জুলাই সনদ একটি জাতীয় ঐকমত্য, এটা আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন আহমদ

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: স্টার

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায় জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তবে এটিকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে একমত নয় বিএনপি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ বলেছেন, 'জনগণের সার্বভৌম এখতিয়ারের ভিত্তিতেই আমরা এই ঘোষণাপত্রকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করছি। সেটা আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি। এর চাইতে বড় জাতীয় সম্মতি আর নেই। এটা আইনের ঊর্ধ্বে। এটা জনগণের অভিপ্রায়। এটা সার্বভৌম ব্যাপারের কাছাকাছি হয়ে গেছে।'

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের ২৩তম দিনে এক বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ নামে যে খসড়া বিএনপির কাছে পাঠানো হয়েছে, সেখানে বাক্যগত কিছু অসামঞ্জস্য ছিল বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। 

তিনি বলেন, 'সেগুলো আমরা সংশোধন করেছি। সনদের প্রস্তাব আছে সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে এই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার জন্য। আমরা এটার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তারা বলেছিল এই প্রতিশ্রুতিগুলো পালনের জন্য, সংবিধানে ও বিভিন্ন আইনে, বিধি-বিধানে। সেখানে যা পরিবর্তন করতে হবে, সে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। আমরা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছি।'

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'এই সনদে শুধু কমিশন নয়, সব রাজনৈতিক দল সই করবে। এটি একটি জাতীয় ঐকমত্য। এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়। এটি আইনের চেয়েও বড়, এটি এক ধরনের "লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন অব দ্য পিপল"। জনগণের এই প্রত্যাশা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করার জন্য আমরা অঙ্গীকার করেছি।' 

তিনি বলেন, 'গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলনের পথ ধরে এই ঘোষণাপত্র এসেছে। সেটার বৈধতা আমরা সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেব। এটাকে যদি আমরা আইনে ভিত্তি না বলি তাহলে কোনটাকে বলব?'

সালাহউদ্দিন বলেন, 'আমরা প্রস্তাব করেছি উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা ও সুপারিশের কাজ করবে, কিন্তু কোনোভাবেই তারা সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার পাবে না।' 

তিনি বলেন, 'উচ্চকক্ষের সদস্যরা সরাসরি নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চিন্তা গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী। সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল সার্বভৌম জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হাতে থাকা উচিত।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রস্তাব করেছি, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের যৌথভাবে পাস হওয়া আইনের মধ্য দিয়ে একটি শেয়ারড লেজিসলেটিভ প্রসেস গড়ে উঠুক। উচ্চকক্ষ আইন পর্যালোচনা করবে, সুপারিশ করতে পারবে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে নিম্নকক্ষে। তবে আমরা উচ্চকক্ষের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।'

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, 'আমরা দেখছি কিছু পক্ষ সংবিধান সংশোধনকে কঠিনতর করতে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনির্বাচিত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে উচ্চকক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।'

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমরা আগেই প্রস্তাব করেছিলাম, ৭০ অনুচ্ছেদে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেই প্রস্তাব আজ গৃহীত হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমপিরা দলীয় চাপে থাকবেন না, গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে ভোট দেবেন। যদি উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিই থাকে, তাহলে উভয় কক্ষের সদস্যরা যৌথভাবে গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন।'

তিনি জানান, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি বর্তমানে শুধু প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে এ ক্ষমতার বাইরে রাষ্ট্রপতির আরও কিছু দায়িত্ব থাকা উচিত বলে বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে। আলোচনার পর তা প্রকাশ করা হবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সংসদে একটি মধ্যবর্তী বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং কমিশন এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেবে।'

এছাড়া, মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আলোচনাও এখনো চলছে। তিনি বলেন, 'আমরা চিন্তা করছি বিদ্যমান মৌলিক অধিকারের সঙ্গে আধুনিক সময়ের আলোকে কিছু অধিকার যেমন ইন্টারনেটের অধিকার যুক্ত করা যায় কি না। তবে মৌলিক অধিকার একবার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কারণ সংবিধানের ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে থাকা অধিকারগুলো সেল্ফ এনফোর্সেবল এবং ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকেরা তা প্রয়োগে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। তাই অত্যন্ত সচেতনভাবে নতুন কোনো অধিকার সংযোজন করতে হবে।'

সালাহউদ্দিন বলেন, 'আমরা আগেই জানিয়েছি যে পঞ্চম সংশোধনের মাধ্যমে গৃহীত রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত বাক্যটি যুক্ত করার ক্ষেত্রে আমরা একমত। এতে বলা হয়েছে—সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। তবে কিছু দলের আপত্তি থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরে আসবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

1h ago