ঠাকুরগাঁওয়ে রেল সেবার মানবৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি

ঠাকুরগাঁওয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি। ছবি: সংগৃহীত

রেলপথে সেবার মানবৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি ও যাত্রী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার দুপুর ১টার দিকে ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে 'যাত্রী অধিকার আন্দোলন' এ কর্মসূচি পালন করে।

যাত্রী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যাত্রী অধিকার আন্দোলনের মুখপাত্র মাহাবুব আলম, উদীচী ঠাকুরগাঁও সংসদের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক, সাবেক রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শামসুল হক প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁও বেশ পিছিয়ে। বিগত সরকারের সময় আশা জাগালেও রেল সেবা এখনও কাঙ্ক্ষিত জায়গায় যেতে পারেনি। রেল স্টেশনে অবকাঠামোর সংকট, টিকিট স্বল্পতার পাশাপাশি কালোবাজারিসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া স্টেশনের প্লাটফর্মে ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ট্রেনে কাটা পড়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।

গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা তারেক পারভেজ (৫০) তার স্ত্রী ও মেয়েকে একতা এক্সপ্রেসে উঠিয়ে দিয়ে নামার সময় ট্রেন ও প্লাটফর্মের মধ্যকার ফাঁকা জায়গায় পড়ে যান। এ ঘটনায় রেলে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এর আগে ২০২২ সালের ১৪ মে ছেলে ও পুত্রবধূকে ট্রেনে তুলে দিয়ে নামতে গিয়ে কাটা পড়েন উত্তর ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা রশিদা বেগম (৫৫)। ২০২২ সালের ১০ আগস্ট একইভাবে নামতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়েন আরমান আলী নামে এক যুবক। প্লাটফর্মের ত্রুটির কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনের সাবেক স্টেশন মাস্টার শামসুল হক বলেন, 'ট্রেন ছাড়ার আগে লম্বা একটা হুইসেল বাজানোর প্রচলন ছিল দীর্ঘদিন ধরে। এতে যাত্রী ও তাদের স্বজনরা সতর্ক হতেন। কিন্তু এখন সেই হুইসেল দেওয়া হয় না। ট্রেন হুট করে চলতে শুরু করে। এতে যাত্রী দ্রুত ট্রেনে উঠতে গিয়ে বা নামতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।'

দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি সোহেল রানা বলেন, 'দিনদিন যাত্রীদের কাছে রেলভ্রমন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনে টিকিট স্বল্পতা রয়েছে। আবার এসব টিকিটও চলে যাচ্ছে কালোবাজারির হাতে। ফলে বেশি টাকা দিয়ে যাত্রীদের টিকিট কিনতে হচ্ছে।'

যাত্রী অধিকার আন্দোলনের মুখপাত্র মাহাবুব আলম বলেন, 'ঠাকুরগাঁও রোড রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের কাঠামোগত ত্রুটির কারণে কোনো না কোনো দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠানামা করছেন যাত্রী ও তাদের স্বজনরা। ট্রেনের বগির দরজা থেকে প্লাটফর্ম নিচু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পরে শিশু, নারী ও বয়স্করা।'

তিনি জানান, এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানাতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। আগামী শনিবার গণস্বাক্ষর সম্বলিত দাবি রেল উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে।

যাত্রী সমাবেশে ঠাকুরগাঁওয়ের রেলসেবার মানোন্নয়নে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন বক্তারা।

দাবিগুলো হলো—

১. দুর্ঘটনারোধে রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম ও বগির উচ্চতা সমান করতে হবে।

২. রেলস্টেশনের প্লাটফর্ম ও বগির ফাঁকা জায়গাটি কমিয়ে আনতে হবে।

৩. ট্রেনের বিরতির সময় তিন মিনিট থেকে বাড়িয়ে পাঁচ মিনিট করতে হবে।

৪. সতর্কতা হুইসেল দেওয়ার অন্তত ৩০ সেকেন্ড পর ট্রেন ছাড়তে হবে।

৫. ট্রেনের বগির নম্বর সঠিক স্থানে টাঙাতে হবে।

৬. ট্রেনে উঠা-নামার সময় যাত্রীরা যে দুর্ঘটনায় পড়েন, তা মাইকে নিয়মিত প্রচার করতে হবে।

৭. রাতে রেলস্টেশনে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. এক নম্বর থেকে দুই নম্বর প্লাটফর্মে যাতায়াতের জন্য উড়াল সেতু নির্মাণ করতে হবে।

৯. রেলস্টেশনে আসার পাকা সড়কটি সংস্কার করতে হবে।

১০. টিকিট কালোবাজারি বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
US tariffs impact on Bangladesh economy

Can Bangladesh ride out the wave of US tariffs?

Trump's announcement sent businesses scrambling. Orders froze. Buyers demanded discounts. Stock markets plummeted.

11h ago