পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচন

‘দিদি’ না ‘মোদি’

পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৪২টি লোকসভা আসন। উত্তর প্রদেশের ৮০টি ও মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম সংসদীয় আসনের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ফটো

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়ে যাবে আগামী ১৯ এপ্রিল। ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থায় সেখানে রাজ্যস্তরে বিধানসভা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজ্যসরকার তৈরি হয়। আর লোকসভা বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তৈরি হয় কেন্দ্রীয় সরকার।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক বা জাতীয় দলের সরকার থাকলেও কেন্দ্রে আছে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হিন্দুত্ববাদী সরকার। যার নেতৃত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

৫৪৩ আসনের লোকসভা নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য দরকার হয় ২৭২টি আসন। সাত ধাপে ৪৪ দিন ধরে চলবে এই নির্বাচন। ১৯ এপ্রিল ভোট শুরু হয়ে শেষ হবে ১ জুন। ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা হবে ৪ জুন।

প্রথম ধাপে ১৯ এপ্রিল ভোট হবে ১০২ আসনে, দ্বিতীয় ধাপে ২৬ এপ্রিল ৮৯ আসনে, তৃতীয় ধাপে ৭ মে ৯৪ আসনে, চতুর্থ ধাপে ১৩ মে ৯৬ আসনে, পঞ্চম ধাপে ২০ মে ৪৯ আসনে, ষষ্ঠ ধাপে ২৫ মে ৫৭ আসনে এবং শেষ ধাপে ১ জুন ৫৬ আসনে।

১৮তম লোকসভা নির্বাচনে ভারতের কেন্দ্র সরকার গঠনের জন্য ভোট দেবেন প্রায় ৯৭ কোটি ভারতীয়। সেই অর্থে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম জাতীয় নির্বাচন।

লোকসভা নির্বাচনে আজকের আলোচ্য বিষয় পশ্চিমবঙ্গ। বাংলা ভাষাভাষী জনসংখ্যার পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৪২টি লোকসভা আসন। উত্তর প্রদেশের ৮০টি ও মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম সংসদীয় আসনের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ।

এই রাজ্যের বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২০১৩ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতিতে উল্কাসম, আন্দোলনের মাঠ গরম করতে কীর্তিমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে লড়াই করছে বিজেপি। বিধানসভার ভোটে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একচ্ছত্র দাপট থাকলেও লোকসভায় গত নির্বাচনে ৪২টির মধ্যে বিজেপি ১৮টি আসন পেয়ে সবাইকে চমকে দেয়।

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ইতিহাস: ঘরকা না ঘাটকা

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পায় ৩৪টি আসন, ভোট পায় ৩৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে পরের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পায় ২২টি আসন, ভোট পায় ৪৩ শতাংশ।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পায় দুটি আসন, ভোট পায় ১৭ শতাংশ। ২০১৯ সালে পরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পায় ১৮টি আসন, ভোট পায় ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪টি আসন পেলেও ২০১৯ সালে তার আসন সংখ্যা কমে হয় ২২টি। বিজেপি ১৮টি আসন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে তার জাগরণ জানান দেয়।

কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস একাধিপত্য বজায় রাখে।

বিধানসভা নির্বাচনে ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ২১১টি আসন ও ৪৪ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট এবং ২০২১ সালে ২১৩টি আসন ও ৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পায়।

বিধানসভা নির্বাচনে ২০১৬ সালে বিজেপি তিনটি আসন ও ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ ভোট এবং ২০২১ সালে ৭৭টি আসন ও ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পায়।

ভোটের এই হিসাবে দেখা যায়, বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট ও আসন সংখ্যা বাড়লেও তা রাজ্যে তৃণমূলের একাধিপত্যকে খর্ব করতে পারেনি। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোট ও আসন সংখ্যা তৃণমূলকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।

অন্যদিকে বাম ও কংগ্রেস ভোটব্যাংক খুইয়ে ফেলেছে। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তারা পশ্চিমবঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছে জোরেসোরেই। তরুণদের একাংশকে তারা রাজনীতিতে উৎসাহী করে তুললেও তাদের সম্মিলিত ভোট লোকসভায় নিজেদের আসন লাভ নিশ্চিত করবে, নাকি বিজেপি কিংবা তৃণমূলকে লাভবান করবে, সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়েই রয়েছে।

'মোদি' ব্র্যান্ড বনাম 'দিদি' ব্র্যান্ড

পশ্চিমবঙ্গে এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দৃশ্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ৩৫টির বেশি আসন নেবে বলে নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করেছে। বিজেপির প্রধানতম শক্তি হচ্ছে, কেন্দ্রে তাদের সরকার রয়েছে। ফলে সরকারের সব এজেন্সিকে তারা নির্বাচনে ব্যবহার করার সুযোগ গ্রহণ করেছে।

সরকারের দুর্নীতি বিরোধী সব তদন্ত সংস্থা (ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ ইত্যাদি) পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মন্ত্রী, নেতাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতা দুর্নীতির অভিযোগে কারা অন্তরীণও রয়েছেন।

বিজেপি আর্থিকভাবেও শক্তিশালী। তারা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিপুল অর্থকে এই নির্বাচনে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বভারতীয় দল হিসেবে বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা যথেষ্ট সংহত, সেই সুযোগকে তারা পশ্চিমবঙ্গেও ব্যবহার করছে।

ভারতের অন্যত্র কংগ্রেস, বামপন্থী, তৃণমূলসহ আঞ্চলিক দলগুলোর সমবায়ে গঠিত 'ইন্ডিয়া জোট' বিজেপির মোকাবিলা করলেও পশ্চিমবঙ্গে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। এখানে সম্মিলিত বিরোধীদের 'ইন্ডিয়া জোট' ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে লড়তে ব্যর্থ হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য করতে রাজি হননি। এখানে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট যৌথভাবে নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে।

বিজেপি দলীয় কর্মসূচিতে ধর্মকে ব্যবহার করছে। তারা রামরাজ্যের রাজনৈতিক তরজাকে কাজে লাগিয়ে নরেন্দ্র মোদিকেই নির্বাচনের মুখ করেছে। 'প্রার্থী নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই ভোট দিন'—এটাই বিজেপির মুখ্য প্রচারণা। মোদিই স্থিতিশীল হিন্দু ভারতের প্রতীক—সেটাই বিজেপি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।

এর বিপরীতে তৃণমূল কংগ্রেসও বাংলার মেয়ে, মা-মাটির প্রতীক, লড়াকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নির্বাচনে মুখ্য ফোকাস হিসেবে নিয়ে প্রচারণায় নেমেছে। বহিরাগতদের ঠেকাতে স্থানীয় দিদি মমতাই পশ্চিমবঙ্গের ভরসা, একমাত্র মমতাই পারে বিজেপিকে ঠেকাতে—এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের মূল আপিল ভোটারদের কাছে। ফলে 'ব্র্যান্ড মোদি'র বিপরীতে 'ব্র্যান্ড দিদি'ই লড়ছে।

ধর্ম না কর্ম: যা ঘটতে পারে

১. তৃণমূলের প্রধান হাতিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। এসব জনকল্যাণমূলক প্রকল্প ১০ বছর ধরে চলছে। নির্বাচনে তাদের প্রচারণা হচ্ছে, রাজনীতি হবে কর্মের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের বাইরে তৃণমূলের বড় টার্গেট সংখ্যালঘু মুসলমান ভোটব্যাংক।

২. বিজেপি কাজে লাগাতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ, বিশেষত গ্রামের মানুষের। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ১৩ বছরের ক্ষমতাসীন বিরোধিতার হাওয়া কাজ করছে। বিজেপি মানুষের ক্ষোভকে পুঁজি করেছে।

৩. তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্যা মাঠপর্যায়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। তাদের দ্বিতীয় সমস্যা দুর্নীতি। তবে সেটা যতটা শহরাঞ্চলে, ততটা গ্রামে নয়। কারণ, গ্রামের মানুষের বড় অংশই মনে করেন, তৃণমূল দুর্নীতি করলেও প্রকল্পের টাকা মানুষের হাতে পৌঁছায়।

৪. অন্যবারের মতো এবারও সব হিন্দুভোট নিজেদের দিকে টানতে বিজেপি ভরসা রাখছে ধর্মের ওপরে। গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর দেশজুড়ে একটা সার্বিক ধর্মীয় আবহাওয়া তৈরি করতে সচেষ্ট হয়েছে বিজেপি। লাখো মানুষকে অযোধ্যায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে, তা দেখাতে। যাতে তারা ফিরে সমাজকে জানাতে পারেন অযোধ্যায় দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলায়ও এই পরিবর্তন আনতে হবে। এই সাম্প্রদায়িক হাওয়াকে নির্বাচনের আগে বহু গুণে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হয়েছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)।

৫. পাড়া, গ্রাম, পঞ্চায়েত বা ব্লক পর্যায়ের স্থানীয় স্তরে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভসহ নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৃণমূলের জন্য যেমন সংকট তৈরি করতে পারে, আবার বুথ পর্যায়ে তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতাও জনরায়কে গুছিয়ে এনে নিজেদের ভোটবাক্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে, রাষ্ট্র ও রাজ্য পর্যায়ে বিজেপির হৈ চৈ সবল থাকলেও নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে বুথ পর্যায়ে যোগ্য কর্মী সংগ্রহ করে জনরায় নিজেদের পক্ষে আনার সাংগঠনিক ক্ষমতা কতটা দেখাতে পারবে, সেটাও বিবেচ্য।

৬. বরাবরই লোকসভায় কেন্দ্রীয় দলের কিছু বিশেষ সুবিধা থাকে। বিজেপি ২০১৪ সালের পরে এ সুবিধা পাচ্ছে। এ কারণে লোকসভায় বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের ভোটের ফারাক কমছে। বিজেপির লোকসভা নির্বাচনে ভোট বৃদ্ধির স্বাভাবিক কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্যই ভোট বাড়ছে লোকসভায়। একে অভিহিত করা হচ্ছে 'নরেন্দ্র মোদি ফ্যাক্টর' নামে।

৭. কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট একত্রে লড়ছে পশ্চিমবঙ্গে। ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেস এখানে কতটা শক্তভাবে দাঁড়াতে পারবে, সেটা দেখার বিষয়। তবে বামফ্রন্ট তরুণদের সংগঠিত করে একঝাঁক লড়াকু তরুণকে প্রার্থী করেছে। নানা উপনির্বাচনের ফল ও স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল বলে, বামপন্থীরা ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছে মরিয়া হয়েই।

সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের ভোটপ্রত্যাশী বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। এই ভোট ভাগাভাগি কোন আসনে কাকে লাভবান করবে, সেটা একটা জটিল হিসাব। তবে, মুসলমান ভোট কাটাকাটির সম্ভাবনা সবসময় বিজেপিকেই লাভবান করতে পারে।

ফলাফল: কী হবে…

যেকোনো নির্বাচনের আগে এটাই বড় প্রশ্ন। ফলাফল কী হবে? পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচনে কে জিতবে? দিদির তৃণমূল না মোদির বিজেপি?

যদিও পুরো ভারতবর্ষের নির্বাচনের নিরিখেই কেন্দ্রে গঠিত হবে সরকার, তবে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের লোকসভা নির্বাচনের গুরুত্বও অসীম। কেননা ৬০ বছরের কংগ্রেস শাসনের তথাকথিত প্রগতিশীল ভারতের রাজনীতি এখন হিন্দুত্ববাদের নতুন ন্যারেটিভের কাছে পরাভূত। হিন্দুরাষ্ট্র না উদার ভারত—সেটাই এই নির্বাচনের বড় এজেন্ডা।

বলা যায়, ভারতে বিজেপি এখন পিকফর্মে রয়েছে। অর্থ-সংগঠন-নেতৃত্ব-রাজনীতি সবক্ষেত্রেই গোটা ভারতে বিজেপিকে রুখবার ক্ষমতা এককভাবে অন্যকোনো রাজনৈতিক দলের নেই। বিজেপিবিরোধী জোটবদ্ধতার আক্রমণকেও বিজেপি নানাভাবে দুর্বল করে দিয়েছে।

আঞ্চলিক স্বার্থ, অর্থ, পদলাভ ইত্যাদি বিবেচনায় এবারের নির্বাচনে ভারতব্যাপী বিজেপির জয়লাভ ঠেকানো সহজ নয়। তবুও, বিজেপিবিরোধী লড়াইয়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি একক ভূমিকা নিয়েছেন।

কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন আর লোকসভা নির্বাচনে ভোটের মনস্তত্ব এক নয়। কেন্দ্রে স্থিতিশীল সরকার দেখতে চাইলে বিজেপির বিকল্প মুখ কার্যত অনুপস্থিত। উন্নয়ন-ধর্ম-ভারতইমেজ বিবেচনায় ভোটারদের কাছে আপাতত বিজেপির বিকল্প পাওয়া বেশ কঠিন হলেও পশ্চিমবঙ্গে মমতা শক্তিমান ভরসার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন।

তবে—

১. পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য প্রশাসনকে যদি বিজেপি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিংবা নিরপেক্ষ রাখতে পারে, বুথে যদি তাদের কর্মীরা শক্তভাবে টিকতে পারে, তাহলে এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ভিন্নরকম হতে পারে।

২. ১০টির বেশি আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সেখানে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের জোট কতটা ভোট কাটতে পারবে সেটাই ভোটের ফলাফলে ভূমিকা রাখবে। এর লাভ যেতে পারে বিজেপির কাছে।

৩. পশ্চিমবঙ্গে পুরো সাত ধাপেই ভোট হবে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও রাজ্যপ্রশাসন শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। যদি তৃণমূলের মাঠপর্যায়ের বিস্তৃত শক্তিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে বিজেপি, সেটা তাদের পক্ষে যাবে।

৪. 'জিতে যাচ্ছে' এই হাইপ তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি—নানারকম এক্সিট পোলের ফল ও নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া দিয়ে। সেই হাইপ ঠিকমতো প্রভাব ফেললে, সংখ্যালঘু মুসলমান ভোট একাট্টা হতে পারে। এই 'বিজেপিফোবিয়া' কাজ করলে মুসলমান ভোটের এই মনোভাব তৃণমূলের দিকেও যেতে পারে।

এসব নানাবিধ 'যদি', 'কিন্তু' বিবেচনায় বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গের এবারের লোকসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনের অর্ধেক ২০-২১টি বিজেপির ভাগ্যে জুটতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস আগের বারের ২২টি আসন থেকে দু-একটি হারিয়ে ২০-২১টি আসন পেতে পারে। কংগ্রেস-বামফ্রন্ট দু-একটি আসন পেতে পারে।

এ বিবেচনায় বলা যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে 'দিদি' পুরো পর্যুদস্ত না হলেও ভারতবর্ষে 'মোদি' আবার নতুন শক্তিরূপে আবির্ভূত হতে পারেন।

শুভ কিবরিয়া: সিনিয়র সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক

Comments