পদ্মা সেতুর ভূমি অধিগ্রহণে জালিয়াতি: ৭ মাস পর ফের চাকরিতে বহাল সার্ভেয়ার

মাইনুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

পদ্মা সেতু প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে বাধ্যতামূলক অবসর হওয়া এক সার্ভেয়ারকে ৭ মাসের মধ্যেই পুনর্বহাল করা হয়েছে।

প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এক কোটি ৬৪ লাখ টাকা জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছিল মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের সাবেক সার্ভেয়ার মাইনুল হাসানের বিরুদ্ধে।

জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে ওই জালিয়াতিতে সহায়তার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। পরে গত বছরের নভেম্বরে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় মাইনুলকে।

কিন্তু, মাইনুলের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিলুর রহমান চলতি বছরের ৯ জুন তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন। 

বাধ্যতামূলক অবসরের শাস্তি কমিয়ে তার 'গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে ৫ বছরের জন্য' বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে তার।

২০২০ সালে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাইনুলের বদলি হয়। এর আগে তিনি শিবচর উপজেলায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন।

প্রকল্পের জন্য উপজেলার সুজানগর মৌজার ৩ দশমিক ৩৭ একর জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে দুজনকে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেন মাইনুল।

অথচ, ওই জমি ওই দুজনের ছিল না। সেগুলো ছিল সরকারি জমি। জমির ভুয়া কাগজ করে ওই দুজনের নামে দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।

এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মাইনুলের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি নিশ্চিত হয় যে, মাইনুল ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এবং ২০ সেপ্টেম্বর ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যুতে সহযোগিতা করেন। 

ভূমি মন্ত্রণালয়ও ওই ঘটনায় একটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।

তদন্ত কমিটি জানায়, মাইনুলের বিরুদ্ধে কর্তব্যের অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এর আগে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে একটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

পরে ওই বছরের ৮ নভেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপনে জানায়, 'মাইনুলকে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে।'

এতে বলা হয়, এ ধরনের অসাধু কার্যকলাপ সরকারের স্বার্থের পরিপন্থী এবং কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। তার কর্মকাণ্ডে সততা, নিরপেক্ষতা, দায়িত্বশীলতা ও দক্ষতার অভাব দেখা গেছে। 

এতে আরও বলা হয়, মাইনুল 'ব্যক্তিগতভাবে এ প্রকল্প থেকে লাভবান হয়েছেন।'

মাইনুলের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব কমিটির কাছে 'অসন্তোষজনক বলে বিবেচিত হয়।'

পরে চাকরি ফিরে পেতে ২০২৩ সালের ১১ মার্চ মাইনুল ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।

সচিবের নেতৃত্বে আপিল শুনানির পর মন্ত্রণালয় তার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। 

মাইনুল অভিযোগের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি, তাও নিশ্চিত হয়েছিল আপিল শুনানি কমিটি।

তবুও, তারা বাধ্যতামূলক অবসর মাইনুলের জন্য 'অতিরিক্ত শাস্তি' বলে গণ্য করেন।

পরে এ বছরের ৯ জুন নতুন প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রণালয় জানায়, মাইনুলের শাস্তি কমানো হয়েছে। পাঁচ বছর নিচের বেতন গ্রেডে রাখার শাস্তি দিয়ে তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ সিদ্ধান্তে বিস্মিত হন।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শাস্তি কমানো অধস্তন কর্মকর্তাদের জন্য ভালো নজির না।

আপিল ও পুনর্বহালের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মাইনুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযুক্ত কর্মচারীর (মইনুল) বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত। এই কর্মচারীকে বাঁচিয়ে দেওয়া  মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে সহায়তা করার জন্য দোষী।'

তিনি বলেন, 'প্রতারণার সঙ্গে জড়িত একজন সরকারি কর্মকর্তা বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তার বাধ্যতামূলক অবসর সুপারিশ বাতিল করে তাকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুর্নীতিকে সুরক্ষা দেওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো।' 

'দুর্নীতি করে পার পাওয়া যায়, এটি এ ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো,' তিনি বলেন। 

তিনি আরও বলেন, সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার সঙ্গে এ ঘটনাটি পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। 

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ভূমি সচিবকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, টেক্সট মেসেজ পাঠালেও জবাব দেননি।

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

7h ago