শাহজাদপুরের মুড়ি ভর্তা: অনন্য স্বাদ আর সাধ্যের মেলবন্ধন

শাহজাদপুরের মুড়ি ভর্তা
ছবি: আয়মান আনিকা

কল্পনা করুন, আপনি মশলা মাখা একমুঠো মুচমুচে মুড়ি মুখে দিলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই মুড়ি মাখার টক-ঝাল স্বাদ আর সরিষার তেলের ঝাঁঝালো গন্ধ আপনাকে নিয়ে গেল অন্য জগতে। মুড়ি ভর্তা হিসেবে পরিচিত এই খাবারটি এমনই, যেখানে থাকে নানা স্বাদের সংমিশ্রণ।

অতি সাধারণ কিন্তু মশলাদার এই খাবারটির মূল উপাদান মুড়ি। যার সঙ্গে থাকে বিভিন্ন ধরনের মশলার সম্মিলন। ভিন্নধর্মী স্বাদ মুড়ি ভর্তাকে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম স্ট্রিট ফুডে পরিণত করেছে। বিশেষ করে যারা মশলাদার খাবার পছন্দ করেন, তাদের জিহ্বায় রীতিমতো স্বাদের নাচন তোলে মুড়ি ভর্তা।

ঢাকার শাহজাদপুরের ঝিল পাড় খাবারের গাড়ি বা ফুডকার্টে ভরপুর। এখানে আপনি পাবেন মুচমুচে ফুচকা থেকে শুরু করে গরম গরম মোমো। তবে এসব কিছুর বাইরে স্বাদে অভিনবত্ব নিয়ে মুড়ি ভর্তা মন কেড়ে নেবে।

ঝিল পাড়ের নিয়মিত গ্রাহক সানজিদা।

তিনি বললেন, 'আমি সবসময়ই মশলাদার খাবার খেতে পছন্দ করি। কিন্তু ঝিল পাড়ের মুড়ি ভর্তার স্বাদ একদম অন্যরকম। তারা আপনার সামনেই বিভিন্ন উপকরণ মেশাবে, যার মধ্যে থাকবে ঝাল ঝাল মরিচ আর লেবুর খোসা। দুইয়ে মিলে স্বাদ দাঁড়ায় একদম স্বর্গীয়।'

এখানকার মুড়ি ভর্তা অনন্য হয়ে উঠেছে এর স্বাদের সামঞ্জস্যের কারণে। মচমচে মুড়িগুলো মরিচের ঝাল আর সরিষার তেলের ঝাঁজ শুষে নিয়ে কিছুটা নরম হয়ে যায়। যখনই আপনি চিবোবেন, আদার ভিন্ন স্বাদ আর ধনেপাতার সতেজতার সঙ্গে মিশে যাবে লেবুর রস। সব মিলিয়ে একটা বহুমাত্রিক স্বাদ অনুভব করবেন। মুড়ি ভর্তায় ব্যবহার করা প্রতিটি উপকরণের স্বাদের আলাদা ভূমিকা আছে, যা মুখের মধ্যে মিশে চমৎকার অনুভূতি তৈরি করে।

যে মশলাগুলোর কথা বললাম সেগুলো তো মুড়ি ভর্তার সাধারণ উপকরণ। কিন্তু যারা আরেকটু ভিন্ন স্বাদ চেখে দেখতে চান তাদের জন্য দেওয়া হয় আলাদা কিছু বিশেষ উপকরণ। যেমন- ডিম মুড়ি ভর্তা, যেখানে মুড়ি ভর্তার সঙ্গে যোগ করা হয় সেদ্ধ ডিম। এটি খাবারটির স্বাদকে বেশ সমৃদ্ধ করে তোলে। মুড়ি ভর্তার অন্য মশলাগুলোর সঙ্গে ডিম মিলেমিশে দারুণ ফ্লেভার তৈরি করে। সেইসঙ্গে মশলাদার এই খাবারটিকে করে তোলে পুষ্টিকরও।

আরেকটি আছে মুরগি মুড়ি ভর্তা। এতে মুড়ির সঙ্গে মেশানো হয় মশলা মাখিয়ে রান্না করা মুরগি। মাংসটা ভর্তা করে মিশিয়ে দেওয়া হয় মুড়ির সঙ্গে। মুড়ি ভর্তার নিয়মিত মশলাগুলোর সঙ্গে চমৎকারভাবে মিশে যায় মুরগির স্বাদ। ভোজনরসিকদের কাছে এর স্বাদ অতুলনীয়।

মুড়ি ভর্তার সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এটি দারুণ সাশ্রয়ী। সে কারণে যার যখন ইচ্ছা, অল্প খরচেই মুখরোচক এই খাবারটির স্বাদ নিতে পারছেন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষ, হালকা ক্ষুধা মিটাতে হাতে তুলে নেন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই স্ট্রিট ফুডটি।

সাধারণ মানের মুড়ি ভর্তার দাম শুরু হয় ৪০ টাকা থেকে। ডিম বা মুরগি কিংবা অন্য কোনো উপাদার যুক্ত হলে এই দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্তও উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে ভর্তার সঙ্গে যুক্ত হয় আস্ত মুরগি বা গোটা একটা হাঁস।

অর্থাৎ ঝিল পাড়ের এই মুড়ি ভর্তার দোকানে সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে। আপনি যদি হয়ে থাকেন এমন একজন যে নতুন নতুন খাবারের স্বাদ নিতে ভালোবাসেন কিংবা ভিন্ন স্বাদের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করেন তাহলে ঢাকা-স্টাইলের এই মুড়ি ভর্তা আপনার পছন্দের তালিকার উপরের দিকেই থাকবে।

মুড়ির সঙ্গে তাজা মশলা আর ডিম, মুরগি কিংবা কালাভুনার মিশ্রণ খাবারটির স্বাদকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। কেউ যদি একটি কমফোর্ট ফুডের খোঁজে থাকেন, তাহলে এটি তাই।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Trump says Iran has 'maximum' two weeks, dismisses Europe peace efforts

Israel's war with Iran entered its second week on Friday with the Israeli military chief warning of a "prolonged campaign"

44m ago