স্কুলশিক্ষার্থী আহনাফ অপহরণ-হত্যা: আদালতে তিন আসামির জবানবন্দি

পুলিশ-ছাত্রদল সংঘর্ষ
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ফেনীতে স্কুলশিক্ষার্থী আহনাফকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল শুক্রবার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা বলেন, অপহরণের ঘটনা জানাজানি হলে ধরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে তারা স্কুল শিক্ষার্থীকে হত্যা করে।

ফেনীর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদের আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়।

গত ৮ ডিসেম্বর রাত সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্কুলশিক্ষার্থী আহনাফ আল মাঈন ওরফে নাশিতকে (১০) ফেনী শহরের বিরিঞ্চি আতিকুল আলম সড়ক এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ফেনী সদর উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ রেললাইনের পাশে একটি ডোবা থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

আহনাফ ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের মাঈন উদ্দিন সোহাগের ছেলে ও শহরের আতিকুল আলম সড়কের গ্রামার স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা এসব তথ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন ।

পুলিশ জানায়, শিশু শিক্ষার্থী আহনাফকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি আশরাফ হোসেন চৌধুরী ওরফে তুষার (২০), মো. মোবারক হোসেন ওয়াসিম (২০) ‌এবং ওমর ফারুক রিফাত (২০) গতকাল সন্ধ্যায় জবানবন্দি দেয়।

আসামি আশরাফ হোসেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নিজপানুয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন চৌধুরীর ছেলে ও ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

আশরাফ একজন সক্রিয় ছাত্রদল কর্মী হিসেবে পরিচিত।

আসামি মোবারক হোসেন ফেনী পৌরসভার বারাহিপুর এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে ও পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক এবং আসামি ওমর ফারুক লক্ষীপুর জেলার কামালপুর এলাকার বাসিন্দা মো. শাহ আলমের ছেলে।

আসামিরা পুলিশকে জানায়, গত ৮ ডিসেম্বর আহনাফকে শহরের একাডেমি এলাকায় একটি কোচিং সেন্টার থেকে কোচিং শেষ করে বাসায় ফেরার পথে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারীরা তাকে ফেনী সদর উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় নিয়ে যায়। তাকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়। রাত ১টার দিকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে ছেলেকে অপহরণ ও মুক্তিপণ হিসেবে তার বাবা মাঈন উদ্দিনের কাছে ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তার বাবা টাকা দিতে রাজী হন এবং টাকা জোগাড় করতে শুরু করেন।

তবে শিশু আহনাফকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিলে অপহরণের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাবে ভেবে তারা তাকে শ্বাসরোধ হত্যা করে। পরে লাশ ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়।

অপর দিকে অপহরণ চক্রের মূল হোতা আশরাফ তার ফেসবুক আইডিতে আহনাফকে খুঁজতে একাধিক পোস্ট দেন এবং আহনাফের বাবার ফেসবুকে করা আবেদনও তিনি তার ফেসবুকে শেয়ার দেন। আহনাফকে খুঁজতে তার বাবাকে সহযোগিতা ও নানা পরামর্শ দেন তিনি।

এক পর্যায়ে শিশু আহনাফের বাবার সন্দেহ হলে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান।

ফেনী থানা পুলিশ বুধবার রাতে আশরাফ হোসেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন এক পর্যায়ে আশরাফ ওই শিশু আহনাফকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং তার সহযোগীদের নাম বলেন। পুলিশ এরপর মোবারক হোসেন ওয়াসিম ও ওমর ফারুক রিফাতকে আটক করেন।

ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানান, আসামি আশরাফের দেওয়া তথ্য মতে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় রেললাইনের পাশের ডোবা থেকে শিশু আহনাফের লাশ উদ্ধার করেন তারা।

তিনি বলেন, যে মোবাইল ফোন থেকে শিশু আহনাফের বাবাকে ১২ টাকা দেওয়ার জন্য বার্তা দেওয়া হয়েছে পুলিশ ওই ফোনের মালিক শহরের একজন মহিলাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন- মোবাইল ফোনটি গত ৫ আগষ্ট সন্ধ্যায় তার বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা লুটপাট করে নিয়ে যায়। ওই মোবাইল ফোন অপহরণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

এদিকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন জানায়, শিশু অপহরণ ও হত্যা মামলার আসামি আশরাফুল নিজে ছাত্রদলের কর্মী দাবি করে ফেসবুক আইডিতে নানা ছবি পোস্ট করলেও সে ছাত্রদলের কোনো কমিটিতে নেই।

তিন আসামিকে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh trade deficit July-August FY25

Trade deficit narrows 2.6% in July-April

The country’s trade deficit narrowed by 2.60 percent in the first ten months of the current fiscal year compared to the same period a year ago, thanks to a rise in export earnings coupled with subdued imports..During the July-April period of fiscal year (FY) 2024-25, the trade gap was $18.

4h ago