বিপদ আঁচ করতে পেরে সেই ফ্ল্যাট থেকে বেরোবার চেষ্টা করেছিলেন এমপি আনার

আনোয়ারুল আজীম আনার। ছবি: সংগৃহীত

গত ১৩ মে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীব গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারেন যে অভিযুক্তরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে।

সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে অভিযুক্ত ফয়সাল আলী সাহাজি পেছন থেকে তাকে টেনে নিয়ে ক্লোরোফর্ম ভেজানো রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে দেন।

আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়াসহ অন্য অভিযুক্তরা তখন হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

শেরেবাংলা নগর থানায় এমপি আনারের মেয়ের দায়ের করা অপহরণ মামলায় গতকাল ঢাকার আদালতে দাখিল করা তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএমপি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাফুজুর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে ফয়সাল ও আরেক আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ফকিরের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শ্রী শ্রী মা পাতাল কালী মন্দির থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফয়সাল এমপি আনারকে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের কলকাতার বাসা থেকে প্রলোভন দেখিয়ে বের করে এনেছিলেন। এরপর দুজনে একটা গাড়িতে উঠে অন্য জায়গায় চলে যায়। সেখানে আমানুল্লাহ তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং তারা অন্য একটি গাড়িতে উঠে।

এরপর তারা তিনজন নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে যান, যেখানে আরেক আসামি শিলাস্তি রহমান আগে থেকেই ছিলেন।

তদন্তকারীরা জানান, শিলাস্তি ট্রিপলেক্স ওই অ্যাপার্টমেন্টের উপরের তলায় গেলে শিমুল ও অন্য অভিযুক্তরা আনারকে একটি কক্ষে নিয়ে যায়।

ক্লোরোফর্মের প্রভাবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার আগে অভিযুক্তের সঙ্গে এমপি আনারের ধস্তাধস্তিও হয়। এরপর অভিযুক্তরা আনারকে হত্যা করে, তারপর বিবস্ত্র করে মরদেহ চেয়ারে বাঁধে। পরে লাশ টুকরো টুকরো করা হয়।

তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, হত্যার জন্য ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরকে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মূল পরিকল্পনাকারী আমানুল্লাহ ও আক্তারুজ্জামান।

এতে আরও বলা হয়, তারা দুইজন গত ২ মে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় গিয়ে একটি হোটেলে ওঠেন। মোস্তাফিজুর ১০ মে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে যান এবং ফয়সাল সেখানে পৌঁছান দুই দিন পর। তারা হত্যাকাণ্ড ঘটাতেই সেখানে অবস্থান করেছিলেন।

এই ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত নয়জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যার মধ্যে সাতজন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। তবে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডিবিপ্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ গতকাল বলেছেন, খুনিরা কলকাতার একটি বাজার থেকে ১৭ হাজার টাকায় একটি চেয়ার কিনে এবং একইসঙ্গে ক্লোরোফর্ম নিয়ে আসে।

রাজধানীতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আজীমের মরদেহ ওই চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা ছিল... সিয়াম অস্ত্রগুলো এনে ফয়সালকে দিয়েছে।'

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ড থেকে কারা আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও কয়েকজন সন্দেহভাজন নজরদারিতে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

হারুন অর রশিদ বলেন, 'আজীম জনপ্রিয় এমপি ছিলেন। আর্থিক লেনদেনের কথা বলে আক্তারুজ্জামান তাকে কলকাতায় নিয়ে যান।'

'আমরা এখনো একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা রাজনৈতিক ও আর্থিক কারণসহ সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখছি।'

হত্যার কারণ জানতে ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানান তিনি।

'আমরা বিনা কারণে কাউকে ডাকছি না। আমরা নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছি না।'

গত ১২ মে কলকাতায় গিয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে সেদিন রাতে থাকেন আজীম। পরের দিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে তিনি বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।

২২ মে ভারত ও বাংলাদেশের পুলিশ জানায়, তাকে খুন করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
rally demanding ban on awami league in Dhaka

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

5h ago