সরকারের জ্বালানি নীতি অযৌক্তিক

গত শনিবার জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড বৃদ্ধিতে বেড়ে গেছে বাস ও লঞ্চ ভাড়া। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে মধ্যম ও নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এটা এক বড় ধাক্কা।

আমরা বার বার সতর্ক করেছি যে, জ্বালানির দাম এত বাড়ালে জনসাধারণের ওপর তা যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বাস ও লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো এর শুরু মাত্র।

ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর একদিন পর সরকার বাস ভাড়া ২২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। রোববার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও, ঘোষণার পরপরই পরিবহনগুলো নতুন ভাড়া আদায় শুরু করে।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে শনিবার অনেক যানবাহন বন্ধ থাকে। সেদিন গাড়ি কম থাকায় যাত্রীদের একদিকে যেমন সারাদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, পাশাপাশি বাস পেলেও সেগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে।

আমাদের আগেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবুও যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে সরকারের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এটি পুরো বিষয়টির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তার একটা ইঙ্গিত দেয়।

আরও উদ্বেগের বিষয় এই যে, সরকার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম আরও বাড়ানোর কথা বলেছে। যদিও সম্প্রতি ২২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারকরা ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছেন যে, অল্প সময়ে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসা ও রপ্তানির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে, যা অর্থনীতিকে আরও বাধাগ্রস্ত করবে।

আবার জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আসি। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম ছিল, ভোক্তারা তার কোনো সুবিধা পায়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তখন বেশি দামে জ্বালানি বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করেছে। মুনাফার অর্থ দিয়ে মূল্য সমন্বয় করার পরিবর্তে সরকার পাইপলাইন নির্মাণ জাতীয় কাজে লাভের অর্থ বিনিয়োগ করেছে।

কিন্তু এ ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগ করা সরকারের অন্যান্য সংস্থার দায়িত্ব। কেন এবং কীসের ভিত্তিতে তারা তখন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে? এ বিনিয়োগের কোনো ভালো ফল তারা দেখাতে পারছে?

সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও ত্রুটিপূর্ণ নীতির মূল্য জনগণের ওপর চাপানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে জ্বালানি খাতে ঠিক এমনটাই হয়ে আসছে।

জনগণকে বর্তমানে যে মূল্যস্ফীতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, এরমধ্যে সাম্প্রতিক জ্বালানি তেলের এই মূল্যবৃদ্ধি এবং এর পরবর্তী প্রভাব তাদের একেবারে কোণঠাসা করে ফেলেছে।

তাই এ অবস্থায় সরকারের উচিত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অর্থাৎ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানিসহ অন্যান্য পরিষেবার মূল্য বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পুনর্বিবেচনা করা। পাশাপাশি যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে, তাই জ্বালানি তেলের দাম কমানো উচিত।

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশে দাম বাড়াতে হবে, কিন্তু কমলে কখনোই কমানো হবে না, এমন চর্চা বন্ধ করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Exports stuck in EU, US orbit

For years, policymakers and businesses have talked about diversifying the country’s export basket and destinations. Yet little has changed. Despite generous government incentives, shipments rely heavily on a few products and markets.

55m ago