‘যতদিন বেঁচে থাকব এই বেদনা রয়ে যাবে’

আবু সাঈদ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদকে ছাড়াই ঈদ করতে হচ্ছে তার পরিবারকে। বুকে গভীর ক্ষত নিয়ে রংপুরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ কাটাচ্ছে তার পরিবার।

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সাঈদের মৃত্যুতে পরিবারে তৈরি হয়েছে এক বিশাল শূন্যতা।

পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের জাফরপুরে জন্ম আবু সাঈদের। ছয় ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। বাবা মকবুল হোসেন দিনমজুরের কাজ করতেন।

তিন বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সুমি খাতুন গতবারের ঈদের কথা মনে করে কেঁদে ফেলেন। 'গত বছরও ভাই ঈদ করতে বাড়িতে এসেছিলেন,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন সুমি।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরের পার্ক মোড়ে ছাত্রলীগ-যু্বলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

সুমি বলেন, 'প্রতি ঈদে ভাই টিউশনের টাকায় আমার ও বড় বোনের বাচ্চাদের জন্য কাপড় ও মেহেদি কিনে দিতেন। বাড়ি এলেই আমার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দেখা করতেন। এখনো মনে হয় তিনি ফিরে আসবেন।'

'তার আসা, তার হাসি—এখনো আমাদের স্মৃতিতে তাজা। তাকে ছাড়া ঈদ পার করা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের,' বলেন তিনি।

সুমি খাতুন বলেন, 'আমাদের এখন ততটা অভাব নেই। কিন্তু আমার ভাইটা নেই।'

বাবা মকবুল হোসেনের কাছে ছেলেই ছিল সবকিছু। কিছু পাওয়া বা ন্যায়বিচারের আশ্বাস কমাতে পারছে না ছেলে হারানোর বেদনা। 

'আমাকে পুরো দেশ দেওয়া হলেও মন শান্তি পাবে না। আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। এটা কখনোই পূরণ হবার নয়,' মকবুল বলেন।

সাঈদ সবসময় তার সামান্য উপার্জন থেকে সঞ্চয় করে ঈদের সময় বাবার জন্য পাঞ্জাবি, মায়ের জন্য শাড়ি কিনতেন। বাবার সঙ্গে একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে যেতেন।

সাঈদের মা মনোয়ারা বেগমের মনেও গভীর দুঃখ। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, 'মনে শান্তি নেই। ঈদ কেটে যাবে। কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন এই বেদনা কখনো কমবে হবে না।'

পুলিশের গুলিতে সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হওয়ার পর সারা দেশে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ শুরু হয়। অবশেষে, ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার।

গত ৮ মাসে যদিও অনেক কিছু বদলে গেছে, কিন্তু আবু সাঈদের শূন্যতা কখনো পূরণ হবার নয়।

আবু সাঈদের মতো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শহীদদের প্রায় দেড় হাজার পরিবারের মধ্যে একইরকম শোক বিরাজ করছে।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Terrorism Act

Banning party activities: Govt amends anti-terror law

The interim government is set to bring the curtain down on the Awami League as a functioning political party.

3h ago