শুকায়নি বন্যার পানি: বেগমগঞ্জের যেসব গ্রামে এখনো নৌকা নিয়ে যেতে হয়

শুকায়নি বন্যার পানি: বেগমগঞ্জের যেসব গ্রামে এখনো নৌকা নিয়ে যেতে হয়
ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ছয়ানী ইউনিয়নের একটি গ্রাম ভূপতিপুর। গত ৪০-৫০ বছরে এই গ্রামে যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হয়নি। ছয়ানী বাজার থেকে ৩০০-৪০০ মিটার দূরের এই গ্রামে পায়ে হেঁটেই যাওয়া যেত।

এক মাস যাবৎ নৌকায় যেতে ভাড়া গুনতে হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একই অবস্থা পাশের গ্রাম ভবানী-জীবনপুরের।

বন্যায় এই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল বাসেদের টিনশেড দুটি ঘর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ৫৫ বছর বয়সী বাসেদ পেশায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী।

তিনি বলেন, 'বন্যা শুরুর পরে হাতে তেমন কোনো কাজ নেই। জমানো কোনো টাকাও নেই।'

শুকায়নি বন্যার পানি: বেগমগঞ্জের যেসব গ্রামে এখনো নৌকা নিয়ে যেতে হয়
ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

নৌকা ভাড়া বাঁচাতে পানি ভেঙেই বাড়ি যাবেন বলে জানান আব্দুল বাসেদ।

বুধবার দুপুরে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছয়জনের সংসার আমার। বহু কষ্টে দুটি টিনের ঘর বানিয়েছিলাম আমি। ঘরটি এবারের বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার যদি সাহায্য করে তাহলে ঘর মেরামত করতে পারব।'

গত ১৮ আগস্ট ভবানী-জীবনপুর গ্রাম প্লাবিত হয়। এর পরে দুই-তিন ভারী বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। সেই থেকে গ্রামের ৩৫০টি পরিবারের বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন। পুরো গ্রামে এখনো হাঁটুপানি।

ছয়ানী ইউনিয়নের রুদ্রপুর, গঙ্গারামপুর, আমিনপুর, নয়নপুর, বড় মেহেদীপুর, লক্ষ্মণপুর, ছোট শিব নারায়ণপুর, আব্দুল্লাহপুরসহ আরও অনেক গ্রামের চিত্র প্রায় একই।

শুকায়নি বন্যার পানি: বেগমগঞ্জের যেসব গ্রামে এখনো নৌকা নিয়ে যেতে হয়
ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

ভূপতিপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কিছু মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করলেও এখনো অনেকে রাতে থাকতে পারছেন না। দীর্ঘ দিন পানি জমে থাকায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। সেই সঙ্গে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত নানা রোগ।

ভূপতিপুর গ্রামের বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, 'এক মাস ধরে বন্যা চলায় এই গ্রামের অনেক গরু-বাছুর মারা গেছে। অনেক খামারি ও মৎস্যজীবী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কবে কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।'

শুকায়নি বন্যার পানি: বেগমগঞ্জের যেসব গ্রামে এখনো নৌকা নিয়ে যেতে হয়
ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

নোয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যা ছিল ২০ লাখের বেশি। ইতোমধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। বুধবার পর্যন্ত ৪৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ হাজার সাত শতাধিক লোক অবস্থান করছেন।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহাবুবুর রহমান বলেন, দীর্ঘস্থায়ী এই বন্যায় বহু মানুষের কাঁচা ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজারো কৃষক ও খামারি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English
National Consensus Commission Holds Talks with BNP, Jamaat, and NCP

Parties split over ‘pluralism’, nat’l constitutional council

The National Consensus Commission’s talks with major political parties have yielded a broad consensus on key issues such as caretaker government system and a bicameral parliament, but the parties remain divided on some sensitive questions.

11h ago