কাজ ফেলে রাখার অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেতে

কাজ ফেলে রাখা
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের অনেকেরই প্রোক্রাস্টিনেশন বা কাজ ফেলে রাখার অভ্যাস রয়েছে। আমার নিজের ক্ষেত্রেই দেখি, প্রতিদিন অফিসের কাজ থেকে শুরু করে ঘরে ফিরেও নানা কাজ, ফোনালাপ, অনলাইন মিটিং, সব মিলিয়ে সময়টা বেশ ব্যস্ততার। শেষ মুহূর্তের আগ পর্যন্ত যেন ফেলে রাখা কাজটা করাই হয় না।

এই কাজ ফেলে রাখার অভ্যাসের কারণে আমাদের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করে, যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাহলে কীভাবে এই জটিল অভ্যাসের ফাঁদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?

অভ্যাস বিষয়টি আমাদের নিত্যদিনে এতটাই গভীরভাবে গেঁথে যায় যে আমরা নিজের অজান্তেই একই রুটিন মেনে চলতে থাকি। তাই এই প্রোক্রাস্টিনেশনের দায় কাটাতে সবার প্রথমে দরকার, একটি 'টু-ডু লিস্ট' বা কাজের তালিকা তৈরি করা। গুরুত্ব অনুযায়ী কোন কাজ কখন করব, কতক্ষণ করব, এই বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে লিখে রাখা। যদি নিয়মিত এই তালিকা মেনে চলতে পারি, তাহলে একটা সময় পর ধীরে ধীরে দিনের কাজ দিনেই শেষ করার অভ্যাস দাঁড়িয়ে যাবে।

তবে এই রুটিন যেন আপনার জন্য সহজ হয়, প্রয়োজনে যাতে বদলানোও যেতে পারে। আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা কিংবা গবেষণা, সবকিছুর মাঝে একটা ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করি। এর বাইরে তো পারিবারিক জীবন আছে, আছে বন্ধুমহল।

এ ক্ষেত্রে আরেকটি উপায় হতে পারে, মাল্টিটাস্কিং। যেমন ধরা যাক, আপনি ট্রাফিকে বসে আছেন। যদি সম্ভব হয়, এ সময়ের মাঝে প্রয়োজনীয় ফোনালাপ সেরে ফেলতে পারেন। আমার অনেক সহকর্মীকেই দেখেছি, গাড়িতে বসে ল্যাপটপেই লেকচার তৈরি করতে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না মানলেই নয়। সেটি হলো কাজের গুরুত্ব বোঝা। এই যান্ত্রিক জীবনে যেখানে আমাদের প্রত্যেকেই মাল্টিটাস্কিং করতে হয়, সেখানে আসলে আপনাকে ঠিক করে নিতে হবে, কোন কাজটির গুরুত্ব কতখানি। তার ওপরই নির্ভর করবে কোন কাজটি কখন করবেন। আপনি হয়তো প্রতিদিনের টু-ডু লিস্টের সব কাজই শেষ করতে পারবেন না। এটা একেবারেই স্বাভাবিক। তবে চেষ্টা করুন প্রতিদিন অন্তত কয়েকটি কাজ শেষ করার। এ ক্ষেত্রে ডেডলাইন অনুযায়ী কাজগুলোকে ভাগ করে নিতে পারেন। যে কাজটিতে আপনার সময় বেশি লাগছে, তার জন্য পুরো সপ্তাহজুড়ে কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন।

একইসঙ্গে এড়িয়ে চলতে হবে সেই বিষয়গুলো, যা আপনার মনোযোগকে নষ্ট করছে। আমার শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাদের মনোযোগ নষ্ট করার জন্য দায়ী। ফেসবুক, ইউটিউব যখন ছিল না, সে সময় অনেকেই অভিযোগ করতেন, মোবাইল ফোন তাদের মনোযোগ ব্যাহত করছে। তাই যে বিষয়গুলোই কাজে অন্তরায় সৃষ্টি করছে, সেগুলোকে এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে কাজ শেষ করার পরেও।

অবশেষে নিজের জন্যও কিছুটা সময়

রুটিন তৈরি করার পরও যদি আপনি কাজ ফেলে রাখার এই স্বভাব থেকে থেকে বের হতে না পারেন, তবে কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখুন। যদি আপনার কাজ একান্তই না এগোয়, তাহলে কিছুটা সময় নিজেকে দিতে পারেন। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়াও করতে পারেন। এমন নয় যে, আপনাকে প্রতিদিনই টানা কাজ করতে হবে। যন্ত্রের পক্ষেও তো তা সম্ভব নয় আসলে। বরং দুদিন বেশ কিছুটা সময় কাজ করে তার পর দিন একটু কম কাজ করলেন। কিন্তু রুটিন মেনে চলাটা জরুরি।

ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে আমরা যে যেই পেশায় থাকি না কেন, আমাদের মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন এই রুটিন মেনে চলা প্রয়োজন। আর রুটিন মানেই শুধু আপনার কাজের তালিকা হতে হবে এমন নয়। এর মধ্যে নিজের যত্ন নেওয়া, দিনে ঠিকমতো খাবার খাওয়া হলো কি না, কয় ঘণ্টা ঘুম হলো, এই বিষয়গুলোও রাখাটা প্রয়োজন।

 

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

8h ago