রুগ্ন ৫ ইসলামি ব্যাংক একীভূত করার রূপরেখা শিগগির

শিগগির চিঠি পাঠিয়ে পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ইসলামি ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য সরকারের কাছে তুলে ধরবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত ব্যাংক একীভূতকরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের এটাই আনুষ্ঠানিক সূচনা।
গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চিঠিতে এই প্রক্রিয়াটির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ এবং ব্যাংকগুলোর শেয়ারের ভাগ্য নির্ধারণের বিষয়েও উল্লেখ থাকবে।
এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা চলছে এবং যথাসময়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
তিনি আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, 'আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে।'
সদ্য প্রণীত ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চারটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহমেদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, ইউনিয়ন ব্যাংকের মো. ফরিদউদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মোহাম্মদ নুরুল আমিন এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এম সাদিকুল ইসলাম।
এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম স্বপন দাবি করেন, তিনি এই সভার জন্য আমন্ত্রণ পাননি। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমাদের ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা অন্যান্য দুর্বল ব্যাংকের চেয়ে ভালো। এ কারণে আমরা একীভূতকরণে আগ্রহী না। আমরা বিভিন্নভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই প্রক্রিয়া থেকে আমাদের বাদ দিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা আমাদের আবেদন গ্রহণ করছে না।'
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, 'এই সভা একীভূতকরণ উদ্যোগের অংশ। প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করার জন্যই এই সভা হয়েছে।'
সভায় উপস্থিত একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকার কয়েক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে এবং ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠাবে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফরিদউদ্দিন জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর তাদের মতামত নিয়েছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন যে, উদ্যোগটি আইনগতভাবে সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক মতিঝিলের সেনা কল্যাণ ভবনে একটি কার্যালয় স্থাপন করবে।
এই পাঁচটি ব্যাংক আবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারল্য সহায়তা চেয়েছিল। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা দেয়নি। একীভূতকরণের সময়ও কোনো নতুন অর্থ দেওয়া হবে না।
বৈশ্বিক অডিট প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি ও আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং পরিচালিত ফরেনসিক অডিটে দুর্বল আর্থিক অবস্থা প্রকাশ পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুনে এই পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সম্পদ গুণগত মান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ পূর্বে ঘোষিত সংখ্যার চার গুণ বেশি।
একীভূতকরণ শুরু হলে ব্যাংকগুলোকে অস্থায়ীভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে।
Comments