২০২৪

ঝড় ঠেকাতে পারবে পোশাক শিল্প? লক্ষণ কী?

পোশাক শিল্প
স্টার ফাইল ফটো

দেশের পোশাক শিল্পের জন্য ২০২৪ সাল ছিল সংকটময়। আবার বাজার ফিরতে শুরু করায় নতুন করে আশার আলো দেখার বছরও।

বিদায়ী বছরটি আবারও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাকের শক্তিশালী অবস্থান প্রমাণ করেছে।

জ্বালানি ও ডলার সংকট, সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা, শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ঢিলেঢালা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি—এসবই বিদায়ী বছরে পোশাক প্রস্তুতকারকদের জন্য অভ্যন্তরীণ সংকট তৈরি করেছিল।

মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসায় এবং মহামারি ও ইউক্রেন-গাজা যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে বাজার ফেরার প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী শ্রমিক আন্দোলন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পশ্চিমের ক্রেতারা বাংলাদেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জুলাই থেকে নভেম্বরে দেশটির পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে এক হাজার ৬১১ কোটি ডলার হয়।

ওয়ালমার্ট-জর্জ, পুমা, এসপ্রিট ও জি-স্টারে পোশাক রপ্তানি করা ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক মাস আগের তুলনায় এখন ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে খুবই ইতিবাচক পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি।'

দেশের রপ্তানি আয়ের বেশিভাগ আসে পোশাক শিল্প থেকে। এই শিল্পে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন ও বর্ধিত মজুরি নিয়ে বছরটি শুরু হয়।

করোনা মহামারির পর বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এরপর আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্যে লোহিত সাগর সংকট ও সংঘাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এরপর জুনে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে পোশাক রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আন্দোলন দমাতে সরকার জুলাই ও আগস্টে ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ জারি করলে সার্বিক পরিস্থিতি আরও সংকটময় হয়ে উঠে।

এমন অবস্থায় পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া সময় মানতে ব্যর্থ হয় অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেককেই দেরিতে চালান পাঠানোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে পণ্যের দামে ছাড় দিতে হয়।

সরকার পতনের পর ঢাকার আশেপাশে প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোয় ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। তা চলে অক্টোবর পর্যন্ত। দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও উৎপাদন ও চালান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বেতন বাড়ানো ও বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করেন। ইতোমধ্যে ধুঁকতে থাকা কারখানাগুলোয় পোশাক তৈরি ব্যাহত হয়।

অস্থিরতা, ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের কারণে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, জিরানি ও জিরাবোর মতো বড় শিল্পাঞ্চলে বেশ কয়েকটি কারখানা কয়েক মাস বন্ধও ছিল।

গত সেপ্টেম্বরে পোশাক কারখানার মালিক, শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকরা মিলে আন্দোলনকারীদের ১৮ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেন।

ন্যূনতম মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট আগের পাঁচ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে নয় শতাংশ করেছে।

চলতি ডিসেম্বরে নতুন ইনক্রিমেন্ট কার্যকর হয়। শ্রম আইন সংশোধন ছাড়া অন্যান্য দাবিও পূরণ করা হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে আইনটি সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।

অনেকে ভেবেছিলেন অস্থিরতার পর উত্পাদন আবার শুরু হবে। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। যেমন, বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬ কারখানা থেকে ৪০ হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই হন।

বিদায়ী বছরে রপ্তানি তথ্য সংশোধন করা হয়। আগে ভুল গণনার কারণে রপ্তানি আয় অতিরঞ্জিত ছিল।

চূড়ান্ত হিসাব অনুসারে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে পোশাক খাতের আয় হয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হিসাব করেছিল ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদায়ী বছরটি সংকটময় ছিল। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে কার্যাদেশ ফিরে আসায় ব্যবসা পুনরুদ্ধারের বছরও এটি।'

তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে খুচরা বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কার্যাদেশ নিয়ে ফিরে আসছে।'

২০২৪ সালকে 'সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানির বছর' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিডিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ জব্বার ডেইলি স্টারকে জানান, তারা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক হারে কার্যাদেশ পাচ্ছেন।

তার মতে, 'এখন এই খাতের উন্নতির জন্য আমাদের আরও কাজ করা দরকার।'

তিনি পোশাক খাতের জন্য ইপিবির মতো পৃথক প্রতিষ্ঠান গড়া এবং আরও বাজার পেতে কৃত্রিম সুতা ও স্পোর্টসওয়্যার বিভাগে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন।

ব্যবসা বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান।

তিনি মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। এখনো ব্যবসার পরিবেশ স্বাভাবিক নয়।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসানের মতে, রাজনৈতিক ও শ্রমিক অসন্তোষ ছাড়াও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট এ খাতে বিনিয়োগ কমিয়েছে। ফলে এ বছর এ খাতে কাজের সুযোগ খুব বেশি হয়নি।

বিশ্বব্যাপী বিশেষায়িত পোশাকের চাহিদা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি ভালো দাম পেতে ও রপ্তানি বাড়াতে কৃত্রিম সুতায় আরও বিনিয়োগের পরামর্শ দেন।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago