কোটা আন্দোলন: ঢাকায় আসামি ২ লাখের বেশি

প্রিজন ভ্যান
প্রিজন ভ্যানে করে আসামিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবিটি গত ২৫ জুলাই সিএমএম আদালতের সামনে থেকে তোলা। ছবি: পলাশ খান/ স্টার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা করা হয়েছে প্রায় ২০০ মামলা। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে, যাদের অধিকাংশই অজ্ঞাত।

প্রায় সব মামলাই পুলিশের দায়ের করা। নথি থেকে জানা যায়, অন্তত ১৬টি মামলার আসামি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার মানুষ।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গত ১২ দিনে নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীসহ আড়াই হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তবে মামলা ও গ্রেপ্তারের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকায় তা আরও বাড়তে পারে।

গত সপ্তাহে নজিরবিহীন সহিংসতা দেখেছে দেশ। ১৫ জুলাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালালে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রাণঘাতী সংঘর্ষে রূপ নেয়।

পরের দিনগুলোতে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য স্থানে সহিংসতা বাড়তে থাকে। দ্য ডেইলি স্টারের তথ্য অনুসারে অন্তত ১৬২ জন নিহত হন। তবে আন্দোলনকারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে কারণ অনেক হাসপাতাল যেখানে গুরুতর আহত অনেক রোগীকে নেওয়া হয়েছিল সেখানে পৌছাতে পারেনি ডেইলি স্টার।

এছাড়া অনেক পরিবার ঘটনাস্থল থেকে তাদের প্রিয়জনের মরদেহ নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। সেইসব পরিবারগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নিহতদের এই সংখ্যা শুধুমাত্র হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রের উপর ভিত্তি করে।

গবে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ২১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে প্রথম আলো।

সরকার রাতের বেলা কারফিউ জারি করে, সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে এবং অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

এদিকে মানবাধিকার কর্মী, সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার বা আহতদের পরিবারের সদস্য এবং রাজনৈতিক দলগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের নিন্দা জানাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের দাবি, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই মামলা করা হয়েছে।

রাজধানীতে যত মামলা

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানায় গতকাল পর্যন্ত ২২৯টি মামলা হয়েছে।

গত ১৭ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১৭৮টি মামলা সংক্রান্ত নথি হাতে পেয়েছে ডেইলি স্টার। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৪ জন। এর মধ্যে নামীয় আসামি মাত্র ১ হাজার ৩১০ জন।

বাকি ৫১টি মামলায় কতজন আসামি তা জানা যায়নি।

মামলায় অজ্ঞাত আসামি মানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাকে খুশি তাকে গ্রেপ্তারের সুযোগ থেকে যাওয়া।

পুলিশ ৬০টি মামলায় কোনো আসামির নাম বা নম্বর উল্লেখ করেনি এবং অন্তত দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০ হাজার জনকে আসামি করেছে।

এই দুই মামলার একটি হয় গত ১৮ জুলাই মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সহিংসতার ঘটনায়।

অপরটি গত ২১ জুলাই আজিমপুরে নাশকতার ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা করা হয়। আসামিরা অজ্ঞাতনামা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।

গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৯ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া একটি মামলার আসামি আট হাজার, দুটি মামলায় সাত হাজার, ছয় হাজার আসামির বিরুদ্ধে সাতটি ও পাঁচ হাজার আসামির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে।

আসামিদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমায়েত, দাঙ্গা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা এবং সম্পদের ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঢাকায় গ্রেপ্তার

১৭ জুলাই থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে গতকাল অন্তত ১৫৮টি মামলায় গতকাল ৯৮ জনসহ ২ হাজার ৫০৬ জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।

যাত্রাবাড়ী থানার ১৫টি মামলায় ৩৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৭ জুলাই থেকে শুরু করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকায় টানা সহিংসতা দেখা গেছে।

মিরপুর থানা ১০টি মামলায় ১৬৮ জন, উত্তরা পূর্বাঞ্চল ১০টি মামলায় ১৬৪ জন, পল্টন থানা আটটি মামলায় ১৪৫ জন এবং বাড্ডা থানা ৪টি মামলায় ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

মিরপুর, উত্তরা, বাড্ডা ও পল্টন এলাকায়ও তীব্র সংঘর্ষ হয়।

পুলিশ সদস্য, একজন শিক্ষার্থী ও পুলিশের সোর্স নিহতের ঘটনায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। একটি মামলা করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইনে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago