ তাদের আর খেলার মাঠে পাবে না।

তেঁতুলতলা সুপার কুইন দলের কোচ ও ওই অঞ্চলের এক সময়কার খ্যাতিমান খেলোয়াড় মো. মোস্তাকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০১৪ সালে তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোচ হিসেবে জয়েন করি। ২০২২ পর্যন্ত বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টে সাত বার জেলা চ্যাম্পিয়ন হয় তেঁতুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলা ও বিভাগীয় দলে যে নারী খেলোয়াড়রা খেলছেন, তারা প্রায় সবাই এই স্কুল থেকে প্রাথমিকে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে তারা স্কুলের গণ্ডি ছেড়ে কলেজে উঠেছে। কিন্তু তারা আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এখনো। এমন প্রতিশ্রুতিবান খেলোয়াড়দেরকে মাঠের বাইরে রাখা বড় বেদনার।

'ক্লাবটির সাংগঠনিক দুর্বলতা ও আর্থিক সংকটে এটি বন্ধ হয়ে গেল। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার উচিত এ ক্লাবটাকে আবার সচল করা। মেয়েদেরকে মাঠে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

খুলনা জেলা ফুটবলের অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, তাদের এই বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আসলে আমার জানা ছিল না। আমি অতি দ্রুত ক্লাবটাকে সচল করে নারী খেলোয়াড়দেরকে মাঠে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করব।

বর্তমানে মাঠটি ফাঁকা। ছবি: সংগৃহীত

নারী ফুটবলারদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার বর্তমান প্রেক্ষাপট

গত ২৯ জুলাই রাতে বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে চার নারী ফুটবলারকে হামলার ঘটনায় পরদিন ৩০ জুলাই বটিয়াঘাটা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন ফুটবলার সাদিয়া নাসরীন।

সাদিয়ার অভিযোগ, মামলার বিবরণীতে তিনি যা বলেছিলেন, পরবর্তীতে পুলিশের রেকর্ড করা মামলার সঙ্গে সেই বিবরণে কোনো মিল ছিল না।

সাদিয়া বলেন, আমি বলেছিলাম ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আমাদের শরীরে ক্ষত সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু মামলা রেকর্ড হওয়ার পরে দেখতে পাই শুধু লেখা হয়েছে মারধর করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমি সংশোধনের জন্য আবেদন করি। তারপরে সেটা রেকর্ডভুক্ত হয়। পুলিশ প্রথমে মামলায় নিতেই চায়নি। বরং আসামিপক্ষের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা রেকর্ড করার চেষ্টা করেছিলেন।

ওই সময়ে বটিয়াঘাটা থানায় কর্মরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, নারী খেলোয়াররা মাস্তানি করতে যেয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। সে সময় ডেইলি স্টার এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল।

পুলিশ নূর খাঁকে গ্রেপ্তার করলেও অপর তিন আসামি আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। পরে এসিডে শরীর ঝলসে দেওয়ার হুমকি দিলে সাদিয়া নাসরীন তিনজনকে অভিযুক্ত করে গত ১ আগস্ট থানায় জিডি করেছিলেন।

খুলনায় চার নারী ফুটবলারকে মারধরের ঘটনায় গত বছরের ৮ আগস্ট খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাদিউজ্জামান তিন আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে সময় মূল আসামি নূর আলম খাঁ কারাগারে ছিলেন।

অন্য তিন আসামি—নূরের স্ত্রী রঞ্জি বেগম, ছেলে সালাউদ্দিন খাঁ ও মেয়ে নূপুর খাতুন আগাম জামিনে বাইরে ছিলেন।

মামলার বাদী সাদিয়া নাসরিন বলেন, হামলাকারী সালাউদ্দিন আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। মামলা তুলে না নিলে এসিড মেরে মুখ ঝলসে দেওয়ারও ভয় দেখিয়েছিলেন। এ ছাড়া তারা নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করে আমাকেসহ আমার টিমের সদস্যদের পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করবে বলেও হুমকি দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি ১ আগস্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিলুর রহমান মল্লিক বলেন, নারী ফুটবলারদের মারধরের মামলায় তিন আসামি ২১ আগস্ট পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে ছিলেন। কিন্তু তারা জামিনে থাকা অবস্থায় বাদীপক্ষকে হুমকি-ধমকি দেওয়ায় আদালত আসামিদের হাজির হওয়ার জন্য আদেশ দেন। আসামিরা আদালতে হাজির হলে উভয়পক্ষের মধ্যে শুনানি হয়। শুনানি শেষে জামিনে থাকা অবস্থায় শর্তভঙ্গ করার দায়ে আসামিদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, জামিনে থাকা তিন আসামি তাদের জামিনের সব শর্ত ভঙ্গ করেছিলেন। তারা মামলার বাদী সাদিয়া নাসরিন ও অন্য ভুক্তভোগীদের মামলা তুলে না নিলে এসিডে শরীর ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেয়। যা পুলিশি তদন্তে প্রমাণিত হয়েছিল।

এরপর আসামিরা আরও দুইবার জামিনের আবেদন করেন কিন্তু প্রতিবারই আদালত তাদের জামির না মঞ্জুর করেন।

বর্তমানে বাদী পক্ষের মামলাটি পরিচালনা করছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের খুলনা জেলার লিগাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট জাহানারা পারভীন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, আসামিরা বর্তমানে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে জামিনে আছেন। ইতোমধ্যে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শেষ হয়েছে। ২৫ জুন পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য আছে।

পুলিশের জেলা পর্যায়ে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নারী খেলোয়াড়রা যেন কোনো ধরনের হামলা বা হয়রানির শিকার না হয়, তার জন্য আমরা দীর্ঘদিন তাদের পাহারার ব্যবস্থা করেছিলাম। তাদের মাঠে যাওয়া-আসার সময় পুলিশের দুটি গাড়ি সবসময় সঙ্গে থাকত। তাছাড়া তারা যে বাড়িতে থেকে মাঠে প্র্যাকটিস করতেন, সে বাড়িতেও কয়েক মাস রাতে একটি গাড়ি রেখে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল।

'যে কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আজ তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এই নারী খেলোয়াড়রা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। হামলাকারী আসামিরা আদালতের আদেশে জামিনে আছেন। এ বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো কিছু বলা সম্ভব না', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Hezbollah confirms Nasrallah is killed after Israeli strike

Israel said it eliminated him in Beirut airstrike on Friday; Death marks major blow to Iran and its allies

3h ago