ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ম্রো সম্প্রদায়কে রক্ষা করুন

ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ম্রো সম্প্রদায়কে রক্ষা করুন

বান্দরবানের লামা উপজেলার একটি গ্রামে ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। হামলাকারীরা ওই এলাকার একটি রাবার বাগানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ উঠেছে এবং মনে হচ্ছে তাদের লক্ষ্য এসব জাতিসত্তাকে ভয় দেখিয়ে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা। 

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুসারে, যারা হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। এ ছাড়া হামলার বিষয়ে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক কামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, গ্রামবাসীরা ৪০০ একর জমিতে নতুন বাড়ি-ঘর তৈরি করছে, যেটা কোম্পানির জমি, ওই সম্প্রদায়ের নয়। অন্যদিকে, ম্রো সম্প্রদায়ের দাবি বিবদমান জমিটি তাদের পৈতৃক সূত্রে পাওয়া।

এরচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো বিষয় হলো- এ সম্প্রদায়ের ওপর এবারই যে প্রথমবারের মতো এ ধরনের হামলা হলো তা নয়। এর আগের প্রতিবেদনগুলোতে দেখা গেছে, কোম্পানিটি ওই জমি দখলের জন্য অনেক দিন ধরেই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে। কোম্পানির কর্মচারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছরের ২৬ এপ্রিল ৩টি গ্রামের মানুষের জমিতে আগুন দিয়ে ৩০০ একরের বেশি জমির ফসল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত ৬ সেপ্টেম্বর রেঙ্গিয়ান ম্রো পাড়ার কাছে পাহাড়ের একটি ছোট জলপ্রবাহে বিষ প্রয়োগ করা হয় বলেও দাবি করেন তারা। 

এগুলো সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাই, ম্রো সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য বারবার আবেদন সত্ত্বেও রাষ্ট্র অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে।

এ বিষয়টিকে যেটি বিশেষভাবে জটিল করে তুলেছে তা হলো, ম্রো সম্প্রদায়ের সদস্যদের তাদের পৈতৃক জমিতে অধিকার নেই, তার কারণ জমির মালিকানা তাদের হস্তান্তর করা হয়নি। এর পরিবর্তে, রাষ্ট্র এমন কোম্পানিগুলোর কাছে জমির মালিকানা হস্তান্তর করছে, যারা তাদের বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলোর জন্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সদস্যদের উচ্ছেদ করছে। এই ব্যবসায়িক স্বার্থগুলো প্রায়শই শক্তিশালী মহলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে অপরাধীরা দায়মুক্তির সঙ্গে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাতে সক্ষম হয়। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে তাদের জমির অধিকার হস্তান্তর করার জন্য রাষ্ট্রকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, কেউ যেন তাদের পৈতৃক জমি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে না পারে।

শুধু যে ম্রো গ্রামের জমিই হুমকির মুখে পড়েছে তা নয়। ১৯৯৭ সাল থেকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলো বিভিন্ন বেসরকারি রাবার বাগানের মালিক এবং কৃষি উদ্যানকারীদের কাছে তাদের জমি হারিয়েছে। মধুপুর এবং দিনাজপুরের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সদস্যদেরও একই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তাদের ওপর এমন দমন-পীড়ন নিন্দনীয়।

এটা স্পষ্ট যে- পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা, বিশেষ করে ওই অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ভূমি মালিকানা আইন তাদের নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে এবং আগ্রাসন ও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। 

আমরা রাষ্ট্রকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি অবশ্যই বাংলাদেশের ম্রো সম্প্রদায়ের ওপর ক্রমাগত হুমকি এবং হামলার তদন্ত, অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যে পরিবারগুলো ভয়ের মধ্যে জীবনযাপন করছে তাদের সুরক্ষা প্রদানে ব্যবস্থা নিন।

 

লামায়

 

Comments

The Daily Star  | English

PSC announces major changes to ease BCS recruitment process

The PSC chairman says they want to complete the entire process — from prelims to recruitment — in 12 months

4h ago