একাত্তরে ৭ মার্চের ভাষণ ও উত্তাল সেই দিনগুলো

১৯৭১ সালের মার্চের সেসব উত্তাল দিনের অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্য জাতি গঠনের ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যেমন: আত্মত্যাগ, সংকল্পবদ্ধতা, আত্মবিশ্বাস ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন।
ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের মার্চের দিনগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর অন্যতম। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য (৭ মার্চের ভাষণ) ও মর্মান্তিক (গণহত্যার সূচনা) ঘটনাগুলো ঘটেছিল এই মাসে। এর শুরু হয় ঢাকা স্টেডিয়ামে এক স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের মাধ্যমে। খেলা দেখার সময় দর্শকরা খবর পান, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় অ্যাসেম্বলির অধিবেশন স্থগিত করেছেন। দর্শকরা তাৎক্ষণিক ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং পরবর্তীতে ঢাকা ও অন্যান্য জায়গায় হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়, পরিশেষে ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার সূচনা হয়, স্বাধীনতার ঘোষণা আসে, পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

আমাদের যাদের সেইসব অগ্নিঝরা দিন প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছিল, তারা জানি যে, সেসময় প্রতিটি দিন ছিল স্বপ্নের, আত্মউপলব্ধির, দৃঢ়সংকল্পের এবং দেশ, সংস্কৃতি ও মাতৃভাষার জন্য গভীর ভালোবাসা প্রকাশের। আমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম, সেসময় প্রতিটি দিনই আমাদের জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতো। প্রতিটি দিনই ছিল সংকল্পের পুনর্জন্ম, সংকল্পকে আরও দৃঢ় করার ও আমাদের বাড়তে থাকা আত্মবিশ্বাসের প্রতীক এবং এসব কিছুর সঙ্গে মিশে ছিল এমন এক অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।

৭ মার্চ ছিল সেই দিন, যেদিন বঙ্গবন্ধু সমগ্র জাতিকে তার ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে এক কাতারে নিয়ে এসেছিলেন এবং সবাই উচ্চস্বরে 'জয় বাংলা' রব তুলেছিলাম। এটা ছিল সেই অনন্য মুহূর্ত, যখন আমাদের স্বপ্নগুলো সবচেয়ে দৃঢ়, স্পষ্ট ও মন্ত্রমুগ্ধকর অভিব্যক্তি খুঁজে পেয়েছিল, যেটি আমাদের ভাবনাকেও স্পষ্ট করেছিল এবং কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস ও শক্তির এক নতুন মাত্রা দিয়েছিল। আমরা যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য লড়াই করছিলাম, এই ভাষণ আমাদের সেই লক্ষ্যের আরও কাছে নিয়ে যায়। হঠাৎ করেই সব ধরনের বিভ্রান্তি ও দ্বিধা দূর হয়ে যায়। আমরা স্বাধীনতার স্বপক্ষে বলিষ্ঠ শক্তি হিসেবে এক হই। এই ভাষণই আমাদের জন্য ছিল স্বাধীনতার স্পষ্ট ঘোষণা। তবে পাকিস্তানিরা এই ভাষণকে বিচ্ছিন্নতা বা রাষ্ট্রদ্রোহের ডাক হিসেবে চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক গণহত্যা শুরু করতে না পারলেও ২৫ মার্চ রাত থেকে তারা গণহত্যা শুরু করে।

যতবার আমি এই ভাষণ শুনি, ততবারই এর অনুপ্রেরণামূলক বার্তা, ঐতিহাসিক ভিত্তি, চিত্তাকর্ষক রাজনৈতিক বার্তা, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠের উদাত্ততা, শব্দ চয়ন ও বক্তব্যের প্রবাহ-ছন্দ আমাকে মুগ্ধ করে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের অন্তর্নিহিত সাহস, প্রতিবাদ ও নিখুঁতভাবে একটি জাতির স্বাধীনতার দাবিকে ফুটিয়ে তোলার সাফল্য একে দিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও ইউনেসকোর স্বীকৃতি। ভাষণে যে বিষয়গুলোতে তিনি জোর দিয়েছেন, যেভাবে কিছু শব্দকে অন্য শব্দের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সর্বোপরি, যেভাবে কাব্যের মতো করে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, এসব কারণে ৫৩ বছর পরেও এই ভাষণ আমাদের কাছে অনুপ্রেরণার, এর প্রভাব এখনো দৃশ্যমান এবং এখনো আমাদের হৃদয়ে অনুরণন সৃষ্টি করে।

১৯৭১ সালের মার্চে আরও একটি ইতিহাস-সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের আহ্বানের জেরে পালিত অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন। সমগ্র জাতি এই আহ্বানে একযোগে সাড়া দিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পুরোপুরি পাকিস্তানি 'রাষ্ট্র' বর্জন করেছিল। যার ফলে যাদেরকে শাসন করার কথা, তাদের থেকে পাকিস্তানিরা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এটা ছিল এক অনন্য পরিস্থিতি, যেখানে একজন ব্যক্তির নির্দেশনা মেনে পুরো জাতি সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতিটি অংশকে অস্বীকার করে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধীর বিক্ষোভের ডাকের চেয়েও এটি ছিল বেশি কার্যকর। সেসব দিনের কথা স্মরণ করে আশ্চর্য হই, বিশেষত, যেভাবে জনমানুষ তাদের নেতার প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাই ছিল আইন, যা বাস্তবায়নে একজন পুলিশেরও প্রয়োজন পড়েনি। এর ফলে পাকিস্তানের হিংস্র শাসকগোষ্ঠীও অসহায় হয়ে পড়ে এবং পূর্ব বাংলার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ও নির্ভীকভাবে অক্ষরে অক্ষরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে চলে।

ইতিহাসের পাতায় এ ধরনের ঘটনার তেমন নজির নেই, যেখানে জনগণের শক্তি নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রকে এতটা নাটকীয়, স্বাধীন ও দ্ব্যর্থহীনভাবে অবজ্ঞা করতে সক্ষম হয়েছে। হঠাৎ করেই পাকিস্তানের পরিস্থিতি হয় তাসের ঘরের মতো। পাকিস্তান রাষ্ট্র একটি প্রহসনে পরিণত হয়, যার চোখের সামনে দিয়ে মানুষ নিজের হাতে ক্ষমতা নিয়ে নিলেও তার কিছুই করার উপায় ছিল না। চৌকস আমলাতন্ত্র, হিংস্র পুলিশ বাহিনী, সূক্ষ্ম গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও যেকোনো ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির জন্য প্রস্তুত রাখা বিপুল পরিমাণ অর্থের বিপরীতে ছিল একজন মানুষের পর্বতসম ব্যক্তিত্ব ও তার মুখের অল্প কয়েকটি কথা। এসবের মধ্যে সবচেয়ে অভূতপূর্ব বিষয় ছিল জনসাধারণের শৃঙ্খলা। লুটপাট, আইন-শৃঙ্খলাভঙ্গ অথবা ব্যক্তিস্বার্থকে জনস্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বললেই চলে। পুরুষের মতো অসংখ্য নারীও প্রতিদিনের বিক্ষোভে যোগ দেয় এবং সে সময় একটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি। এটা ছিল দেশের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে সেরা ও গৌরবোজ্জ্বল মুহূর্ত, বিশেষত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য—যার নেতৃত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে, সেই দিনগুলোতে শহরজুড়ে বিক্ষোভ, সড়কের মোড়ে মোড়ে অগণিত সমাবেশ ও মহাসমাবেশের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর বার্তাগুলোকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা মনে পড়ে। সেসময় সবার কাছ থেকে যে পরিমাণ ভালোবাসা ও হৃদ্যতা পেয়েছি—এসব মনে পড়ে। প্রতিটি সড়কের মোড় ছিল একে অপরকে অভিবাদন ও স্বাগত জানানোর জায়গা। এসব মোড়ে সবাই এসে মিলিত হতো, মিছিল সহযোগে হাজারো মানুষ আসত। মনে পড়ে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার কথা। দোকানদার, রাস্তার হকার ও পথচারীরাও আমাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্লোগান দিত। তাদের অনেকেই আমাদের চেয়েও জোরাল কণ্ঠে 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর' স্লোগান দিতেন। সেই সময় জনসমুদ্রের মাঝে থাকার এক প্রবল অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হতাম। এ যেন প্রকৃতি নয়, বরং আমাদের প্রত্যেকের চেতনায় লুকিয়ে থাকা অপ্রতিরোধ্য শক্তিমত্তায় সৃষ্ট এক সুনামি। সে সময় যারা সড়কে নেমে এসেছিলেন, সেই লাখো মানুষের মুখচ্ছবিতে ভেসে উঠেছিল পাকিস্তান পতনের ছাপ।

যখন আমরা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংঘবদ্ধ হচ্ছিলাম, তখন এক নারকীয় আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমাদের শত্রুপক্ষ। আলোচনার ছলে জেনারেল ইয়াহিয়া ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতার নাটকের মঞ্চায়ন করেছিলেন। এরকম ঘটনার নজির খুব বেশি নেই, যখন একটি দেশের নিজেদের সেনাবাহিনী—যে বাহিনীর অস্তিত্ব সে দেশের মানুষের করের টাকার ওপর নির্ভরশীল—সেই বাহিনী নিরস্ত্র ও অসহায় সাধারণ জনগণের দিকে বন্দুক তাক করে। ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু হয়। যাকে জাতিগত নিধনের প্রাচীনতম উদাহরণের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা যায়। সেই রাতে আমি এক বন্ধুর বাসায় লুকিয়ে ছিলাম। সে বাসার ছাদ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর নেমে আসা নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের খণ্ডচিত্র দেখতে পাই। ২৭ মার্চ সকালে প্রথমবারের মতো কারফিউ প্রত্যাহারের পর আমি সতীর্থ অধিকারকর্মী শিক্ষার্থীদের খোঁজে শহীদ মিনারে যাই। সেখানে জগন্নাথ হল ও কাছাকাছি অবস্থিত রেললাইনের দুই পাশে অবস্থিত বস্তির কাছে ফেলে রাখা মরদেহ দেখতে পাই। বর্তমানে জায়গাটিতে রেললাইনের পরিবর্তে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যে গণহত্যা শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই বর্বরতার প্রকৃত মাত্রাকে প্রকাশ্যে আনতে এ বিষয়ে আরও অনেক লেখালেখি প্রয়োজন। আমাদেরকে পুরো ঘটনা উন্মোচন করতে আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে এবং তারপর তা সমগ্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিন ছিল ২ মার্চ, যেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আমাদের জাতীয় পতাকা (পরবর্তীতে এর নকশা পরিবর্তন হয়) উত্তোলন করা হয়েছিল। আমার মনে আছে, আমি সেই সমাবেশে যোগ দিয়ে মানুষের হাতে হাতে হলুদ রঙে আকা দেশের মানচিত্র সম্বলিত লাল-সবুজ পতাকা উড়তে দেখেছিলাম। আমার পরিষ্কার মনে আছে, কলা ভবনের গাড়ি বারান্দায় ছাদের এক কোণে সাহস ও গর্বের প্রতীক হিসেবে ডাকসুর ভিপি আ স ম আব্দুর রব দাঁড়িয়ে ছিলেন। এই দৃশ্য আমাদের সবাইকে দেশের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে এক মন্ত্রমুগ্ধকর অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করেছিল। পতাকা উত্তোলন ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক মুহূর্ত, যা পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রতীকী প্রকাশ। নিজের দেশের পতাকার প্রতি আনুগত্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমাদের মননের গভীরে এ বিষয়টি প্রোথিত। যখন এই আনুগত্য ভিন্ন একটি পতাকার দিকে চলে যায়, সে মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় নতুন এক বাস্তবতা। হঠাৎ করেই আমরা নিজেদের একটি চিহ্ন, একটি প্রতীক পেয়ে গেলাম, যেটি আমাদের আত্মপরিচয় ও জাতিসত্তার স্বীকৃতি পাওয়ার গভীর আকাঙ্ক্ষাকে প্রকাশ করল। এই ছোট এক টুকরো কাপড় উত্তোলন আমাদের সংগ্রামের গল্পটিকে সবার কাছে পৌঁছে দেয় এবং একইসঙ্গে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের দাবি জানায়।

আমাদের দেশের জন্য ১৯৭১ সালের মার্চ বেশ কয়েকটি উদযাপনের মুহূর্ত এনে দিয়েছে এবং একইসঙ্গে আমাদেরকে অনেক ধরনের শিক্ষাও দিয়েছে। আমরা যারা সেসব ঘটনাবহুল দিনগুলোর অংশ ছিলাম, মনে হচ্ছিল যেন আমাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন চলে এসেছে এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ ও এই লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। সেই দিনগুলো একইসঙ্গে ছিল বেদনা ও অন্তহীন দুঃখের। কিন্তু ১৯৭১ সালের মার্চের সেসব উত্তাল দিনের অভিজ্ঞতা থেকে পরবর্তী প্রজন্মগুলোর জন্য জাতি গঠনের ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যেমন: আত্মত্যাগ, সংকল্পবদ্ধতা, আত্মবিশ্বাস ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের ভবিষ্যতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন।

মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার

ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments