ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ৭ ইসরায়েলি গ্রেপ্তার

কৌঁসুলিদের অভিযোগ, এই সন্দেহভাজন গুপ্তচররা ইরানের পক্ষে প্রায় ৬০০ অভিযানে অংশ নিয়েছেন। এসব অভিযানের লক্ষ্য ছিল সংবেদনশীল সামরিক ও অন্যান্য অবকাঠামো সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস এবং গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের চিহ্নিত করে ইরানের কাছে ‘সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু’ হিসেবে উপস্থাপন করা।

ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সাত ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেট।

গতকাল সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও ইরানের কাছে ফাঁস

গোলানি ব্রিগেডের সেনা। ফাইল ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
গোলানি ব্রিগেডের সেনা। ফাইল ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

কৌঁসুলিদের অভিযোগ, এই সন্দেহভাজন গুপ্তচররা ইরানের পক্ষে প্রায় ৬০০ অভিযানে অংশ নিয়েছেন। এসব অভিযানের লক্ষ্য ছিল সংবেদনশীল সামরিক ও অন্যান্য অবকাঠামো সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস এবং গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের চিহ্নিত করে ইরানের কাছে 'সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু' হিসেবে উপস্থাপন করা।

তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে রামাত ডেভিড বিমানঘাঁটি, নেভাতিম বিমানঘাঁটি, গ্লিলট ও গোলানি ব্রিগেডের ঘাঁটির তথ্য ফাঁসের কথা বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে গোলানি ব্রিগেডের ঘাঁটিতে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলায় চার সেনা নিহত হন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলেন, 'সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা তাদের সূত্রদের কাছ থেকে গোলানি ব্রিগেডের ঘাঁটিসহ কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি স্থাপনার মানচিত্র পেয়েছিলেন।'

সাত গুপ্তচরের পরিচয় ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

এই সাত সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা হাইফা ও হাইফার উপকূলীয় শহরতলীর হাজেরি গোত্রের সদস্য। এই ইহুদি-ইসরায়েলি নাগরিদের কেউ কেউ একে অপরের আত্মীয় এবং তাদের মধ্যে অন্তত একজন 'নিখোঁজ' সেনাও রয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, সাত জনের মধ্যে দুই জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তারা প্রায় ৩৫ দিন ধরে আটক আছেন।

এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হবে। অভিযোগের মধ্যে 'যুদ্ধকালীন সময় শত্রুকে সহযোগিতা' করার অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর (আইএসএ) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সোমবার জানান, সন্দেহভাজনদের কার্যক্রমে 'রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় ক্ষতির মাত্রা নজিরবিহীন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এর আগে কোনো গুপ্তচর এত বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি বলে মত প্রকাশ করেছে পুলিশ। 

'এই তদন্তে এটাই প্রকাশ পেয়েছে যে ইরানের গোয়েন্দা বাহিনী সুনির্দিষ্ট উদ্যোগে ইসরায়েলি নাগরিকদের কাজে লাগিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে, এবং এই তথ্য কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে', যোগ করে পুলিশ।

পুলিশ আরও জানায়, এই সাত গুপ্তচর সারাদেশে আইডিএফের বিভিন্ন ঘাঁটিতে নজরদারি অভিযান চালিয়েছে। তাদের লক্ষ্যের মধ্যে ছিল বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর অবকাঠামো, বন্দর, আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও জ্বালানি অবকাঠামো।

পুলিশের মতে, অসংখ্য ইসরায়েলি নাগরিকের বিরুদ্ধেও গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছেন এই সাত ব্যক্তি। ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কিছু নাগরিককে চিহ্নিত করেন, যাদের কে 'ক্ষতি করার' পরিকল্পনা করছিল ইরান। এই ব্যক্তিদের ওপর নজরাদারি চালাতে যেয়েই কয়েকজন কথিত গুপ্তচর ধরা পড়েন।

টাকার লোভে গুপ্তচরবৃত্তি

ছবি: রয়টার্স

পুলিশের ধারণা, সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা টাকার লোভেই এ কাজে জড়িয়েছেন।

অভিযানের ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী তারা পারিশ্রমিক পেতেন।

'আলখান' ও 'ওরখান' নামে দুই ইরানি গোয়েন্দা এজেন্টের সঙ্গে তারা কাজ করতেন। স্বভাবতই, এগুলো ছদ্মনাম।

দুই বছর আগে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয় এই সাতজনের।

অভিযোগ মতে, গুপ্তচরদের হাজারো ডলার পারিশ্রমিক দিয়েছে ইরান। ইসরায়েল ভ্রমণে যাওয়া রুশ নাগরিকরা ইরানের পক্ষ থেকে এই অর্থ নিয়ে এসে তাদের হাতে তুলে দিতেন বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এই তদন্তে সংশ্লিষ্ট অনেক নথি খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে পুলিশ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোশে আরবেল জানান, 'যারা ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছে, তারা নাগরিকত্ব হারাবেন।'

 

Comments

The Daily Star  | English
protesters attempt to break Bangabhaban barricade

Protesters clash with law enforcers in front of Bangabhaban; 5 hurt as police detonate stun grenade

A group of protesters attempted to break through the security barricade in front of Bangabhaban around 8:30pm

2h ago