আমাদের দুর্নীতি আপনারা দেখিয়ে দেবেন, চেষ্টা করব যতটা সম্ভব বেরিয়ে আসার: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনেক কর্মকর্তাই যে দুর্নীতিগ্রস্ত, তা স্বীকার করে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, 'আমরা যে দুর্নীতি করি সেটা আপনারা দেখিয়ে দেবেন এবং আমরা চেষ্টা করব দুর্নীতি থেকে যতটা সম্ভব বেরিয়ে আসতে।'
রোববার নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
'সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রংপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় এর আয়োজন করে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, 'অনেক সময় আমাকে শুনতে হয়—আপনারা দুর্নীতির কথা বলেন, কিন্তু আপনার নিজের অফিসই তো দুর্নীতিগ্রস্ত। এটি কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয় নয়! আমি নিজেও তা উড়িয়ে দেই না। আমরা যে দুর্নীতি করি সেটা আপনারা আমাদের দেখিয়ে দেবেন এবং আমরা চেষ্টা করব যতটা সম্ভব এই দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে। কারণ দুদকই যদি দুর্নীতি করে, তখন তো আর বাকিদের বলার কিছু থাকে না।'
দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের মধ্যে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি কি না। আমরা যদি দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের ঘৃণা করতে না পারি, তাহলে কিন্তু এই সংকট খুব সহজে যাবে না। আপনারাই শুরু করুন যে ঠিক আছে, আমরা দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলব।'
ভবিষ্যতে দুর্নীতি বন্ধ করার কথা উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান মনে করেন, আমাদের যে কর্মপদ্ধতি, এটার মধ্যে খানিকটা ভ্রান্তি আছে। সেটা হচ্ছে, আমরা যে সময় ব্যয় করি, মোট সময়টা পুরোনো দুর্নীতিকে কীভাবে নিরসন করা যায় তার পেছনে যায়। আসলে আমাদের বড় কাজ হওয়া উচিত ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতি না হয়, সেটি রোধ করা। কোথায় দুর্নীতি হয়, তা আমি-আপনি সবাই জানি। যদি জেনেই থাকি, তাহলে ভবিষ্যতের দুর্নীতি ঠেকানোর জন্য এখন থেকেই যদি আমরা সতর্ক থাকি, তাহলে দুর্নীতি দূর হবে।'
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামানের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবর আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. তালেবুর রহমান।
গণশুনানিতে জেলার বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার অভিযুক্ত ব্যক্তি ও অভিযোগকারীদের মুখোমুখি করা হয়। এ সময় অভিযুক্তদের অনেকের উপস্থিতিতেই এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ লিখিতভাবে ৮১টি অভিযোগ উপস্থাপন করেন। সেইসঙ্গে সেবাবঞ্চিত জনসাধারণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
Comments