রমজানে যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলের সম্মতি, হামাস চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি

উত্তর গাজার জাবালিয়ায় প্রথম রমজানের ইফতার করতে বসেছেন ফিলিস্তিনি মুসলিমরা। ছবি: এএফপি
উত্তর গাজার জাবালিয়ায় প্রথম রমজানের ইফতার করতে বসেছেন ফিলিস্তিনি মুসলিমরা। ছবি: এএফপি

আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কোনো ঐক্যমত্য না হলেও, এখুনি হামলায় যাচ্ছে না তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে রমজান মাসে যুদ্ধ বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। 

আজ রোববার এএফপি ও টাইমস অব ইসরায়েল এই তথ্য জানিয়েছে।

অপরদিকে, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস গাজার যুদ্ধবিরতির চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে। পূর্ব আলোচনা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে চলমান যুদ্ধ স্থায়ীভাবে নিরসনের কথা বলা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

উত্তর গাজার জাবালিয়ায় প্রথম রমজানের ইফতার তৈরি করছেন ফিলিস্তিনি মুসলিম নারীরা। ছবি: এএফপি
উত্তর গাজার জাবালিয়ায় প্রথম রমজানের ইফতার তৈরি করছেন ফিলিস্তিনি মুসলিম নারীরা। ছবি: এএফপি

হামাস নেতা মাহমুদ মারদাউই এক বিবৃতিতে জানান, 'এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ও বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে একমাত্র পথ হল চুক্তির বাস্তবায়ন—(যুদ্ধবিরতি চুক্তির) দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা (এই প্রক্রিয়া) শুরু হতে পারে।'

তবে ইতোমধ্যে ইসরায়েল জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়নে তারা আপাতত আগ্রহী নয়।

বরং প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশ মেনে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে সম্মতি দিয়েছে দেশটি।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়নের মাধ্যমে গাজা যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের ফর্মুলা দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে তেমন কোনো আলোচনা-সমঝোতা ছাড়াই পেরিয়ে যায় ছয়টি সপ্তাহ।

কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের আলোচনা ও দরকষাকষি তেমন একটা এগোয়নি।

যার ফলে গাজায় আটকে থাকা বাকি জিম্মি ও ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির ভাগ্য এখনো অনিশ্চয়তায় ঘেরা।

বর্ধিত প্রথম ধাপের শর্ত

রমজান মাসকে সামনে রেখে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের কাছ থেকে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় নিশ্চিত করেছে, এই প্রস্তাবে মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাস (মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে) এবং এর পর মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধে বিরতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ইসরায়েলের বিবৃতি মতে, প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর শর্ত হল, বর্ধিত মেয়াদের প্রথম দিনেই গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি পাবেন। যদি দ্বিতীয় ধাপ বা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়, তাহলে এই ধাপের শেষ দিন বাকি জিম্মিরা মুক্তি পাবেন। 

তবে হামাস প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করেছে। যার ফলে, বিষয়টি নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে"

বিশ্বনেতাদের হুঁশিয়ারি, অনুরোধ

বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নতুন করে যুদ্ধও শুরুর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি জানিয়েছে। ১৫ মাসের যুদ্ধে গাজা পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং এর ২৩ লাখ জনগোষ্ঠীর প্রায় সবাই নিজ নিজ বাড়ি ছেড়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জাতিসংঘের প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস মত দেন, আবারও যুদ্ধ শুর হলে তা 'বিপর্যয়কর' হবে। 

জিম্মি পরিস্থিতি

উত্তর গাজার জাবালিয়ায় প্রথম রমজানের ইফতার করতে বসেছেন ফিলিস্তিনি মুসলিমরা। ছবি: এএফপি
উত্তর গাজার জাবালিয়ায় প্রথম রমজানের ইফতার করতে বসেছেন ফিলিস্তিনি মুসলিমরা। ছবি: এএফপি

১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে হামাস ২৫ জিম্মিকে মুক্তি দেয় এবং আট জনের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করে। অপরদিকে, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি প্রায় এক হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পান।

হামাস বারবার দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়ন চাইলেও ইসরায়েল বরাবরই প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এএফপিকে এক ফিলিস্তিনি সূত্র জানান, ইসরায়েল চাচ্ছে এক সপ্তাহ করে মেয়াদ বাড়িয়ে বাকি সব জিম্মিকে মুক্ত করে নিতে। হামাস এই পরিকল্পনায় রাজি হয়নি বলেও জানান এ আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই সূত্র। 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৮ জন এখনো গাজায় আছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

 

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

1h ago