২ বছর পর আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সাইকেল রপ্তানি

করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক মন্দার কারণে দুই বছর নিম্নমুখী থাকার পর বাংলাদেশের সাইকেল রপ্তানি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

সম্প্রতি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাইকেল রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ মিলিয়ন ডলারে—যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাইকেল রপ্তানি হয়েছিল ৮৩ মিলিয়ন ডলারের—যা ছিল গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

২০২১-২২ অর্থবছরে সাইকেল রপ্তানি হয় সর্বোচ্চ ১৬৮ মিলিয়ন ডলারের। মূলত লকডাউনের সময় ইউরোপে ব্যাপক চাহিদার কারণে সে বছর রপ্তানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। করোনা মহামারির মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা থাকায় যাতায়াত ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে সাইকেল।

দেশের অন্যতম বৃহৎ সাইকেল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব কোম্পানিজের চীফ অপারেটিং অফিসার মো. লুৎফুল বারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করোনা মহামারির সময় ইউরোপীয় বাজারে সাইকেলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। মূলত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ব্যক্তিগত চলাচল এবং একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব যাতায়াতের প্রতি মানুষের আগ্রহের কারণে এটা হয়েছিল।'

তিনি জানান, ২০২৩ সালে পরিস্থিতি হঠাৎই বদলে যায়। পুরো বিশ্বের অর্থনীতির চাকা আবারও চালু হলে বিশ্বব্যাপী সাইকেলের চাহিদা কমে যায় এবং খুচরা বিক্রেতাদের হাতে জমে যায় অতিরিক্ত মজুত। ফলে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের সাইকেল রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ১৪২ মিলিয়ন ডলারে এবং পরবর্তী অর্থবছরে আরও কমে যায়।

তিনি বলেন, 'ইউরোপের চলমান ভূরাজনৈতিক সংকট, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সাইকেলের বাজারে বড় আকারে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।'

শিল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন যে রপ্তানি বাড়ছে, সেটা বাজারে স্থিতিশীলতার প্রাথমিক ইঙ্গিত।

রপ্তানিকারকরা মনে করছেন, পরিবহন খরচ কমা, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি এবং কম খরচের টেকসই যাতায়াত ব্যবস্থার প্রতি নতুন করে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে রপ্তানিও বাড়ছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কয়েকটি বাংলাদেশি উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এখন হালকা ও বৈদ্যুতিক সাইকেলের মতো বিশেষ পণ্যের দিকেও ঝুঁকেছে।

মো. লুৎফুল বারী  বলেন, 'আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিচ্ছেন। যার কারণে রপ্তানি ধীরে ধীরে বাড়ছে।'

আরেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'সামগ্রিকভাবে আমরা রপ্তানিতে প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছি।'

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি নতুন বাজারে পণ্য পাঠাচ্ছি। আবার ইউরোপীয় বাজারে বিক্রি বেড়েছে মাঝারি মাত্রায়। একইসঙ্গে, আমাদের পণ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন এনেছি, যা রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'নতুন বাজারে ঢুকতে পারার ইতিবাচক ফল প্রবেশ ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তি বিক্রি আমাদের কোম্পানির সাম্প্রতিক রপ্তানি সাফল্যে বড় অবদান রেখেছে।'

কামরুজ্জামান কামাল উল্লেখ করেন, তাদের প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি বৈদ্যুতিক সাইকেল বাজারে আনলেও এগুলো একেবারে নতুন পণ্য না। বরং আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে বিদ্যমান পণ্যেরই পরিমার্জনের মাধ্যমে সেগুলো তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'পণ্যের আকার ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কিছু কারিগরি বিষয় ছিল। যেসব দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে, তাদের চাহিদা মোতাবেক সেগুলোর সমাধান করতে হয়েছে। এই সমন্বয়গুলো আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

প্রতিকূল আবহাওয়া, ইউরোপে চাহিদা কমে যাওয়া এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত কয়েক বছরে দেশের সাইকেল রপ্তানি যখন কমছিল, তখন এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ছে।

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'বর্তমানে ভূরাজনৈতিক পরিবেশ কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমও গতি পাচ্ছে। যার কারণে নতুন করে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।'

সম্প্রতি বাড়লেও বাংলাদেশের সাইকেল রপ্তানি এখনো ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ পিছিয়ে আছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের মতো কম খরচে উৎপাদনকারী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণে বাংলাদেশের উৎপাদকদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।

তবে, মো. লুৎফুল বারী আশাবাদ প্রকাশ করেন, বাজার স্থিতিশীল হলে এবং ক্রেতারা আবার কিনতে শুরু করলে সাইকেল খাত ধীরে ধীরে আরও ঘুরে দাঁড়াবে।

Comments

The Daily Star  | English

Remittance-rich Sylhet ranks poorest in new index

Long seen as the “London of Bangladesh” for its foreign earnings and opulent villas, Sylhet has been dealt a sobering blow. The country’s first Multidimensional Poverty Index (MPI) has revealed that the division is, in fact, the poorest in Bangladesh when measured by access to education, healthc

5h ago