সরকারি জমি পেয়েও দুশ্চিন্তায় ঋতুপর্ণা, প্রশাসনের সহযোগিতার আশ্বাস

ছবি: ফেসবুক

২০২২ ও ২০২৪ সালে টানা দুবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কৃতী খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমার জন্য প্রশাসনের বরাদ্দকৃত জমিতে বাড়ি তুলতে বাধার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছেন ঋতুপর্ণা।

অভিযোগটি নিয়ে ঋতুপর্ণা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কারা বাধা দিচ্ছে সেই প্রসঙ্গে স্পষ্ট বক্তব্য দেননি কেউই। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি)।

ঋতুপর্ণা স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ২০২২ সালে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রাঙামাটি জেলা প্রশাসন পাঁচজন খেলোয়াড়কে সংবর্ধনা দেয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক তার গ্রামের বাড়িতে এসে বাড়ি ও রাস্তার জরাজীর্ণ অবস্থা দেখেন। তখন আরেক ফুটবলার রূপনা চাকমাকে বাড়ি করে দেওয়া হলেও তাকে বাড়ি ও রাস্তা বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। পরে তিনি সেই বিষয়ে আর ভেবে ক্যারিয়ারে মনোযোগী হন। যদিও তাকে ডেকে নিয়ে ঘাগড়া বাজারে খাস জমি নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এই তারকা ফুটবলার আরও লিখেছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয়বার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে এবং তিনি আসরের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। আবারও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা দেয়। রাজনৈতিক পালাবদলের পর নতুন প্রশাসনের কাছ থেকেও বাড়ি ও রাস্তা নির্মাণের আশ্বাস মেলে। ইউএনও রাস্তা নির্মাণের এবং জেলা প্রশাসক ঘর নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথাও ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। তবে আশঙ্কার ব্যাপার হলো, বাড়ি নির্মাণে একটি মহল থেকে বাধা আসছে।

ঋতুপর্ণার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, '২০২২ সালে প্রথমবার সাফ জয়ের পর আমাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি ও বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা করে দেওয়াসহ নানা আশ্বাস দেওয়া হয়। এরপর প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা বদলি হয়ে গেলে সেই আশ্বাস শুধু আশ্বাসই থেকে যায়। আমিও এত মাথা ঘামাইনি এগুলো নিয়ে। আবার ২০২৪ সালে সাফ জেতার পর রাঙামাটিতে আমাদের সংবর্ধনা দেওয়া হলে সেখানে আমি আমার সমস্যাগুলো তুলে ধরি এবং জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা আমাকে একটা ঘর ও রাস্তা করে দিবেন বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত পরশু আমাকে ইউএনও স্যার ডেকে নিয়ে ঘাগড়া বাজারে আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার জায়গায় দেখান এবং জায়গাটি মাপ দেওয়া হয়। সেই জায়গাটা আমাকে দেওয়া হবে এবং আমার ঘর নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান।'

তিনি আরও বলেছেন, 'পরদিন আমি বাড়িতে আসলে আমাকে বলা হলো, সেই জায়গাটা নাকি ৭০ জনের মতো একটা কমিটির দখলে। সেই জায়গাটা যদি নিই, তাহলে আমি বির্তকিত হব এবং আরও নানা ধরনের কর্থাবাতা বলা হয় আমাকে। যদিও তারা কোন কমিটির এবং তারা কে, এসব কিছু জানি না আমি। বিষয়টি আমি ইউএনও এবং এডিসিকে (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) জানিয়েছি। বিষয়টি তারা দেখবেন বলে আমাকে জানানো হয়েছে।' 

এই প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান বলেছেন, তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন, 'বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। গত কয়েকদিন আগে আমি ঋতুপর্ণাসহ সেই জায়গাটা দেখে এসেছি। গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে শুনেছি, কেউ একজন ঋতুপর্ণাকে ফোন করে বলেছে যে, সেই জায়গাটা ওরা একজনের কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে। এখন ঋতুপর্ণা যদি ৭ লাখ টাকা দেয়, তাহলে সে জায়গাটা পাবে। না হলে সেখানে ঘর নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। শুনে আমি আশ্চর্য হলাম যে, খাস জমি তো দখলে নেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের যদি জায়গা নিয়ে আপত্তি থাকে, তাহলে তারা আমাদের কাছে আসুক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঋতুপর্ণাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, আমরা বিষয়টি দেখছি। ইতিমধ্যে এডিসি স্যারের সাথেও আলোচনা হয়েছে। কেউ বললে তো আর হবে না। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেছেন, ঋতুপর্ণাকে বরাদ্দ দেওয়া জায়গাতে বাড়ি তুলে দিবেন তারা, 'ঋতুপর্ণার ফেসবুক পোস্টটি আমাদের নজরেও এসেছে। আমরা সরকারি জায়গা সরকারি টাকায় বরাদ্দ দিয়েছি। আমরা তাকে ঘর তুলে দিব। এখানে অন্য কারোর সুযোগ নেই কিছু করার। যারা তাকে ফোন করে বলেছে, তারা কী বুঝে বলেছে নাকি না বুঝে বলেছে, সেটা আমরা বলতে পারব না।'

কারা বাধা দিচ্ছে জানতে চাইলে এডিসি বলেছেন, 'এই বিষয়টি আমরা খোঁজখবর নিব। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।'

প্রসঙ্গত, ঋতুপর্ণার গ্রামের রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মগাছড়ি গ্রামে। তবে তার যাতায়াতের সুবিধার্থে ঘাগড়া বাজারের পাশে একটি  সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দিয়েছে প্রশাসন।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

5h ago