জাতীয় লিগ জেতার পরও সিলেটের ক্রিকেটে নতুন জোয়ার নেই

বাইরের দিক থেকে তাকালে মনে হয় সিলেটে ক্রিকেট দারুণ জমজমাট। প্রথম শ্রেণির প্রতিযোগিতা জাতীয় ক্রিকেট লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সিলেট বিভাগ। গত মৌসুমে তারা প্রথমবারের মতো এই শিরোপা জিতেছে। এ অঞ্চলের অনেক খেলোয়াড়—যেমন জাকির হাসান, তানজিম হাসান সাকিব, নাসুম আহমেদ, জাকের আলি অনিক, ইবাদত হোসেন ও খালেদ আহমেদ—বর্তমানে বাংলাদেশ দলের হয়ে বিভিন্ন ফরম্যাটে খেলছেন।

কিন্তু জাতীয় লিগের শিরোপার চাকচিক্য আর জাতীয় দলে তারকা তৈরির গর্বের আড়ালে লুকিয়ে আছে ভেঙেচুরে যাওয়া এক ক্রিকেট কাঠামো, যা ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ছে। সামনে বোর্ড নির্বাচন নিয়ে আলোচনা মাঠের খেলার উন্নয়নকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

দুঃখজনক অবস্থা

অক্টোবরে জাতীয় লিগ জয়ের পর এই অঞ্চলের ক্রিকেটে সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রতিযোগিতামূলক লিগ এবং কাঠামোবদ্ধ প্রতিভা সন্ধান কর্মসূচির দাবি ছিল প্রবল।

কিন্তু জাতীয় লিগে শিরোপা জয়ের পরও কাঙ্ক্ষিত সুবিধা আসেনি। বরং গত এক বছর সিলেট ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি হয়ে গেছে। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের প্রেক্ষিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিলুপ্ত করে দেয়।

এরপর চলতি বছরের জুন থেকে এনএসসি গঠিত ১১ সদস্যের অ্যাড-হক কমিটি সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা পরিচালনা করছে। বিভাগটির চারটি জেলাতেও এখন অ্যাড-হক কমিটি কার্যকর রয়েছে।

কিন্তু স্থানীয় সংগঠক ও কোচদের মতে, এই কমিটি গঠনের আগে দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অঞ্চলের ক্রিকেট স্থবির হয়ে গেছে। সিলেট বিভাগীয় দলের ম্যানেজার আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী অনি শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টার-কে বলেন, 'গত মৌসুমে জাতীয় লিগের শিরোপা জেতার পর সিলেটে কোনো কর্মসূচি বা প্রতিযোগিতা হয়নি।'

তিনি জানান স্থানীয়দের জন্য সিলেটের আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ মেলে না, 'সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম মূলত জাতীয় দল, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার এবং অন্যান্য কর্মসূচির জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্য খেলোয়াড়দের জন্য কোনো সুযোগ নেই। জেলা স্টেডিয়াম আবার ফুটবল, হকি ও অন্যান্য খেলাধুলার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হয়।'

তিনি উল্লেখ করেন, 'একসময় শহরের প্রতিটি এলাকায় সিমেন্টের উইকেট ছিল। এখন শহর ঘুরলে দুই-চারটির বেশি উইকেট দেখা যায় না। গত কয়েক বছরে এলাকাভিত্তিক দলগুলোও হারিয়ে গেছে।'

সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট—সিলেট জেলা ক্রিকেট লিগ—গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি বলেও জানান অনি, 'দেশের পরিস্থিতির কারণে গত বছর এই লিগ হয়নি। গত ৩৫ বছরে প্রায় প্রতি বছরই এই লিগ হয়েছে। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে কোনো লিগ নেই। সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ১২–১৩ বছর ধরে লিগ হয় না। অথচ সেখানকার লোকজন বোর্ডের কাউন্সিলর হিসেবে যায় কোনো কাজ না করেই।'

এই দীর্ঘ স্থবির সময়ে সিলেটের ক্রিকেট প্রশাসকদের এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত খেলা পুনর্জীবিত করা। কিন্তু এখন সিলেট ক্রিকেট প্রশাসনের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হলো আসন্ন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নির্বাচন।

জানা গেছে, সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাড-হক কমিটির তিন সদস্য—ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, রাহাত শামস এবং এনামুল হক জুনিয়র—অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে একমাত্র বিভাগীয় কাউন্সিলর হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে কাউন্সিলর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিভাগীয় দলের প্রধান কোচ রাজিন সালেহর।

একজন স্থানীয় সংগঠক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আগে একটি মাত্র গ্রুপ ছিল। এখন অনেক গ্রুপ হয়েছে, পরিস্থিতি ভিন্ন… বিভিন্ন ধরনের চাপ রয়েছে, তাই কাউন্সিলর নির্ধারণের আগে কর্তৃপক্ষকে অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'

আগামী ১ সেপ্টেম্বর সিলেটে বিসিবির বোর্ড সভা বসবে। ৭ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় সংস্থা জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন দলকে সংবর্ধনা দেবে। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল উভয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

অনেকে মনে করেন, এই সফরই কাউন্সিলরশিপের জট মেটানোর আদর্শ প্রেক্ষাপট হতে পারে। তবে অ্যাড-হক কমিটির সদস্য রহাত দাবি করেছেন, তারা এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সভাপতি থেকে সিলেট ক্রিকেটের উন্নয়ন পরিকল্পনার অনুমোদন নিতে চান, 'আমরা বিসিবি সভাপতির "ট্রিপল সেঞ্চুরি" পরিকল্পনাকে নয়টি খণ্ডে ভাগ করেছি। এর মধ্যে কোচিং উন্নয়ন, স্কুল ক্রিকেট উন্নয়ন, নারী ক্রিকেট উন্নয়ন, আঞ্চলিক ক্রিকেট ব্র্যান্ডিং, টেকসই অর্থায়ন ও স্টেকহোল্ডার ব্যবস্থাপনা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে বিসিবির অনুমোদন পাওয়ার পর।

'আমরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৩৫০ জনকে আমন্ত্রণ জানাব, যার মধ্যে থাকবেন বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার। আমরা সিলেট ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহের চেষ্টা করব।'

Comments