ইরানের সাম্প্রতিক আন্দোলন ও বাংলাদেশে ‘বেআব্রু নারী শিকার’ প্রসঙ্গে

এবড়ো-থেবড়ো একটি জায়গায় গর্ত খুঁড়ে, হাত পা বেঁধে একটি মেয়েকে সেখানে নামানো হলো। পরণে তার সাদা কাপড়। গর্তে মেয়েটিকে কোমর পর্যন্ত পুঁতে চারপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হলো। এরপর দূর থেকে পাথর ছোঁড়া হলো তাকে লক্ষ্য করে।

এবড়ো-থেবড়ো একটি জায়গায় গর্ত খুঁড়ে, হাত পা বেঁধে একটি মেয়েকে সেখানে নামানো হলো। পরণে তার সাদা কাপড়। গর্তে মেয়েটিকে কোমর পর্যন্ত পুঁতে চারপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হলো। এরপর দূর থেকে পাথর ছোঁড়া হলো তাকে লক্ষ্য করে।

প্রথম পাথরটি ছুঁড়ে মারেন সুরাইয়া নামের মেয়েটির বাবা। তারপর এক এক করে সবাই। এমনকি সুরাইয়ার ২ ছেলেকেও পাথর ছুঁড়তে বাধ্য করা হলো মায়ের দিকে। ক্রমশ সুরাইয়ার দেহ লুটিয়ে পড়ে। চারদিক ছিটকে পড়ে রক্ত। মাথা ফেটে মগজ বেরিয়ে এলো। শেষ নিঃশ্বাস ফেলা পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করলো এবং পাথর মারতেই থাকলো।

ইরানের একটি ছোট গ্রামের গৃহবধূ সুরাইয়াকে ব্যভিচারের দায়ে এভাবেই হত্যা করা হয়েছিল। তার স্বামী ১৪ বছরের একটি শিশুকে দ্বিতীয় বিয়ে করবে বলে সুরাইয়ার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল। দেশের নিয়ম অনুযায়ী সুরাইয়াকে এভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

ইরানে সুরাইয়াকে দেওয়া শাস্তির ওপর ভিত্তি করে 'দ্য স্টোনিং অব সুরাইয়া এম' নামে ২০০৮ সালে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। এর প্রায় ১৮ বছর আগে এই কষ্টদায়ক ঘটনার ওপর বই লিখেছিলেন একজন ইরানি লেখক। যেকোনো তুচ্ছ অপরাধে ইরানে নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার হার অনেক বেশি। সঙ্গে আছে অনার কিলিং ও সতীত্বের সার্টিফিকেট গ্রহণ। পরিবার ও সমাজ নারীকে অন্তরীণ করে রাখে এবং সময়ে সময়ে শাস্তি দেয়। যেমনটা দিয়েছিল মাশা আমিনকে। মাশার মৃত্যু না হলে, হয়তো এভাবেই চলতো সবকিছু।

এক অনুষ্ঠানে ব্যাংকক গিয়ে দেখা হয়েছিল ইরানি কমিউনিকেশন স্পেশালিষ্ট জাহরার সঙ্গে। ২০১২ বা ২০১৩ সালের ঘটনা বলে তার পুরো নামটা মনে করতে পারছি না। কিন্তু জাহরার কথা মনে আছে অন্য একটা কারণে। প্রথম দিন অনুষ্ঠান স্থলে তাকে দেখে আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। তার পরণে ছিল স্কার্ট টপস, হাইহিল, কার্লি চুল ছিল রং করা। ইরানি মেয়ে হিসেবে ভেবেছিলাম বোরকাধারী হবে। কিন্তু না, তিনি পুরোই বিপরীত।

নানা বিষয়ে কথা বলতে বলতে দারুণ স্মার্ট, আড্ডাবাজ ও আমুদে জাহরাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি ইরানের মেয়ে হয়েও এমন পোশাক পরছেন কিভাবে? জাহরা বলেছিলেন, 'এই পোশাক আমাদের পছন্দের হলেও দেশে মোল্লাতন্ত্র আসার পর আমাদের ওপরে বোরকা লেবাস চড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমরা যারা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাই, তারা প্লেনে উঠেই বোরকা খুলে ফেলি, ঘরেও পরি না। আবার যাওয়ার সময় প্লেন থেকে নামার আগে পরে ফেলি। বলো, জোর করে কি বিধিনিষেধ পালন করানো যায় মানুষকে?'

জাহরার কথা সত্য প্রমাণিত হলো ২০২২ সালে এসে। ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভে ইরানে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন বলে জানা গেছে। কঠোর পোশাক বিধি এবং তা বলবৎ করার দায়িত্বে যারা আছে, তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠা নারীরা প্রতিবাদস্বরূপ তাদের হিজাব পুড়িয়ে ও চুল উড়িয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অন্যান্য দেশে বসবাসকারী ইরানি নারীরা তাদের চুলও কেটে ফেলছেন। ইরানে পুরুষরাও এখন নারীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।

মাশা আমিনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, দেশটিকে বহু বছরের মধ্যে এবার মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা মনে করছেন, এখনই যদি স্বৈরাচারী মনোভাব ও আচরণকে রুখে দেওয়া না হয়, তাহলে একদিন তাদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।

বাংলাদেশে যারা মর‌্যাল পুলিশিং বা নৈতিক পুলিশের পক্ষে, তাদের অনেককেই দেখছি ইরানে পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় তরুণীর মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করছেন। ওই তরুণীর হিজাব পরার নিয়ম মানবে না, তাহলে কি পুলিশ তাকে কোলে তুলে রাখতে হবে?— এই ধরণের জঘন্য মন্তব্যও করছে মানুষ নিউজ কমেন্টে।

যারা এ ধরণের কুৎসিত মনোভাব পোষণ করেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু কত বড় অপরাধ। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর পক্ষে যারা আজকে তালি বাজাচ্ছেন, তাদেরই পরিবারের কাউকে যদি পুলিশ হেফাজতে মারা যেতে হয়, তিনি নারী বা পুরুষ যেই হোক, তারা কি তখন তালি বাজাতে পারবেন? যেকোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করা অপরাধ। নিজের ঘরে আগুন লাগলে কতটা আপোষ করতে পারবেন আপনারা?

ইরানে নারীদের ওপর এই 'হিজাব ঠিকমতো পরা না পরা'টাই একমাত্র নিপীড়ণ নয়। রেজা শাহ পাহলভীর বিদায়ের পর থেকেই শুরু হয়েছিল কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নিপীড়ণ। মূলত ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর ইরানি সমাজে নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রেজা শাহ তার শাসনামলে ইরানকে করে তুলেছিলেন একটি আধুনিক রাষ্ট্র। সেইসময় যে ২ জন নারী মন্ত্রী হয়েছিলেন, তাদেরই একজন ছিলেন নারী অধিকার নেত্রী মাহনাজ আফকামি। তিনি নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে কয়েকটি যুগান্তকারী আইন পাশ করেছিলেন। যেমন, তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সমান অধিকার, মেয়েদের বিয়ের নূন্যতম বয়স ১৮ এবং কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি। পোশাকের ক্ষেত্রেও ছিল না কোনো বিধিনিষেধ। ইরানি গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, শিল্প— সবকিছু ছিল উৎকর্ষতার শীর্ষে। কিন্তু রেজা শাহের সরকারের পতন এবং খোমিনির বিপ্লব নারী সমাজের জন্য কালো যুগ নিয়ে আসে।

মাহনাজ আফকামি তখন আমেরিকাতে সরকারি সফরে ছিলেন। খোমিনির হাত থেকে তিনি বেঁচে গেলেও, অপর নারী মন্ত্রী ফারুক পারসাকে ফাঁসি দেওয়া হলো। তাকে 'বেশ্যা' বলা হলো, কারণ তিনি নারীদের ঘর থেকে বের করে এনেছিলেন। তার ফাঁসিও কার্যকর করা হলো ইরানের একটি যৌনপল্লীতে। সেইসঙ্গে সবধরনের আধুনিক পারিবারিক আইন বাতিল করা ও নারীকে গৃহে অন্তরীণ করার মাধ্যমে ইরানকে পিছিয়ে নেওয়া হয়েছিল হাজার বছর।

আমরা যদি এখন আমাদের সমাজের দিকে চোখ রাখি, দেখবো সেখানেও একধরনের নারী বিদ্বেষী মনোভাব দাঁনা বেঁধেছে। দেশের নানা ধরনের সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে একটি গোষ্ঠী শুধু নারীর পোশাককে দায়ী করে যাচ্ছেন। কেন হঠাৎ করে নারীর পোশাকই ধর্ম রক্ষার একমাত্র বাহন হয়ে উঠলো? দেশে ঘুষ, দুর্নীতি, হারাম আয়, সহিংসতা, নারী নির্যাতন, দুর্ঘটনা— সব চলছে ধুন্ধুমার গতিতে। কিন্তু এই গোষ্ঠীর একমাত্র আলোচ্য বিষয় নারীর পোশাক ও চলাফেরা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নারীকে দমণ করতে পারলেই যেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

আসলে কি নারীকে দমিয়ে রাখতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যায়? তাহলে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর এবং নারীর সব অধিকার কেড়ে নেওয়ার পরে তো উন্নয়নের জোয়ারে ভাসার কথা ছিল। খোমেনীর সময়ে এইসব নেতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে পুরুষদের দিক থেকে তেমন কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি। 'এখন অনেক পুরুষকে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে, যাতে বোঝা যাচ্ছে যে প্রগতিশীল দাবির প্রতি সমাজে পরিবর্তন এসেছে', বলছিলেন সুইডেনভিত্তিক ইরানি সমাজবিজ্ঞানী মেহরদাদ দারভিশপোর।

এই দাবির প্রতি পুরুষ যে কোনো কারণ ছাড়াই সমর্থন জানিয়েছে, তা নয়। ইসলামি বিপ্লব নারীকে কোনঠাসা করা ছাড়া কোনো ভালো ফল বয়ে আনতে পারেনি। ইরানের সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন রিসার্চ ইন্সটিটিউটের মতে, দেশটির অন্তত আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে এবং ক্রমশ এই সংখ্যা বাড়ছে। ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। বিবিসি লিখেছে, দেশটির এলিট রাজনীতিকদের দুর্নীতি, ৫০ শতাংশের বেশি মুদ্রাস্ফীতির কারণে বেড়েছে দারিদ্র।

আবার ফিরে আসি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। এখানেও কোনো না কোনোভাবে নারীর বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনা চলছেই। বাংলাদেশের একজন সংসদ সসদস্য বললেন, 'অবশ্যই ধর্ষণের সঙ্গে টি-শার্ট পরে রাস্তায় বের হওয়ার সম্পর্ক আছে। দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে এবং এর জন্যে দায়ী নারীবাদীরা।' তিনি মাওলানা শফীর 'তেঁতুল তত্ত্ব'র বাস্তবায়নও চেয়েছেন।

একজন সংসদ সদস্য যখন এত নারীবিদ্বেষী, নারীর প্রতি অবমাননাকর ও অর্থহীন কথা বলতে পারেন, সেখানে দেশের সাধারণ মানুষ নারীর বিরুদ্ধে কত অসম্মানজনক কথা বলতে পারেন ও আচরণ করতে পারেন, তা সহজেই অনুমেয়।

এই সংসদ সদস্যের মতো একইধরণের মন্তব্য করেছিলেন হাইকোর্ট। পোশাকের জন্য নরসিংদী রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্থার অভিযোগে করা মামলায় আসামির জামিন আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখেছেন, সভ্য দেশে এমন পোশাক পরে রেলস্টেশনে যাওয়া যায় কি না। আদালত বলেছেন, 'গুলশান-বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এ ধরনের পোশাক পরে রাস্তায় বের হয় না।' উচ্চ আদালত যে মন্তব্য করেছেন, তা অনেককেই দুঃখিত ও বিস্মিত করেছে।

হাইকোর্ট অবশ্য যেকোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে পারেন, তবে সেটা রায়ে উল্লেখ্য না থাকলে কার্যকরী হবে না বা আদেশ বলে গণ্য হবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে হাইকোর্টের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময়ে, যেকোনো নারী, যেকারো হাতে হেনস্তার শিকার হতে পারেন। কিছু মানুষ মনে করতে পারে, আদালতের এই মন্তব্যকে ব্যবহার করে নারীকে নিপীড়ণ করা আইনসঙ্গত হবে। এসব কারণেই আদালতের এই মন্তব্য, সংসদ সদস্যের নারী বিদ্বেষী বক্তব্য আলোচনার দাবি রাখে। মহিলা পরিষদ বলেছে, নারীর পোশাক নিয়ে উচ্চ আদালতের একজন বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণ জনপরিসরে নারীর স্বাধীন চলাচল ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে।

আমাদের দেশের সেইসব ঘুনে ধরা মানসিকতার মানুষের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, নারীর পোশাকই যদি ধর্ষণের কারণ হয়ে থাকে, তাহলে পুরুষ বলাৎকারের শিকার হচ্ছেন কেন? কেন ছেলেশিশুদের একটা অংশ যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে তার পরিবারে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে?

দেশে এক শ্রেণীর পুরুষের যৌন হয়রানি করার জন্য ছোট পোশাক পরা নারী না হলেও চলে। তারা এতটাই বিকৃত মানসিকতার যে ২ মাসের শিশু থেকে প্রবীণ নারী, সালোয়ার কামিজ, শাড়ি বা হিজাব-বোরকা পরা নারী— কাউকেই ছাড় দেয় না। এমনকি নিয়মিত যৌনকর্মীর কাছে গিয়েও আশ মেটে না, সুযোগ পেলে তাদেরকেও ধর্ষণ করে।

যেহেতু আমাদের সমাজের শিক্ষিত ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ মনে করে, হিজাব বা বোরকা ছাড়া চলাফেরা করে যারা, তারা ভালো মেয়ে নয়; নারীর এই 'মন্দ মেয়ে'র মতো আচরণ সমাজে অনাকাঙ্খিত, কারণ সেটা অন্য ছেলে-মেয়েদের নষ্ট করে ফেলবে; তাই 'মন্দ মেয়ে'র মতো আচরণ যারা করে, তাদের সেটা থেকে বিরত রাখার জন্য সেইসব মেয়েদের হেয় করা, মারধর করা, মন্দ বলা ও তাদের প্রতি অপমানজনক আচরণ করা সমাজের জন্য উপকারী। এইসব ভ্রান্তধারণা থেকেই অসংখ্য নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।

বিস্ময়ের সঙ্গে দেখছি, সমাজে নারীর প্রতি ঘৃণা বাড়ছে, বাড়ছে মোরাল পুলিশিং। ভাবটা এমন, যেকোনো ইস্যুতে সবচেয়ে নিন্দনীয় নারীই হওয়া উচিৎ। সমাজে সবচেয়ে বেশি নিন্দার শিকার হচ্ছে মেয়েরা, সমালোচিত হচ্ছে মেয়েরা। মোরাল পুলিশদের ধারণা, নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্যই সমাজকে নষ্ট করে দিচ্ছে এবং সর্বোপরি মেয়েদেরই উচিৎ তাদের ইজ্জতকে আগলে রাখা। ফেসবুকে চালু হয়েছে অত্যন্ত অশ্লীল ও নারীকে নির্যাতন করার ভিডিও গেম। এটা খেলা নয়, আদতে মোরাল পুলিশিং। মানুষের মনোজগতকে নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক করে তোলার জন্যই এগুলো তৈরি করা হচ্ছে।

ইরানের মোরাল পুলিশদের একজন বলেছেন, 'তারা (নেতৃবৃন্দ) আমাদের বলে যে নারীদের রক্ষা করার লক্ষ্যে পুলিশের এই নৈতিকতা রক্ষা বাহিনী। কারণ নারীরা যদি ঠিকমত পোশাক-আশাক না পরে, তাহলে পুরুষ উত্তেজিত হবে এবং নারীর ক্ষতি করবে।'

ঠিক এরকমই একটা মতাদর্শ নিয়ে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে গোষ্ঠীগত মোরাল পুলিশিং। এদের অপতৎপরতা দেখলে মনে হতে পারে যে তারাও 'বেআব্রু নারী শিকারের সন্ধানে' যাচ্ছে। শুধুমাত্র পোশাকের ভিত্তিতে নারীকে 'ভালো মেয়ে' বা 'মন্দ মেয়ে'র তকমা এঁটে দেওয়ার এই সংস্কৃতি থেকে কি মুক্ত হতে পারবে আমাদের বাংলাদেশ? নাকি 'নারীর পোশাক' ইস্যুতেই হেদিয়ে মরবে?

শাহানা হুদা রঞ্জনা, সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments