কোহলির শূন্যতার বেদনা টের পাবে টেস্ট ক্রিকেট

Virat Kohli

ব্রায়ান লারা একদিন আগেই আর্তি জানিয়ে লিখেছিলেন, 'টেস্ট ক্রিকেটের বিরাটকে দরকার'। কদিন ধরে চলা গুঞ্জনে লারাও টের পাচ্ছিলেন বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে শচীন টেন্ডুলকার পরবর্তী সময়ে ভারতের সবচেয়ে বড় তারকা। শুধু ভারতের নয়, টেস্ট ক্রিকেটেরও যে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে বিরাজ করছিলেন বিরাট কোহলি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের রমরমা সময়ে টেস্টের ঝিমিয়ে পড়া সেশনেও প্রাণ এনে দেওয়া সবচেয়ে প্রভাবশালী 'ক্যারেক্টার' বিদায় নিলেন। লারার আর্তিটা তাই খুব অর্থবহ।

কোহলির ব্যাট আর কোহলির মতন কথা বলছিলো না, বিশেষ করে টেস্টে। একটা সময় টানা চারটা সিরিজে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন, ভেঙেছিলেন ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড। সেই কিং কোহলি গত পাঁচ বছরে টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন স্রেফ তিনটি। গড় নামতে নামতে পঞ্চাশের নিচে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে যদি পুরনোদের ছেঁটে নতুনদের দিয়ে নতুন শুরু করতে চান গৌতম গম্ভীর তাকে দোষ দেওয়া কঠিন। টেস্টের বিজ্ঞাপনের চেয়ে তার কাছে নিশ্চয়ই আগামীর পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ।

'হেথা হতে যাও, পুরাতন। হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে।' - কানের কাছে বাজতে থাকা এই আবহসঙ্গীত না বোঝার কথা নয় তার। উপমহাদেশীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী গোঁ ধরে আটকে থাকা চরিত্রও নন তিনি। আর ৭৭০ রান হলেই তো দশ হাজারের মাইলফলক, অন্য অনেকেই হয়ত ভাবত কোনভাবে টেনেটুনে এই কটা রান করে বিদায় নেই।

লারা যেমন আর্তি জানিয়েছিলেন, শোনা যায় ভারতীয় বোর্ডের অনেক কর্তাও কোহলিকে আরও কিছুদিন টেস্ট চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু বোঝা হয়ে থাকবেন কেন কোহলি? তবে আর তিনি কোহলি কেন?

virat kohli

১২৩ টেস্টে ৯২৩০ রান, ৩০ সেঞ্চুরি, ৩১ ফিফটি। গড়-৪৬.৮৫। ৩০২  ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৫১ সেঞ্চুরি আর ৫৭.৮৮ গড়ে ১৪১৮১ রান। পাশাপাশি রাখলে ওয়ানডের কোহলির থেকে বেশ ম্লান মনে হবে টেস্টের কোহলিকে। পরিসংখ্যান নির্ভর খেলা ক্রিকেটে দিনশেষে এদিকেই যায় নজর।

তবে টেস্টের কোহলি স্রেফ পরিসংখ্যানেই আবদ্ধ নন। কোহলি দুরন্ত কাভার ড্রাইভ দেখার যত আনন্দ, ফিল্ডিং দেখার আনন্দ খুব বেশি একটা কম নয়। মিড অন, মিড অফ বা মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে তার এটিচ্যুড টেস্ট ক্রিকেটের গত এক দশকের বিজ্ঞাপন। ফিটনেসে তিনি বরাবরই টপ ক্লাস, সেই প্রভাব পড়ত ফিল্ডিংয়ে। ঝিমিয়ে পড়া সেশনে বোলারকে নেতিয়ে পড়তে না দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে চাঙ্গা করে তুলতে পারতেন আবহ। জেতার জন্য প্রতিটা মুহূর্তে যা কিছু করা সম্ভব তার সবটা নিংড়ে দেওয়া দেখলে প্রতিপক্ষের মধ্যেও প্রতিদ্বন্দিতার ঝাঁজ তীব্রতর হতো। খেলাটাকে জমিয়ে দিতে পারা তারচেয়ে খুব কম লোকই গত এক দশকে পেরেছেন।

virat kohli

মাঠে যিনি এতটা আগ্রাসী মাঠের বাইরে আবার একদম বিপরীত। সেখানে তিনি বিনয়ী, আন্তরিক। খেলার পর বাংলাদেশ দলের একজন তরুণ খেলোয়াড়কেও ঘন্টা দুয়েক সময় দিতে কার্পণ্য করেন না। বাংলাদেশের লিটন দাস বা এনামুল হক বিজয়রা তার অবসরের পর আলাদা করে বললেন সেসব।

মাঠের ভেতরে কোহলি অন্য, এক বিন্দু ছাড় নেই সেখানে। এমন নাছোড় হতে পেরেছিলেন বলেই তো খেলার সৌন্দর্যটা বেড়ে যেত অনেক।

virat kohli

কোহলি খেলতেন বলেই টেস্টের টিআরপি বেড়েছে, সরাসরি প্রভাব পড়েছে টিভি রাইটসে। কোহলিকে অপছন্দ কেউ করলেও উপেক্ষা করার উপায় ছিলো না। পক্ষে হোক বা বিপক্ষে টিভি পর্দায় কোহলি মানেই ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকাতে বাধ্য করা। টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটার ব্রায়ান চার্লস লারা সেটা বুঝেন। ভারতের মতন আইপিএল উন্মাদনার দেশেও ম্লান হয়ে পড়া সাদা পোশাকের দর্শকপ্রিয়তা তুঙ্গে রেখছিলেন এই একজন।

বৈশ্বিক বিচারে ক্রিকেটের তারকাদের খোঁজ অন্য খেলার তারকারা নেন না। বরং ক্রিকেটাররাই ফুটবলের অমুক, টেনিসের তমুকের ভক্ত। এক্ষেত্রেও একটা ভিন্ন মাপকাঠি তৈরি করতে পেরেছিলেন কোহলি। তার বিদায় তাই টেনিস কিংবদন্তি নোভাক জোকোভিচকেও নাড়া দিয়ে যায়। বিদায় অর্ঘ্যে যোগ দেন তিনিও।

ওয়ানডের কোহলিকে হয়ত ২০২৭ বিশ্বকাপেও দেখা যাবে, নিজের রেকর্ড আরও চূড়ায় নিয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু লাল বল, শুভ্র পোশাক, ২৬৯ নম্বর ভারতীয় জার্সির শূন্যতার বেদনা টের পাবে টেস্ট ক্রিকেট।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Students, teachers declare 'shutdown' at JnU

JnU students have continued their blockade at the capital's Kakrail intersection for the second consecutive day

1h ago