রপ্তানিতে টানা পতন, পাটশিল্পে বড় ধাক্কা

পাট
ছবি: এমরান হোসেন/স্টার ফাইল ফটো

আপাতদৃষ্টিতে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। দেশে বাধ্যতামূলক পাটের মোড়ক ব্যবহারের আইন বাস্তবায়নের গতিও ধীর। সব মিলিয়ে চাহিদা কম থাকায় পাটকল ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, 'সোনালি আঁশ' হিসেবে পরিচিত পাটের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) ৭৭ কারখানার মধ্যে মাত্র দুই ডজন কারখানা পুরোদমে চালু আছে। ফলে পাটের সুতার উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশ।

বিজেএসএর চেয়ারম্যান তাপস প্রামাণিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ খাতের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা অনেক চেষ্টা করছি। হাতে গোনা কয়েকটি কারখানা এখন ভালোভাবে চলছে।'

পাটের সুতা এ খাতের প্রধান রপ্তানি পণ্য। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার পাটের সুতা রপ্তানির পর থেকেই চালান কমছে।

কাঁচা পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাটের সুতার দাম বেশি। তাই অনেক বিদেশি ক্রেতা তুলার সুতা ও পলিপ্রোপিলিনের (পিপি) দিকে ঝুঁকেছেন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে এই প্রাকৃতিক সুতা থেকে সামগ্রিক রপ্তানি আয় ৪৯২ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

এই বছরগুলোয় পাটের বস্তা ও ব্যাগের রপ্তানিও কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় ৮৫৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। আগের বছরের তুলনায় ছয় শতাংশ কম।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ কমে ৩৪১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তাপস প্রামাণিক বলেন, 'কম্পোজিট কারখানাগুলোর অবস্থাও ভালো নয়।'

তার মতে, 'বিশ্ববাজারে আমরা ধীরে ধীরে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছি। আমরা ভারতে রপ্তানি করতাম। ভারত সরকার অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের পর সেখানে রপ্তানি কমেছে।'

'কাঁচা পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাটের সুতার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ খাত অতীতের মতো নীতিগত সহায়তা পায়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'বাধ্যতামূলক পাটমোড়ক আইন দেশের বাজারে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে আমরা এই মন্দা সময় পার করতে পারতাম।'

চাল, গম, ভুট্টা, ডাল ও আটাসহ ১৯ নিত্যপণ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য পাটের বস্তা বাধ্যতামূলক করে ২০১০ সালে আইন করে সরকার।

যাহোক, চাল কলের আইন মেনে চলা শুরু করতে পাঁচ বছর লেগেছিল। অনেকে তখন থেকে প্লাস্টিকের ব্যাগের দিকে ঝুঁকে আছেন।

বিজেএসএর চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা দেশের বাজারে প্লাস্টিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি।'

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক ঋণের কারণে বেশিরভাগ কারখানা ন্যূনতম কার্যক্রম বজায় রাখতে উৎপাদন অনেক কমিয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ পাটকল সমিতির মহাসচিব আব্দুল বারিক খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রপ্তানি কমলেও আমাদের কিছু নির্দিষ্ট খরচ আছে। বর্তমান আয় থেকে কোনো রকমে ব্যাংক ঋণের সুদ মেটাচ্ছি।'

মজুদদাররা কাঁচা পাটের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা আগে উচ্চ দামের জন্য পাটের খারাপ ফলনকে দায়ী করেছিলেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পাট উৎপাদন ১৮ শতাংশ কমে ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার বেলে (এক বেল প্রায় ১৮২ কেজি) নেমেছে।

কল মালিকরা পাটের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করে বস্তা, ব্যাগ, সুতা ও সুতলি উৎপাদন করে প্রধানত রপ্তানি বাজারের জন্য।

দেশের শীর্ষ পাট রপ্তানিকারক জনতা-সাদাত জুট মিলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হেলাল আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সুতা উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচা পাট বিক্রি হচ্ছে প্রায় চার হাজার টাকায়।'

'রপ্তানিতে দাম কমছে। তুরস্ক ও উজবেকিস্তানে পাটের সুতার চাহিদা কমেছে। সেখানকার কার্পেট নির্মাতারা এখন পাটের সুতার বিকল্প খুঁজছেন। সার্বিকভাবে পাট শিল্পের অবস্থা ভালো নয়।'

হেলাল আহমেদ আরও বলেন, 'কেনাকাটায় প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে সরকারের উদ্যোগের পর সম্প্রতি দেশে পাটের ব্যাগের চাহিদা বেড়েছে। তবে সরকারের উচিত প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার সীমিত করার জন্য বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আসা যার ভিত্তিতে কারখানাগুলো উৎপাদনের পরিকল্পনা করতে পারবে।'

তিনি জানান, যে কারখানায় একসময় দিনে তিন শিফটে চলত, এখন এক শিফটে কমিয়ে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আগামী মৌসুমে পাটের চাষাবাদ বাড়তে পারে। উৎপাদন বাড়লে আগস্টের পর থেকে পাটশিল্পের সংকট কাটতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
IPO drought in Bangladesh 2025

One lakh stock accounts closed amid IPO drought in FY25

The stock market has almost closed the books on the fiscal year (FY) 2024-25 without a single company getting listed through an initial public offering (IPO), a rare event not seen in decades.

12h ago