নারায়ণগঞ্জে রাস্তায় বসে পড়া আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলির অভিযোগ

পুলিশকে লক্ষ্য করে হাত নেড়ে রাস্তায় বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের ওপর গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ছবিটি আজ বিকেল সোয়া ৩টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থেকে তোলা হয়। ছবি: স্টার

তখন বিকেল ৩টা ১০ মিনিট। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সড়কের ওপর বসে পড়েন। পুলিশ মাইকে জানায়, তাদের দিক থেকেও কোনো গুলি বা টিয়ারশেল ছোড়া হবে না। আন্দোলনকারীরাও হাত তুলে পুলিশের বক্তব্যে সায় জানান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও ছররা গুলি চালানো হয়।

এই প্রতিবেদক নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা অবস্থায় ছররা গুলিতে (পেলেট) আহত অন্তত ১৫ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখেন।

এদের মধ্যে একজনের মাথার পেছনে কয়েকটি ছররা গুলি লাগে। অচেতন অবস্থায় তাকে কয়েকজন কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন।

তাকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাদের একজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ আমাদের বলেছিল, কোনো গুলি করবে না, টিয়ারশেল মারবে না। আমরাও শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় বসে পড়ি। আমাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল মাত্র কয়েক গজ। আমরা যখন বসে পড়ছিলাম তখনই গুলি ছোড়া হয়।'

এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা দৌঁড়ে সেখান থেকে সরে যান। এই প্রতিবেদক নিজেও সড়কে পড়ে গিয়ে আহত হন।

তবে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোনো সংঘর্ষ হয়নি। কিছু শ্রমিক সকাল থেকে এই এলাকায় এসে বিশৃঙ্খলা করছিল। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ এখানে বিভিন্ন সরকারি অফিস আছে। দুপুরে পাশে একটি পার্কের ভেতরে আগুন দেওয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে তাদেরকে এই এলাকা থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।'

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাতীয় একটি গণমাধ্যমের আলোকচিত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমরা তিনজন সাংবাদিক ছিলাম। এসপি অফিসের সামনে লিংক রোডের ঢাকামুখী লেনে পুলিশ এবং উল্টো দিকে আন্দোলনকারীরা ছিলেন। পুলিশ মাইকে সবাইকে শান্ত হতে বলছিলেন। গুলি চালানো হবে না বলেও মাইকে বলা হচ্ছিল। তখন আন্দোলনকারীরা রাস্তার ওপর বসে পড়েন। আমরা যেহেতু আন্দোলনকারীদের কাছাকাছি ছিলাম, স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি ছাত্র ও অন্যান্য আন্দোলনকারীরা বলছিলেন, আমরা সড়কে বসে থাকব, কেউ কোনো ঢিল মারবে না। গলায় আইডি কার্ড ঝোলানো অনেক শিক্ষার্থী তখন রাস্তায় বসে পড়েন। এর এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়তে শুরু করে।'

'ওই পরিস্থিতিতে কোনোমতে সেখান থেকে দৌঁড়ে সরে যাই। কিছু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে গুলিবিদ্ধ অনেক আন্দোলনকারীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখি,' যোগ করেন তিনি।

প্রায় একই বর্ণনা দেন সেখানে উপস্থিত আরেক সাংবাদিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা চাষাঢ়া হয়ে লিংক রোড ধরে এগোচ্ছিলাম। এসপি অফিসের কাছাকাছি গিয়ে দেখি, আন্দোলকারীরা সড়কে অবস্থান করছে। এই সময় পুলিশ মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। তারা বলছিল, আমরা কোনো গুলি করব না, আমরা কোনো হামলা করব না। আপনারাও শান্ত হন। পুলিশের এই আহ্বানে আন্দোলনকারীরা আশ্বস্ত হয়ে সারিবদ্ধভাবে সড়কের ওপর বসে পড়ে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের অন্তত ৫০-৬০ জন তখন বসেই ছিলেন। আমরা অনেককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখেছি।'

এর আগে সকালে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর হয়। আশেপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরাও ছাত্রদের ডাকা আন্দোলনে যোগ দেন। তাদের একটি অংশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। পরে কার্যালয়ের সামনে ডিসি থিম পার্কে আগুন দেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।

Comments

The Daily Star  | English

Netanyahu says Israel close to meeting its goals in Iran

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

20h ago