চলতি বছরেই নির্বাচন চান ৫৮ শতাংশ ভোটার: জরিপ

তীব্র অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অর্থনৈতিক সংকটকে উদ্বেগের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন একটি জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা।

সেইসঙ্গে জরিপে অংশ নেওয়া ৫৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোটার চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনগণের নির্বাচনী দৃষ্টিভঙ্গি, তারা কবে নির্বাচন চান, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা, তারা কাকে ভোট দিতে চান এবং ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষগুলোকে তারা গুরুত্ব দেন- এমন বিভিন্ন বিষয় জানতে চেয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্ন্ত জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

ইনোভিশন বাংলাদেশ নামে একটি গবেষণা সংস্থার উদ্যোগে পরিচালিত এ জরিপে দেশের ৬৪ জেলার ১০ হাজার ৬৯০ জন অংশ নেন। 

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

ফলাফল অনুসারে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের প্রধান উদ্বেগ অর্থনৈতিক সংকট। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তারা যে প্রত্যাশা রাখেন, তার মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ ৬৯ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন (৪৫ দশমিক ২ শতাংশ) এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি (২৯ দশমিক ১ শতাংশ) ছিল অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। সরকারি সেবায় দুর্নীতি কমানোর প্রত্যাশা করেছেন ২১ দশমিক ৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। তাদের ভেতর ২ দশমিক ৬২ শতাংশ মনে করেন যে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ৪২ দশমিক ৩৩% মনে করেন এটি আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। আর ৫৫ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মনে করেন এটি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

বছর শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন চান ৫৮ শতাংশ

জরিপের অংশ নেওয়া ৫৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোটার ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন চান। তাদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ ভোটার জুনের মধ্যে এবং ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার পক্ষে। ১০ দশমিক ৯ শতাংশ ডিসেম্বরের পর নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

বিএনপির পক্ষে ৪১ শতাংশ ভোটার

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৬২ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যে তারা কাকে ভোট দেবেন। এর মধ্যে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ তাদের পছন্দের দলের কথা জানিয়েছেন।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দল হলো বিএনপি (৪১ দশমিক ৭ শতাংশ)। এর পরের অবস্থানগুলোতে আছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (৩১ দশমিক ৬ শতাংশ), আওয়ামী লীগ (১৪ শতাংশ), নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি (৫ দশমিক ১ শতাংশ) এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল (৭ দশমিক ৬ শতাংশ)।

জরিপ অনুসারে, ভোটারদের মধ্যে একটি প্রজন্মগত পার্থক্য রয়েছে। জেনারেশন এক্স (Generation X) এবং বুমারদের (Boomers) মধ্যে বিএনপির প্রতি সমর্থন তুলনামূলক বেশি। অন্যদিকে জেনারেশন জেড (Generation Z)-এর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াত প্রায় সমান জনপ্রিয়।

অনিশ্চিত ভোটার ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ

জরিপ অনুযায়ী, ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার এখনো সিদ্ধান্ত নেননি যে তারা কাকে ভোট দেবেন। তাদের মধ্যে ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ বলছেন যে তারা প্রার্থী সম্পর্কে জানার পর সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চান। এক্ষেত্রে নারী ভোটারদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বেশি (৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ)। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।

ভোটের সিদ্ধান্তে পরিবার ও  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব

জরিপ অনুসারে ৪৭ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবেন সে সিদ্ধান্তে তাদের পরিবারের প্রভাব আছে। বিপরীতে ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে পাওয়া সংবাদকে তাদের সিদ্ধান্তের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এক্ষেত্রে টেলিভিশন (১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ) ও পত্রপত্রিকা (৪ দশমিক ২৫ শতাংশ) এখনো তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে টিকে আছে।

সংস্কারে অগ্রাধিকার দিয়েছেন ৯ দশমিক ৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী

জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন আছে। আর ৫ দশমিক ৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সংবিধান পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ইনোভিশন কনসালটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ স্পিকস'র প্রধান মো. রুবাইয়াৎ সারওয়ার।

উপস্থিত ছিলেন ইনোভিশন কনসালটিং বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজী শাহেদ এইচ ফেরদৌস, ইনোভিশনের প্র্যাকটিস এরিয়া লিড আবদুর রব ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর।

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

10h ago