কক্সবাজারে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হত্যা: খুলনার স্থানীয় দ্বন্দ্বকে দায়ী করল পরিবার

গোলাম রাব্বানী টিপু। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা নগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও খুলনা সিটির সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী টিপুকে গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে গুলি করা হত্যা করা হয়।

তার পরিবারের সদস্যদের দাবি, খুলনার স্থানীয় দ্বন্দ্ব, প্রাধান্য বিস্তার ও আধিপত্যের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে, এর পেছনে নির্দিষ্ট করে কারও নাম বলছেন না তারা।

কক্সবাজার সৈকতের সি গাল পয়েন্ট এলাকায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে গোলাম রাব্বানীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুলনা সিটি করপোরেশনের আরেক সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারসহ ২ জনকে আটক করেছে র‍্যাব-১৫। 

গোলাম রাব্বানীর বাড়ি খুলনা নগরীর দৌলতপুরের দেয়ানা উত্তর পাড়ায়। আজ শুক্রবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা ভিড় করেছেন। সহকর্মী সাবেক কাউন্সিলরদের কেউ কেউ এসেছেন। বাড়ির পাশে একটি কবরস্থানে তার দাফনের জায়গা নির্ধারণ করা হচ্ছে।

তবে, সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য সেখানে যাননি বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

তার বড় ভাই স্কুলশিক্ষক গোলাম রসুল বাদশা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাব্বানী আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল নির্বাচিত হন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ঢাকায় চলে যান।

তিনি বলেন, 'ঢাকায় থাকাকালে অনেকে তাকে ফোন করে বিভিন্ন টোপ বা প্রলোভন দিত। আমার ধারণা তাকে হত্যার আগে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে।'

'অনেকগুলো গ্রুপ এক হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল এবং তারাই তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষান্বিত। টিপু জীবিত থাকলে অন্য কেউ কাউন্সিলর হতে পারবে না, এটা অনেকেই জানত,' যোগ করেন তিনি।

গোলাম রসুল বলেন, '১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারসহ কয়েকজন তাকে টোপ দিয়ে কক্সবাজার নিয়ে যায়। হয়ত ব্যবসায়িক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাকে লোভ দেখিয়ে সেখানে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে শুটার দিয়ে হত্যা করা হয়।'

'যদি এটা পরিকল্পিত না হয়, তাহলে কিলার কীভাবে বুঝল যে আমার ভাই বাইরে বের হবে,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, গতকাল রাত ১০টার দিকে গোলাম রাব্বানীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা জানতে পারেন। 

'আমরা আসলে জানতাম না যে সে কোথায় ছিল। পরে নিশ্চিত হলাম আমার ছোট ভাই খুন হয়েছে,' বলেন বাদশা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গোলাম রাব্বানী টিপুরা তিন ভাই ও এক বোন। টিপু মেজো। বড় ভাই স্কুল শিক্ষক ও ছোট ভাই পারিবারিক গাড়ির ব্যবসা দেখাশোনা করেন। বাবা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। মা বেঁচে নাই।

ছাত্রজীবনে খুলনা বিএল কলেজে ছাত্র মৈত্রীর সক্রিয় কর্মী ছিলেন গোলাম রাব্বানী টিপু। তিনি কক্সবাজারে লবণ ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন খুলনা অঞ্চলে জমির ব্যবসা করেন। 

তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে সপ্তম শ্রেণী ও মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর গোলাম রাব্বানী এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। তার সঙ্গে সবসময় লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র থাকত।

স্থানীয় দৌলতপুর এলাকার এক বাসিন্দা নাম না প্রকাশ করা শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তার জীবনযাপন স্বাভাবিক ছিল না। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সবসময় তিনি গানম্যান নিয়ে ঘুরতেন। বিভিন্ন লোকের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।'

কক্সবাজার পুলিশ জানায়, গতকাল গুলিবিদ্ধ গোলাম রাব্বানীকে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পকেটে থাকা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে তার পরিচয় জানা যায়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া মুখপাত্র) জসিম উদ্দিন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাবেক কাউন্সিলরকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। কারণ কক্সবাজারে তার কোনো শত্রু থাকার কথা নয়।'

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, রাব্বানীকে হত্যার ঘটনায় ইফতেখারকে আটক করা হয়েছে। ইফতেখার ও নিহত গোলাম রব্বানী টিপু বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে আসেন।

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

3h ago