ফুটবল ছাড়া ভাবতেই পারি না: স্বপ্না

একসময় ছিলেন প্রান্তিক পর্যায়ের খেলোয়াড়, অথচ গত দশ মাসে বাংলাদেশ নারী ফুটবলের সিনিয়র ও অনূর্ধ্ব-২০ দুই দলেই অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী। ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে সাফ শিরোপাও জিতেছেন তিনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের এই মেয়ে একসময় নানা খেলাধুলায় যুক্ত থাকলেও ২০১৭ সালে পা রাখেন ফুটবলে, আর পিছনে তাকাতে হয়নি কখনও। বয়সভিত্তিক দল পেরিয়ে আজ তিনি হয়ে উঠেছেন পরিণত, বহুমুখী ও বুদ্ধিদীপ্ত মিডফিল্ডার, যার খেলার মেধা বয়সকেও হার মানায়।

দ্য ডেইলি স্টারের আনিসুর রহমানের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তাঁর যাত্রাপথ, মানসিকতা ও নানা অভিজ্ঞতার কথা। সংক্ষেপিত সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো—

দ্য ডেইলি স্টার: ২০২২ ও ২০২৪— দুইবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এ বছর আপনি পেলেন দুইটি ঐতিহাসিক সাফল্যের অংশীদার হওয়ার সুযোগ, সিনিয়র দল ও অনূর্ধ্ব-২০ দল দুই দলই এশিয়ান কাপে খেলবে। আপনি কীভাবে দেখছেন এই অর্জন?

স্বপ্না রানী: আমার ক্যারিয়ারের বড় সাফল্যগুলোর একটি। ২০২২ সালে প্রথম সাফ জেতা দলেরও সদস্য ছিলাম। দুই মিশনই কঠিন ছিল, কারণ প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অনেক আগেই, টুর্নামেন্টের অনেক আগে থেকেই।

ডেইলি স্টার: কোন অভিযানটি বেশি কঠিন লেগেছে, মায়ানমার নাকি লাওস?

স্বপ্না: লাওসে অনূর্ধ্ব-২০ টুর্নামেন্টটা বেশি কঠিন ছিল। স্বাগতিক দল সব দিক থেকেই শক্তিশালী ছিল, বিশেষ করে ফিটনেসে। আমরা আগে তাদের সঙ্গে খেলিনি, তাই প্রথম ম্যাচে কী অপেক্ষা করছে তা জানতাম না, ভয়ও বেশি ছিল, এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষের ম্যাচের চেয়েও। তবে খেলা যত এগোতে থাকে, আত্মবিশ্বাসও বাড়তে থাকে।

ডেইলি স্টার: আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন মনে হচ্ছে?

স্বপ্না: আমাদের গ্রুপে উজবেকিস্তান, চীন ও উত্তর কোরিয়া— সবাই র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের ওপরে। উজবেকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের জন্য লড়ব, তবে বাকি দুই দল হবে বিশাল চ্যালেঞ্জ।

ডেইলি স্টার: কী ধরনের প্রস্তুতি দরকার?

স্বপ্না: আমরা ফেডারেশনকে জানিয়েছি বিদেশে প্রশিক্ষণ ও যত বেশি সম্ভব শক্তিশালী দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হবে।

ডেইলি স্টার: ফুটবলে আপনার শুরুর গল্পটা বলুন।

স্বপ্না: স্কুল ক্রিকেটে ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে খেলতাম, তাই ডাকনাম ছিল 'শচীন টেন্ডুলকার'। ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, অ্যাথলেটিক্সও খেলেছি। ২০১৭ সালে এক আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টে রঙাতুলি একাডেমি আমাকে দেখে। এক বছর পর বিকেএসপি আমাকে বেছে নেয়, কিন্তু অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারিনি। পরে জয়া চাকমা পুরো স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেন। ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে ডাক পাই। শুরুতে কোচ পল স্মলির অধীনে ফরোয়ার্ড বা উইঙ্গার হিসেবে খেলতাম, পরে মিডফিল্ডে রক্ষণভিত্তিক ভূমিকায় অভ্যস্ত হই।

ডেইলি স্টার: সিনিয়র দলে জায়গা পাওয়া কি কঠিন ছিল?

স্বপ্না: (কোচ) বাটলার স্যার শৃঙ্খলা ও পারফরম্যান্সকে খুব গুরুত্ব দেন, তাই জায়গা পাকা করতে হলে আমাকে বাড়তি পরিশ্রম ও দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

ডেইলি স্টার: আপনার সৃজনশীল মিডফিল্ড খেলার ধরন কীভাবে তৈরি হয়েছে?

স্বপ্না: মিডফিল্ড হচ্ছে খেলার হৃদপিণ্ড, এখানেই খেলায় নিয়ন্ত্রণ ও শক্তি রাখতে হয়। আমি মনিকা (চাকমা) আপু ও টনি ক্রুসকে অনুসরণ করি।

ডেইলি স্টার: আপনার দূরপাল্লার শটগুলো সবার নজর কাড়ে। এর পেছনের গল্প?

স্বপ্না: কোচরা সবসময়ই আমাকে দূর থেকে শট নিতে উৎসাহ দেন। মিডফিল্ডার হিসেবে সব সময় আক্রমণে ওঠা সম্ভব হয় না, তাই সুযোগ পেলেই দূর থেকে শট নিই। শৈশবের কোচ রঙাতুলির সুধা স্যার আমাকে প্রথম দূরপাল্লার শট নিতে শেখান, পরে বিকেএসপি ও জাতীয় দলের ক্যাম্পে আরও উন্নতি করি।

ডেইলি স্টার: গোল করা নাকি করানো, কোনটায় বেশি আনন্দ পান?

স্বপ্না: দুটোই ভালো লাগে, তবে মিডফিল্ডার হিসেবে অন্যদের দিয়ে গোল করাতে বেশি তৃপ্তি পাই। সত্যি বলতে, বাংলাদেশে স্ট্রাইকাররা মিডফিল্ডারদের তুলনায় বেশি প্রশংসা পায়, অথচ গোলের সুযোগ তৈরি তো আমরাই করি।

ডেইলি স্টার: আপনার ফুটবল যাত্রা নিয়ে এখন সন্তুষ্ট?

স্বপ্না: ছোটবেলায় মজা করে খেলতাম, এখন এটা আমার পেশা, যা ছাড়া ভাবতেই পারি না। ফুটবল আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।

ডেইলি স্টার: ফুটবল কি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে?

স্বপ্না: হ্যাঁ। সাফ জেতার পর আর্থিকভাবে পরিবারকে সহায়তা করতে পেরেছি। ভালো লাগে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে।

ডেইলি স্টার: পরিবার নিয়ে কিছু বলুন।

স্বপ্না: আমরা ছয়জনের পরিবার। বাবা হৃদরোগের কারণে কাজ করতে পারেন না, তাই পরিবারের দায়িত্ব আমার ওপর। কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় হওয়ায় সবসময়ই চেয়েছি ফুটবলের মাধ্যমে বাবা-মাকে খুশি করতে।

ডেইলি স্টার: এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে, ফুটবল ও পড়াশোনা কীভাবে সামলাচ্ছেন?

স্বপ্না: অনুশীলনের পর পড়াশোনা কঠিন, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য পড়াশোনা জরুরি, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য।

ডেইলি স্টার: সিনিয়র দলের কয়েকজন খেলোয়াড় ভুটানে খেলছেন। আপনাকেও কি বিদেশে দেখা যাবে?

স্বপ্না: হ্যাঁ, এই সপ্তাহেই ভুটানে যাচ্ছি, আরটিসি ক্লাবে খেলব। শুনেছি পাহাড়ি উচ্চতায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে, তবে আমি রোমাঞ্চিত। বিদেশে খেলা আমার স্বপ্ন ছিল।

ডেইলি স্টার: ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

স্বপ্না: অনেক খেলোয়াড়ের মতো আমিও স্বপ্ন দেখি ইউরোপের কোনো লিগে খেলার।

Comments

The Daily Star  | English

Engineer Mosharraf Hossain freed after getting bail in all cases

The former Awami League lawmaker was sent to jail on October 27 last year after being arrested in cases related to attacks on protesters during the July uprising last year

1h ago