মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যত খুঁটিনাটি

এবারের নির্বাচনে লড়ছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো শক্তিশালী দুই প্রার্থী। ছবি: এএফপি/কোলাজ
এবারের নির্বাচনে লড়ছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো শক্তিশালী দুই প্রার্থী। ছবি: এএফপি/কোলাজ

আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কীভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর থাকছে এই প্রতিবেদনে।  

কে প্রার্থী হতে পারবেন

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে, বয়স হতে হবে অন্তত ৩৫ বছর এবং অন্তত ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে। তবে মার্কিন সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য শেষ শর্তটি প্রযোজ্য না।

প্রার্থীর যোগ্যতা

ভক্তদের উদ্দেশয়ে হাত নাড়ছেন ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স
ভক্তদের উদ্দেশয়ে হাত নাড়ছেন ট্রাম্প। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের ডেপল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েন স্টেগার ডয়চে ভেলেকে বলেন, 'প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় যেকোনো নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন।' এমনকি আদালতে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিরও প্রার্থী হতে বাধা নেই। রাজনৈতিক বন্দিরা যেন প্রার্থী হওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য মার্কিন সংবিধানে আলাদা নীতির উল্লেখ আছে বলে জানান স্টেগার।

তবে মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, রাজনৈতিক পদে থাকা কোনো ব্যক্তি দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যুক্ত হলে বা শত্রুদের সাহায্য করলে তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন না।

প্রাইমারি ও ককাস কী

গাড়ির শোরূমও ভোটকেন্দ্র। ছবি: ডয়চে ভেলে
গাড়ির শোরূমও ভোটকেন্দ্র। ছবি: ডয়চে ভেলে

এই দুই পদ্ধতির মাধ্যমে দলগুলো তাদের প্রার্থী বাছাই করে৷ নির্বাচনী বছরের শুরুতে রাজ্য পর্যায়ে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। স্বাধীনভাবে কেউ প্রার্থী না হলে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের অধীনে তাকে নিজ রাজ্যে নিবন্ধন করতে হয়।

প্রাইমারিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অঙ্গরাজ্যগুলোতে দলের প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ককাস প্রক্রিয়াটি একটু জটিল৷।এই প্রক্রিয়ায় রাজ্যগুলোতে দলের সদস্যরা একত্র হন। সেখানে তারা ভোট দিয়ে প্রার্থী বাছাই করেন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের প্রাইমারি ও ককাসের ফল যোগ করে শেষে একজন প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। সেই প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

জাতীয় কনভেনশনের ভূমিকা কী

নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বারে বসে বিয়ার খাচ্ছেন কমলা। ছবি: রয়টার্স
নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে বারে বসে বিয়ার খাচ্ছেন কমলা। ছবি: রয়টার্স

রাজ্য পর্যায়ে প্রাইমারি ও ককাস শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ও তার রানিংমেট বা ভাইস-প্রেসিডেন্ট নাম ঘোষণা করে।

কনভেনশনে দেশের ৫০টি অঙ্গরাজ্য থেকে আসা ডেলিগেটরা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দেন। একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন পেতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে হয়। ডেলিগেটদের মধ্যেও দুটি ভাগ থাকে। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং অপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডেলিগেট৷।প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডেলিগেটরা রাজ্য পর্যায়ে প্রাইমারিতে জিতে আসাদেরই শুধু ভোট দিতে পারেন। অন্যদিকে অপ্রতিশ্রুতিবদ্ধরা নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে ভোট দিতে পারেন।

গত জুলাইয়ে জো বাইডেন নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন। সেসময় ডেমোক্র্যাট ডেলিগেটরা যারা আগে বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন তারা জাতীয় কনভেনশনে প্রার্থীদের যে কাউকে বেছে নেওয়ার সুযোগ পান। কেননা প্রাইমারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে প্রার্থীকে তারা বেছে নিয়েছিলেন তিনি আর নির্বাচনে লড়ছেন না। তবে সিংহভাগ ডেলিগেট হ্যারিসকেই ভোট দেন। যে কারণে তিনিই দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন।

নির্বাচনে কী ঘটে

জাতীয় কনভেনশনের পরই নির্বাচনের উত্তাপ শুরু হয়। নির্বাচনের দিন দেশজুড়ে কয়েক হাজার শহরে ভোটগ্রহণ চলে। নিবন্ধিত যেকোনো মার্কিন নাগরিক ভোট দিতে পারেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ

এবারের নির্বাচনে লড়ছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো শক্তিশালী দুই প্রার্থী। প্রতীকী ছবি: রয়টার্স
এবারের নির্বাচনে লড়ছেন কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো শক্তিশালী দুই প্রার্থী। প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ধারিত হয় 'ইলেক্টোরাল কলেজ' এর মাধ্যমে। এই ব্যবস্থায় ৫৩৮ জন ইলেক্টর নির্বাচিত হন। তারাই শেষে নির্ধারণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি থাকে। কংগ্রেসের উভয় কক্ষ মিলিয়ে যেকোনো রাজ্যের প্রতিনিধি সংখ্যাই হলো তার ইলেক্টরদের সংখ্যা। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি রাজ্যের প্রতিনিধি সংখ্যা নির্ভর করে তার মোট জনসংখ্যার উপর। অপর দিকে সিনেটে প্রতিটি রাজ্যের দুটি করে আসন থাকে। সব মিলিয়ে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মোট ৪৩৫ জন রিপ্রেজেন্টেটেটিভ ও ১০০ জন সিনেটর থাকেন। এর বাইরে রাজধানী ওয়াশিংটন (ডিসট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া) থেকে তিনজন ইলেক্টর থাকে। এ সব মিলিয়ে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৩৮ জন। ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তাই সেখানে সর্বোচ্চ ৫৪ ইলেক্টোরাল ভোট থাকে। আর ভারমন্টে সবচেয়ে কম, মাত্র তিনটি।

নির্বাচনে জিততে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অন্তত ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়।

মেইন আর নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি রাজ্যগুলোতে 'উইনার টেকস অল' নিয়মে ইলেক্টোরাল ভোট নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ, একটি রাজ্যে যেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তার ভাগেই যাবে সেই রাজ্যের সবকটি ইলেক্টোরাল ভোট।

Comments

The Daily Star  | English

Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

40m ago