মুনতাহা অপহরণ-হত্যা: ৪ আসামি ৫ দিনের রিমান্ডে

মুনতাহা। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের কানাইঘাটে ছয় বছর বয়সী শিশু মুনতাহা অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪ আসামির ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ সোমবার দুপুরে সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী মো. আবু জাহের বাদল এ আদেশ দেন।

কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামিরা হলেন—কানাইঘাট উপজেলার বীরদল ভাড়ারীফৌদ গ্রামের আলিফজান (৫৫), তার মেয়ে ও মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষক শামীমা বেগম মার্জিয়া (২৫), একই এলাকায় ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও নাজমা বেগম (৩৫)।

মুনতাহা হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার সাবেক গৃহশিক্ষক মার্জিয়া বেগমকে চুরি অপবাদ দেয়াকে অন্যতম কারণ হিসেবে প্রাথমিক সন্দেহ করছেন মুনতাহার পিতা শামীম আহমেদ ও পুলিশ।

শামীম আহমদ বলেন, 'মার্জিয়া মুনতাহাকে মাস চারেক আগে পড়ানো শুরু করলেও কিছুদিন পর তিনি পড়ানো বন্ধ করে দিলে আমরাও পড়াতে না করে দিই। মার্জিয়া প্রায়ই মুনতাহার কাপড় কাউকে না বলে নিয়ে যে ফেলে দিতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতে এত দাবি কাপড় বাচ্চাদের পরানো ঠিক না।'

তিনি বলেন, 'মাঝে মুনতাহার হারানো কাপড় মার্জিয়ার বাড়িতে পাওয়া যায়। জিজ্ঞেস করলে সে চুরির অভিযোগ অস্বীকার করতো, বলত কে নিয়েছে সে জানে না। মুনতাহা নিখোঁজের পরও মার্জিয়া একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসেছে। তার আচরণে মনে হয়নি সে মুনতাহাকে হত্যা করেছে।'

শামীম অভিযোগ করে বলেন, 'একসময় চাঁদা তুলে ঘর বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেই উপকারের প্রতিদান হিসেবে আমার মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আমি চাই, আমার মেয়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।'

এদিকে আটককৃত আসামিদের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যার কারণ হিসেবে একইরকম কারণ পেয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনো দেয়নি পুলিশ।

ওসি মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, 'বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সব আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি এর মধ্যে হত্যার মূল কারণ উদঘাটন সম্ভব হবে।'

ভাড়ারীফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের ৬ বছরের মেয়ে মুনতাহা আক্তার জেরিন গত ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হয়। সেদিন দুপুরে বাবার সঙ্গে ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে বাইরে খেলতে যাওয়ার পর থেকে আর তাকে পাওয়া যায়নি।

সেদিন কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা। দুদিন পর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণের একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।

গত শনিবার সন্দেহবশত মার্জিয়াকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিক কিছু তথ্যপ্রাপ্তির পর স্থানীয়দের সহায়তায় মুনতাহার মৃতদেহের সন্ধান শুরু হয় তার বাড়ির আশেপাশে।

রোববার ভোর ৪টার দিকে স্থানীয়রা মার্জিয়ার মা আলিয়াজানকে রাস্তা অতিক্রম করতে দেখে আটক করেন। পরে আলিয়াজানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মার্জিয়ার চাচার পুকুরে কাদার মধ্য থেকে মুনতাহার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যার পর প্রথমে মার্জিয়াদের বাড়ির পেছনে একটি নর্দমায় পুঁতে রাখা মরদেহ সেই রাতে তুলে এসে পুকুরে ফেলে দেন আলিয়াজান। পরে আলিয়াজান ও তার মেয়ের দেওয়া তথ্যমতে আরও দুইজনকে আটক করে পুলিশ।

মুনতাহার মরদেহ উদ্ধারের খবরে তাদের বাড়িতে হাজারো মানুষের ভিড় জমে এবং বেদনাদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একসময় উত্তেজিত মানুষজন মার্জিয়াদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে দেন।বিকেলে স্থানীয় মসজিদে মুনতাহার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia returns home from London

Khaleda Zia, accompanied by her two daughters-in-law Zubaida Rahman and Syeda Sharmila Rahman, is now on way to her Gulshan residence

1h ago