সাক্ষাৎকার

ভেবেছি হামজা আসতে পারলে আমি কেন নয়: শমিত

shamit shome

কানাডা-ভিত্তিক মিডফিল্ডার শমিত সোম ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকের জন্য প্রস্তুত। ২৬ বছর বয়সী এই খেলোয়াড় জামাল ভূঁইয়া এবং হামজা চৌধুরীর পথ অনুসরণ করে শেকড়কে আলিঙ্গন করতে যাচ্ছেন। জাতীয় দলের হয়ে খেলতে আসার আগে মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তার ফুটবলের যাত্রা, অনুপ্রেরণা এবং বাংলাদেশের প্রতি আবেগপূর্ণ সম্পর্কের গল্প শুনিয়েছেন।

বাংলাদেশের জার্সিতে খেলতে যাচ্ছেন, অনুভূতিটা শুনতে চাই

শমিত সোম: আমি রোমাঞ্চিত আছি। বাংলাদেশের ফুটবলের উপরে অনেক রোমাঞ্চ আছে। আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলব এটার জন্য উত্তেজনা কাজ করছে। আমি মুখিয়ে আছি, আমি আসছি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে এবং ভালো করতে।

কানাডার হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো? বাংলাদেশের হয়ে এবার খেলবেন, দুটোকে কীভাবে দেখেন।

শমিত: ওটা খুব ভালো অভিজ্ঞতা ছিলো। আমার খুব ভালো লেগেছে খেলতে। ওই সময় একটা জায়গা ছিলো কানাডা অনেক উন্নতি করছে আর উঁচু ধাপে যাচ্ছিলো। আমি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি কারণ আমি একটা নতুন অভিজ্ঞতা নিতে চাই, নতুন চ্যালেঞ্জ চাই। যেভাবে দেখছি বাংলাদেশের ফুটবল উন্নতি করছে, ভক্তদের সাপোর্ট  আছে। ফেডারেশন চাইছে খেলাটা উন্নত করতে। সব মিলিয়ে আমি ভেবেছি এখন ঠিক সময় যোগ দেওয়ার। আমি খুব রোমাঞ্চিত। আর যেটা বলেছিলাম আমার মতন দেখতে লাগে সবাইকে (একই সংস্কৃতি), আমার মতন রঙ, সংস্কৃতি ওটাও একটা রোমাঞ্চের জায়গা। এই অভিজ্ঞতা আমি কানাডাতে কখনো পাইনি।

আপনাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে কবে বাফুফে প্রথম অ্যাপ্রোচ করল?

শমিত:  সিরিয়াস ম্যানারে...তারা বোধহয় মেসেজ পাঠিয়েছে গত বছরের শেষ দিকে। ভারতের খেলার প্রস্তুতি যখন হয় তখন। ওই সময় আমি চিন্তা করছিলাম। খুব ভালো আলোচনা হয়েছে নতুন সভাপতির সঙ্গে। ওই আলোচনার পর আমার ভাবনা শুরু হয়, কখন করব। তারপরে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি (ভারত ম্যাচের আগে)।

হামজাকে এখানে খেলতে দেখে প্রেরণা পেয়েছিলেন কিনা?

শমিত: এটা অনুপ্রাণিত করেছে অবশ্যই, সে তো খুব বড় খেলোয়াড়। সে যদি করতে (বাংলাদেশে আসা) পারে আমি কেন পারব না। ওটা ছিলো এক জিনিস। এটা ছাড়াও আমার সব সময় চিন্তা ছিলো (বাংলাদেশের হয়ে খেলার)। মূল যে সমস্যা সেটা হলো কানাডা থেকে আসা তো কঠিন। আমাদের তো ন্যাশনাল ব্রেক নাই, সময়ের পার্থক্য অনেক। ভ্রমণ অনেক কঠিন ইউরোপের তুলনায়। আমার থাকি, খেলি তো কানাডাতে। বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে।  তাও ভেবেছি  এটা ঠিক সময়, যেভাবে ফুটবলটা উন্নতি হচ্ছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ দলের কোনো খেলোয়াড় বা কোচের সঙ্গে কি আলাপ হয়েছে?

শমিত: কথা বলা হয়েছে, সবার সঙ্গে না। কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে অলরেডি, টেকটিকস কীরকম। সে আমাকে চায় কীরকমভাবে খেলতে। গেম প্ল্যানটা কি হচ্ছে  সিঙ্গাপুরের জন্য এসব নিয়ে, ওটাও (আলোচনা) খুব ভালো হচ্ছে। তারপরে দুই-তিনজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। যেমন তারিক কাজি, কাজেম শাহ এদের সঙ্গে কথা হয়েছে, এদেরকে আমি (আগে থেকেই) জানি। আমি আরও সব খেলোয়াড়কে চিনি, আমি সবার সঙ্গে সরাসরি দেখা করার জন্য রোমাঞ্চিত আছি। দলের সঙ্গে যোগ দিতে মুখিয়ে আছি।

বাংলাদেশের ফুটবল তাহলে ফলো করা হয়?

শমিত: একটু অনুসরণ করা হয়। আর আমি যেহেতু খেলতে যাব সেজন্য অনলাইনে ফলো করি। বাংলাদেশে দলগুলো (ক্লাব) কেমন আছে, কেমন করছে। গত দুই তিন বছর ধরে জাতীয় দলকেও ফলো করছি কেমন খেলে ইত্যাদি।

হামজার সঙ্গে কথা হয়েছে?

শমিত: এখনো না, ওখানে গিয়ে নিশ্চয়ই কথা হবে।

আপনি আসবেন বলে একটা আলোড়ন তৈরি হয়েছে ফুটবল ভক্তদের মাঝে, হামজাকে নিয়েও যেমন হয়েছিলো। এই ভাইব টের পাচ্ছেন?

শমিত: আমি এটার জন্য খুব কৃতজ্ঞ। আমি এই ভালোবাসাটা খুব অনুভব করি, সবাই যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাকে ওয়েলকাম করছে। আমার এখানে আসার পেছনে ওটাও একটা বড় ফ্যাক্টর। আমি তো সাপোর্ট পাচ্ছি বাংলাদেশের ভক্তদের দিক থেকে। এটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি রোমাঞ্চিত তাদের সামনে খেলার জন্য, বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে। এরকম প্যাশনেট ফুটবল ভক্ত কানাডাতে নেই, এই কারণে রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষায় আছি এই ভাইবটা পেতে।

আপনার বাংলাদেশে আসার পেছনে বাবা-মার কতটা সাপোর্ট ছিলো?

শমিত: হ্যাঁ, বাবা-মা খুব রোমাঞ্চিত। আমার দাদা-দাদিও খুব রোমাঞ্চিত। তারা খুব খুশি যে আমি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি। সবাই খুব রোমাঞ্চিত, আশা করি সব কিছু ভালোমতন হয়ে যেন সফল হতে পারি।

খেলা দেখার জন্য পরিবারের কেউ থাকবে?

শমিত:  কানাডা থেকে কেউ না। সবার তো এখানে কাজ। আমিও ভেবেছি আমি প্রথমবার যে আসছি (খেলার জন্য) একটু ইন্ডেপেন্ডেন্টলি যাই তাহলে একটু ফোকাস করতে পারব বেশি। কোন ডিস্ট্রাকশনের মধ্যে নেই। কিন্তু আমার শ্রীমঙ্গলে যত আত্মীয় আছে, তারা সবাই প্ল্যান করছে আসার জন্য (মাঠে)। তারাও বেশ অপেক্ষায় আমাকে প্রথমবার মাঠে দেখতে।

বাংলাদেশে তো নিশ্চয়ই ছোটবেলার অনেক স্মৃতি আছে

শমিত:  মনে আছে আমাদের বাসার সামনে একটা পুকুর আছে, পুকুরের সামনে খেলতাম। একটা গাছ ছিলো, গাছের পেছনে ক্রিকেট খেলতাম, ফুটবল খেলতাম। এগুলো মনে আছে। শ্রীমঙ্গলে একটা জিনিস  হচ্ছে নিরিবিলি পরিবেশ। রাতের বেলা তারা দেখা যায় সুন্দর। চা-বাগান যতগুলো আছে সবই দেখা হয়েছে। আমার খুব ভালো লাগে, খুব বিশেষ জায়গা।

আপনার ফুটবলের যাত্রাটা কীভাবে হয়েছিলো?

শমিত:  আমি খুব ভাগ্যবান যে সুযোগ পেয়েছি। সবাই তো এরকম সুযোগ পায় না। আমি চার-পাঁচ বছর থেকে সকার খেলছি। তারপরে ৮-৯-১০ বছরের দিকে ক্লাব পর্যায়ে শুরু করেছি, মানে একটু সিরিয়াস হয়ে খেলা শুরু করলাম। তারপরে আমার চিন্তা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ পেতে, বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের হয়ে খেলতে, স্কলারশিপ দিয়ে কন্টিনিউ করতে। আমি তখন একটা স্কলারশিপ পাই। আমার প্রথম পেশাদার মৌসুমে বয়স ছিলো ১৮। ওই মৌসুমে ভালো করেই এগিয়েছি। এডমন্টনে ছিলাম, এখন ক্যালগেরিতে আছি। এখন ভাবলাম যে একটু নতুন চ্যালেঞ্জ নেই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে।

শুনলাম বাস্কেটবলও খেলেছেন?

শমিত:  আমি অনেক ধরণের খেলা খেলতাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাস্কেটবল খেলতাম, ভবিবল খেলতাম। মূলত ঝোঁক ছিলো সকারে।

বাংলাদেশের হয়ে আপনার লক্ষ্য কি? কি অর্জন করতে চান?

শমিত: আমার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে অবদান রাখতে। এখন তো আমরা এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে আছি, আমরা যদি বাছাইপর্ব পেরুতে পারি এটা হচ্ছে এখন লক্ষ্য। এখন আমার ফোকাসের জায়গা এটা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, এশিয়ান ধাপে একটা ভালো অবস্থায় যেতে বিশেষ করে।

আপনি এমনিতে মিডফিল্ডার। তারপরও পজিশন নিয়ে কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কোন?

শমিত:  ভালো কথা হয়েছে। সে আমাকে কোথায় খেলাতে চায় এই নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমি ডিফেন্সিভ মিড খেলব নাকি অ্যাটাকিং মিড খেলব। আমি দুই পজিশনে খেলতে কম্ফোর্ট আছি, কাজেই আমি ফ্লেক্সিবল হতে পারি। সে এই ব্যাপারে জেনে নিয়েছে। কোচ সব দেখে সিদ্ধান্ত নেবে, আমার দলে আরও যেসব খেলোয়াড় আছে ভারসাম্য দেখে পিক করবে। কোচ যেভাবে খেলতে চায়, প্ল্যানটা কি এটার সঙ্গে কোলাবরট করে আমি কীভাবে ক্লাবে খেলি এসব মিলিয়ে হবে। আমি তাকিয়ে আছি কি হয়।

এমনিতে কোন মিডফিল্ডারকে ফলো করেন?

শমিত:  আমি অনেক মিডফিল্ডারকে ফলো করি। তাদের স্টাইল ফলো করতে চাই। রিয়াল মাদ্রিদের লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুস তারপরে সেস ফ্রেব্রিগাসকে অনেক ভালোবাসি কম বয়েস থেকে। দেখেন পিএসজি যেভাবে খেলতে পেরেছে তাদের মিডফিল্ড অনেক শক্ত ছিলো। এদেরকে ফলো করছি এখন।

ম্যাচ খেলে কি থাকা হবে দেশে? বাড়ি যাওয়া হবে?

শমিত:   না, আমাকে দ্রুত ফিরতে হবে। আমি যেতে চেয়েছিলাম শ্রীমঙ্গলে বাসায় কিন্তু সময় থাকবে না। আমাদের তো কানাডায় খেলা আছে। বাংলাদেশের খেলার তিন-চারদিন পরেই আমার কানাডায় খেলা আছে।

Comments

The Daily Star  | English
Eid-ul-Azha 2025

Main Eid congregation held at National Eidgah

With due religious solemnity and fervour, the main congregation of Eid-ul-Azha was held at the National Eidgah.

49m ago