চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কি ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত?

ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট
ছবি: সংগৃহীত

ভিটামিন এক ধরনের জৈব খাদ্য উপাদান, যা সাধারণত খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থাকে। অনেকেই ভিটামিনের চাহিদা পূরণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে থেকে সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকেন। এটি কি ঠিক?

এই সর্ম্পকে জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হাসান মোস্তফা রাশেদ।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত কি না

ডা. হাসান মোস্তফা বলেন, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট কখনোই পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নয় এবং রোগ নিরাময় করতে কার্যকর নয়।

ভিটামিন মূলত দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট কেবল কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। 

ভিটামিন সাপ্লিমেন্টকে অনেকেই খাবারের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেন। মনে রাখতে হবে, সাপ্লিমেন্ট মাত্রই ওষুধ এবং তা খাবারের বিকল্প নয়। যেমন- অনেকে দুধ না খেয়ে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণ করেন। এটা মোটেই ভালো নয়। দুধে শুধু ক্যালসিয়ামই নেই, আরও অনেক উপাদান রয়েছে। এছাড়া আরেকটি বিষয় হলো, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ সাপ্লিমেন্টগুলো গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ বিভিন্ন সাপ্লিমেন্টের নির্ধারিত মাত্রা রয়েছে। এ নির্ধারিত মাত্রা যদি অতিক্রম হয়ে যায়, তাহলে দেহে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, ভিটামিন থেকে কোন শক্তি পাওয়া যায় না। ভিটামিন শক্তি উৎপাদক খাবার নয়। মূলত শরীরে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ভিটামিন সহায়তা করে থাকে।

তবে অনেক সময়েই শরীরের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ এর থেকে বড় কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে কারণে চিকিৎসকরা কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে মাল্টিভিটামিন অথবা কাউকে নির্দিষ্ট সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরামর্শ দেন।

তবে বিচার বিবেচনা না করে নিজে থেকে এগুলো খাওয়া উচিত নয়। ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্টের মধ্যে অনেক ধরনের উপাদান থাকে। কিছু উপাদান হয়তো আপনার শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। কিন্তু বাকি উপাদানের অতিরিক্ত প্রবেশ সমস্যাও তৈরি করতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ও বিভিন্ন ধরনের সাপ্লিমেন্ট খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

নিজে থেকে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেলে কী হতে পারে

  • একটা কথা মনে রাখতে হবে, মাল্টিভিটামিন খাবারের পুষ্টিকে সরাসরি প্রতিস্থাপন করতে পারে না। কেউ যদি শরীরে ভিটামিনের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখতে চান তবে তাকে প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। ব্যাপারটা এমন নয় যে, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার না খেয়ে কেবল মাল্টিভিটামিন খেলেই স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
  • মাল্টিভিটামিনের মাত্রাতিরিক্ত ডোজ কিডনি এবং লিভারের ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে কিডনি ফেইলিউর এবং লিভার সংক্রান্ত জটিলতা বাড়তে পারে।
  • শরীরের চাহিদার বাড়তি যেকোনো খাদ্য উপাদানই ক্ষতির কারণ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সাপ্লিমেন্ট হচ্ছে ক্যালসিয়াম। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার, যা খাবার থেকেই গ্রহণ করা সম্ভব। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে রক্তে ক্যালসিয়াম বেড়ে কিডনিতে পাথর, হৃদরোগ, হাড়ে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
  • ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন শরীরে অতিরিক্ত জমে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে। হাইপার ভিটামিনোসিসও হতে পারে।
  • ভিটামিন বি ও সি যেহেতু পানিতে দ্রাব্য, তা খেলেও মল বা মূত্র দিয়ে বেরিয়ে যায়। সমস্যা কম সৃষ্টি করে।

তাই সামগ্রিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া ঠিক না। এতে উপকারের তুলনায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কাই বেশি থাকে।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Divisions widen over July Charter’s status, implementation

Major political parties are divided over the July Charter’s implementation timeline

11h ago