নিজের স্বার্থের চেয়ে দলের স্বার্থ সবার আগে: রাজা
এক কথায় বললে বাংলাদেশের এবারের জিম্বাবুয়ে সফরের তফাৎ একাই করে দিয়েছেন সিকান্দার রাজা। টি-টোয়েন্টিতে হয়েছেন সিরিজ সেরা, ওয়ানডে সিরিজেও সে পথে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক রাজার। চেনা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ৩৬ পেরিয়ে দেখালেন সেরা পারফরম্যান্স। জেতালেন দুটি সিরিজ। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত আলাপে জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার কথা বলেছেন তাদের সাফল্যের নানান প্রসঙ্গে।
এরকম পারফরম্যান্সের পর আপনার অনুভূতি কি? জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের জন্য এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সিকান্দার রাজা: অবশ্যই, অবশেষে এরকম পারফর্ম করতে পেরে দারুণ অনুভূতি হচ্ছে। বলছি আমরা সব সময়ই এই রকম ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করতাম, কিন্তু যথেষ্ট ধারাবাহিক ছিলাম না। ধারাবাহিকভাবে এবার এরকম ক্রিকেট খেলতে পারা পুরস্কৃত করেছে।
কারণ আমরা টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দুটি সিরিজই জিতেছি। এটা আমাদের দলে জয়ের সংস্কৃতি তৈরি করবে। আমাদের বিশ্বাস এনে দেবে যে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমরা নিজেদের খেলার একটা পথ বের করতে পারি এবং জেতার রাস্তা তৈরি করতে পারি।
বেশ কয়েকজন প্রথম সারির তারকাকে ছাড়া খেলতে হয়েছে জিম্বাবুয়েকে। বাংলাদেশের মতো অভিজ্ঞ দলকে হারাতে এটা কতটা সাহসের ব্যাপার ছিল
রাজা: অবশ্যই আমরা মূল খেলোয়াড়দের কয়েকজনকে পাইনি। (শন) উইলিয়ামস, (ক্রেইগ) আরভিন, (ব্লেসিং) মুজারাবানি, (টেন্ডাই) চাতারা ছিল না। (রায়ান) বার্ল চোটে পড়ল, মিল্টনকেও (শুম্বা) হারালাম। আমার জন্য এটা ছিল শতভাগ দিয়ে দলকে চাঙ্গা করার কাজ, দলকে অনুপ্রাণিত করা এবং দলকে গাইড করে নিয়ে যাওয়া।
ওয়ানডেতে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলা বাংলাদেশকে এভাবে হারিয়ে দিলেন, তাদের কোন ঘাটতির জায়গা ধরে এগিয়ে গেলেন
রাজা: আপনারা বলছেন বাংলাদেশ ওয়ানডেতে ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করছিল। আমি মনে করি তারা এখনো ধারাবাহিকভাবেই পারফরম্যান্স করছে। তারা ৩০৩ ও ২৯১ রানের মতো ভাল স্কোর করেছে। আমার মনে হয় আপনারা বাংলাদেশের খারাপ খেলার ব্যাপারটা বেশি সামনে আনছেন, আমার মনে হয় এটা না। কৃতিত্বটা অবশ্যই জিম্বাবুয়েকে দিতে হবে। জিম্বাবুয়ে আসলে বংলাদেশের চেয়েও ভালো খেলে তাদেরকে হারিয়েছে। এই জায়গাটা ফোকাসে আসা উচিত। বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের একটা পাওয়ারহাউস হিসেবেই থাকবে।
ডেভ হটন কোচ হওয়ার পর জিম্বাবুয়ে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছে, কোচের ভূমিকা কতটা এক্ষেত্রে?
রাজা: আমি মনে করি জিম্বাবুয়ে ভয়ডরহীন ক্রিকেট আগেও খেলত কিন্তু মাঝে মাঝে স্মার্টনেসের ঘাটতি থেকে যেত। এখন আমরা ভয়ডরহীন ক্রিকেটের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার একটা মিশেল আনছি। এবং কোন সময় কি করা দরকার সেটা চিহ্নিত করছি। কার কি সামর্থ্য সেটা বোঝার চেষ্টা করছি এবং সব সময় নিজের প্রয়োজনের আগে দলের প্রয়োজন রাখছি।
বাছাইপর্বে যেতার পর বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়। এরপর আমরা ভারতের বিপক্ষে খেলব, অস্ট্রেলিয়ায় যাব। ইতিবাচক কিছু আছে সামনে। আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি, আরও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খেলারও চেষ্টা করছি। নতুন কোচ বিশাল ভূমিকা রাখছেন। জুলুও (ব্যাটিং কোচ ল্যান্স ক্লজনার) ফিরে এসে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
আপনার একটা শারীরিক অসুস্থতা ছিল গত বছর। সব কিছুতেই কি মনে হয় নতুন একটা জীবন পেলেন?
রাজা: ওই সময়টা ভাই খুব ভয়ের ছিল। নতুন জীবন পেয়েছি? হ্যাঁ আমি অবশ্যই তা বলব। কিন্তু ক্রিকেটে? না, আমি তা মনে করি না। ক্রিকেট থেকে জীবনে আরও অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ। আলহামদুল্লিলাহ পরিবারের কাছে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকা অনেক বড় আশীর্বাদ।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে সংকটের শেষ নেই। এতটা প্রতিবন্ধকতার মাঝে আপনারা নিজেকে অনুপ্রাণিত কীভাবে করেন?
রাজা: ভাই, প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে। দেখেন আমি এটা ইতিবাচকভাবে দেখি। প্রতিবন্ধকতাই অনুপ্রাণিত করে। এখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা। এটাই অনুপ্রাণিত করে নিজের কাছে এবং অন্যের কাছে নিজেকে প্রমাণের। আপনি যেসব প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করছেন, সেসবই আমার অনুপ্রেরণার উৎস।
Comments