বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ ২০১৭

রোমাঞ্চকর সাকিবে ঐতিহাসিক জয়

তাইজুলের বল সোজা গিয়ে হ্যাজলউডের প্যাডে লাগলো। জোরালো আবেদন। তার আগেই মিরপুর স্টেডিয়াম যেন উল্লাসে কাঁপছে। দিগ্বিদিক ছুটছেন ক্রিকেটাররা। প্রায় এক যুগ আগে কেঁদে কেঁদে মাঠ থেকে বেরুনো ফতুল্লার হাবিবুল বাশারদেরকে যেন মনে করিয়ে দিল। বাংলাদেশ সব হিসাব চুকিয়ে দিয়েই যেন অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়েছে। নায়ক সেই ক্ষিপ্র, বেপরোয়া, রোমাঞ্চকর সাকিব আল হাসান। ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট। ব্যাট হাতে অবদান ৮৯ রানের।
Bangladesh cricket team
ঢাকার মিরপুরে শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ (৩০ আগস্ট) বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে সফরকারীদের হারিয়ে দেয় মুশফিক বাহিনী। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তাইজুলের বল সোজা গিয়ে হ্যাজলউডের প্যাডে লাগলো। জোরালো আবেদন। তার আগেই মিরপুর স্টেডিয়াম যেন উল্লাসে কাঁপছে। দিগ্বিদিক ছুটছেন ক্রিকেটাররা। প্রায় এক যুগ আগে কেঁদে কেঁদে মাঠ থেকে বেরুনো ফতুল্লার হাবিবুল বাশারদেরকে যেন মনে করিয়ে দিল। বাংলাদেশ সব হিসাব চুকিয়ে দিয়েই যেন অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়েছে। নায়ক সেই ক্ষিপ্র, বেপরোয়া, রোমাঞ্চকর সাকিব আল হাসান। ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট। ব্যাট হাতে অবদান ৮৯ রানের।

ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টে সাকিব-তামিমকে জয় উপহার দিতে চেয়েছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। উল্টো সেই সাকিব-তামিমই জয় উপহার দিলেন দেশকে, উপহার দিলেন নিজেদেরকেও।

অথচ বুধবার (৩০ আগস্ট) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচের চতুর্থ দিন প্রথম প্রায় এক ঘণ্টা আভাস মিলছিলো অন্ধকারের। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নার উইকেটে জমে গেলেন। এশিয়ার মাঠে কখনো বড় ইনিংস না খেলা ওয়ার্নার যেন বেপরোয়া গতিতে রান বাড়াতে থাকলেন। তাঁর আগ্রাসন দেখে কুঁচকে গেলেন মুশফিক। বাউন্ডারিতে নিয়ে গেলেন তিন ফিল্ডার। অসমান বাউন্সি পিচে বল লাফিয়ে উঠছে। তা দেখেও সিলি মিড অনে রাখলেন না কাউকে। ৯৮ রানের মাথায় সেখানেই ক্যাচ দিলেন ওয়ার্নার। ধরার কেউ নেই। ম্যাচ কি তবে ফসকেই যাচ্ছে। চিন্তার রেখা গাঢ় হলো।

সব বুঝেই মঞ্চে আবির্ভাব সাকিব আল হাসানের। জানেন কি করতে হবে। নিজেই দায়িত্বটা নিলেন। পর পর আউট করলেন ১১২ রান করা ওয়ার্নার আর ৩৭ রান করা স্মিথকে। এরপর আর ঠেকায় কে। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে অসিদের প্রতিরোধ। মিরপুরের পিচ মনে করিয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই টেস্টকে। ২৭৩ রানের টার্গেটে ওপেনিং জুটিতেই ইংল্যান্ডের ১০০ রান। পরের সেশনে ১৬৫ তেই অল আউট। ঠিক যেন অ্যাকশন রিপ্লে হলো আবার। দুই উইকেটেই দেড়শ পেরিয়ে টার্গেটের দিকে ছুটে যাচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়া। ৮৬ রানেই পড়ল শেষ আট উইকেট। ২৪৪ রানেই শেষ অস্ট্রেলিয়া। লাঞ্চের আগেই পড়েছিলো সাত উইকেট। খেয়ে দেয়ে এসে বাকি তিন উইকেট নিতে আর সময় নেননি সাকিব-তাইজুলরা। মাঝে খানিকটা জ্বালাতন করেছেন টেল এন্ডার প্যাট কামিন্স।

ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার পর অস্ট্রেলিয়া। ওয়ানডেতে রাগব বোয়ালদের পাশেই এখন উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের নাম। সাদা পোশাকে এতদিন মিনমিনে ভাব ছিলো। সাকিব-তামিমদের ক্ষিপ্রতায় তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। এখন সাদা পোশাকেও তাগড়া হয়ে খেলতে জানে বাংলাদেশ। ব্যাগি গ্রিন ক্যাপধারীদের হারিয়ে জানান দেওয়া গেল তা। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অপরাজেয় – সাকিবের হুঙ্কার আপাতত বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে না।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে চায় না অস্ট্রেলিয়া। হাতে পায়ে ধরেই যেন এবার রাজি করানো গেল। বাংলাদেশ পুচকে, এদের সঙ্গে খেলে লাভ কি। নিরাপত্তার শঙ্কার বাইরে এসবও কারণ। সেসব তাচ্ছিল্যের যেন জবাব দিলেন সাকিবরা। ক্রিকেট কূটনীতিতে যাই করুন, মাঠের মুন্সিয়ানাই তো আসল কথা বলে।

আরও পড়ুনঃ যে রেকর্ডে সাকিব আছেন একাই

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস: ২৪৪/১০ (৭০.৫ ওভার) (ওয়ার্নার ১১২, স্মিথ ৩৭, কামিন্স ৩৩* ; সাকিব ৫/৮৫, মিরাজ ২/৮০, তাইজুল ৩/৬০)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ২২১/১ (৭৯.৩ ওভার) (তামিম ৭৮, মুশফিক ৪১; লায়ন ৬/৮২, অ্যাগার ২/৫৫)।

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ২১৭/১০ (৭৪.৫ ওভার)।

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৬০/১০ (৭৮.৫ ওভার)

ম্যাচের ফল: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাকিব আল হাসান

সিরিজ: ২ টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ তে এগিয়ে।



আরও পড়ুনঃ 
ঘরের মাঠে বাংলাদেশ খুবই বিপদজনক: স্টিভেন স্মিথ​

Comments

The Daily Star  | English

Mob justice is just murder

Sadly, when one lynching can be said to be more barbaric than another, it can only indicate the level of depravity of some our university students

1h ago