খাদ্যপণ্যের দাম কমায় এপ্রিলে কমেছে মূল্যস্ফীতি

মূল্যস্ফীতি
আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, গত কয়েক মাসে খাদ্যপণ্যের দাম কমায় এপ্রিলে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি আরও কিছুটা কমেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদসহ অন্যান্য উৎসব-পরবর্তী সময়ে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণেই মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমেছে।

বিবিএস প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক ১৭ শতাংশে, যা মার্চে ছিল নয় দশমিক ৩৫ শতাংশ।

এই মাসে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি উভয়ই হ্রাস পেয়েছে। এপ্রিল মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আট দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক মাস আগে ছিল আট দশমিক ৯৩ শতাংশ। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার টানা পাঁচ মাস ধরে নিম্নমুখী।

খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিও এপ্রিল মাসে সামান্য কমে নয় দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে নয় দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে এসেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির এই হ্রাস নিঃসন্দেহে ইতিবাচক লক্ষণ।'

তিনি বলেন, এটি সম্ভবত বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতি, উৎসব পরবর্তী ব্যয় সংকোচন অথবা এই দুয়ের সম্মিলিত প্রভাবের কারণে চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

রোজার পর বাংলাদেশে গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। রোজার মাসে কিছু নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্যের ব্যবহার সাধারণত বেড়ে যায়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মে মাসের তথ্য-উপাত্ত পেলে একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে, যেখানে উৎসব পরবর্তী প্রভাব থাকবে না। তবে তিনি এও বলেন যে, এপ্রিল মাসে খাদ্যপণ্যের দাম ফেব্রুয়ারির মতো উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি, মার্চের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও বৃদ্ধির হার ছিল ধীর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান সাম্প্রতিক এই পরিসংখ্যানের প্রতি সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানান।

'যদিও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, তবুও এটি অনেক বেশি,' বলেন তিনি। বিবিএসের তথ্য অনুসারে, টানা ২৬ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের উপরে আছে।

তিনি আরও বলেন, 'আমি মনে করি না, এই সামান্য হ্রাস কোনো বড় ধরনের অগ্রগতির প্রতিফলন। যখন এক সপ্তাহের মধ্যে আবার দাম বাড়তে শুরু করে, তখন আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, এই হ্রাস আসলে কতটা টেকসই। আমাদের মূল্যস্ফীতির পেছনে থাকা গঠনগত সমস্যাগুলো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।'

তিনি রমজান মাসের উদাহরণ টেনে বলেন, তখন বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছিল। তিনি বলেন, 'এটা থেকে বোঝা যায় যে, আমাদের দেশে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ সমস্যা অনেক সময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'

'মুদ্রানীতি মূলত চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু মার্চ ও এপ্রিলে আমরা দেখেছি সরবরাহ বাড়ালে কার্যকরভাবে দাম কমানো সম্ভব,' যোগ করেন তিনি।

অক্টোবর-ডিসেম্বরের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতিকে একটি প্রধান উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যার মূল কারণ খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, '২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক ৯২ শতাংশ, যা নভেম্বরে বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর ডিসেম্বর মাসে এটি সামান্য কমে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হয়।'

মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতির জন্য গত আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে বন্যার কারণে আমন ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার সমস্যা বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর।

গত শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশে নেমে এলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী মার্চের মধ্যে পলিসি রেট সাত শতাংশে কমিয়ে আনার কথা বিবেচনা করতে পারে।

তবে সেলিম রায়হান এই মতের বিরোধিতা করে বলেন, 'আগামী মার্চ এখনো অনেক দূরে। আমার মনে হয় না, এখনই পলিসি রেট কমানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, পলিসি রেট কমালেও বিনিয়োগ খুব একটা বাড়বে বলে মনে করছি না। তিনি কাঠামোগত সমস্যা এবং বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। তার মতে, মুদ্রানীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান হার ধরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

এই অর্থনীতিবিদ দেশের বাজার ব্যবস্থায় চাঁদাবাজি ও কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়ানোর মতো বেশ কিছু গুরুতর সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'রমজান মাসে যখন এসব সমস্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং বেশি আমদানিকারককে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তখন দাম স্থিতিশীল ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'যদি বাজারের ত্রুটিগুলো দূর করা যায়, ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয় সমাধান করা যায় এবং সরবরাহ চেইন উন্নত করা যায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টেকসই ও বাস্তব অগ্রগতি আশা করা যেতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Explosions rock Indian Kashmir

Sirens ring out in Jammu, projectiles in night sky; Islamabad says Indian drones earlier entered its airspace

2h ago